ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
মঈন খান

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনরত বিরোধী দল রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, আমাদের একটি মাত্র প্রতিজ্ঞা, একটি মাত্র লক্ষ্য, আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। ইনশাল্লাহ, আমাদের গণতন্ত্রের আন্দোলন চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না আমরা বাংলাদেশের মানুষের মনের যে আকাক্সক্ষা, সেই আকাক্সক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্রের অধিকার যতক্ষণ না আমরা বাংলাদেশের মানুষকে ফিরিয়ে দিতে পারব, আমরা ততক্ষণ রাজপথ ছাড়বো না।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক ঐক্যের এই গণস্বাক্ষরতা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে জেলা-উপজেলায় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অনলাইনের মাধ্যমে প্রবাসীদের সই সংগ্রহ করা হবে বলে আয়োজনকরা জানান।

ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ব্যতিরেখে অন্য কোনো পদ্ধতি কোনোদিন চলবে না। এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে, বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতায় আছে। এটা আজকে শুধু আমরাই একথা বলছি না, সারা বিশ্বের মিডিয়া দেখুন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের যে বক্তব্য এসেছে সেগুলো দেখুন ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন সম্পর্কে প্রত্যেকে স্পষ্টভাষায় আমরা বিরোধী বিরোধী গণতান্ত্রিক দলগুলো যে কথা বলে গিয়েছি বিগত কয়েক বছর ধরে, তারা এই কথার প্রতিধবনি করেছে বিগত প্রহসনের নির্বাচনের সময়। কাজেই আজকে এটা প্রতিষ্ঠিত দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত, নাগরিক ঐক্য প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরতার কর্মসূচিতে দেশের প্রতিটি মানুষ স্বাক্ষর করে এই সরকারকে আবারো প্রত্যাখান করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মঈন খান।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ওরা (আওয়ামী লীগ) সরকারে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না, এটা ভোট হয়নি। এজন্য এই সইয়ের ব্যবস্থা আমরা করেছি। বাংলাদেশে ১০ কোটি ভোটার কেবল নয়, বাংলাদেশে ১৭ বা ১৮ কোটি জনগণের কাছে আমরা পৌঁছাবার চেষ্টা করবো আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে, অফ লাইন, অন লাইনে।

তিনি বলেন, যেরকম শাহ এএমএস কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া সাম্যের সপক্ষে নীলিমা করেছিলেন, আমরাও বলেছি, গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর। আমি এটাও আমরা ঘোষণা করছি, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে গণসঙ্গীত করব, গণতন্ত্রের পক্ষে গণনাটক করব, সর্বত্র, সমস্ত জায়গায় এই সরকারকে ধিক্কার জানাতে চাই আমরা। এতো বড় ফোরটোয়েন্টি টাইপের গর্ভমেন্ট দুনিয়ার কোথাও হয়েছে কিনা সন্দেহ।
মান্না বলেন, তথাকথিত ভোট ভোট খেলা, এটা এতোই ন্যাক্কার জনক বিষয় যে বাংলাদেশের শিশুরা পর্যন্ত জানে ভোটের নামে ৭ জানুয়ারি খেলা হয়েছে। কত পারেসেন্ট ভোট পড়েছে? নির্বাচন কমিশন এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশন নিজেই কথা বলতে গিয়ে দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেছেন, বলে ফেলেছিলেন ২৮, পেছন থেকে বলে ফেলেছিলেন ৪১ বলতে হবে, উনি আবার বলেছেন ৪১, এরপরও কিছু প্রমাণ করা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিকমহল এই নির্বাচনের নামে এই খেলায় সত্যি সত্যি কত ভোট পড়েছিলো সেটা অনুসন্ধান করছে তাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে। ৭ জানুয়ারি যারা বাংলাদেশে ছিলেন তারা জানেন কত ভোট পড়েছে। যেখানে ভোটই হয়নি সেখানে পারসেন্টেইজ কি? একজন তো বলেছেন যে, বাংলাদেশে একজন মাত্র ভোটার তার হাতে তিন‘শ ভোট, এই তিন‘শটা উনি যেখানে যেখানে দেবেন তিনি তিনি নির্বাচিত হবেন, আর কেউ নেই, এই হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, আমরা সই সংগ্রহ করছি, রাজপথের লড়াই আরও মজবুত করবার জন্যে। আমরা সেইরকম লড়াই গড়ে তুলবার করবার চেষ্টা করছি যে লড়াইয়ের সামনে ক্ষমতাসীন দখলদার মাথানত করতে বাধ্য হয়।

বিদেশীদের সমর্থন নিয়ে সরকারের মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, পরিস্থিতিটা কি রকম? সরকার কতখানি নাজেহাল দেখেন, ডিপ্লোমেটরা তারা রাষ্ট্র রাষ্ট্র যে সম্পর্ক, তারা যাচ্ছেন, সৌজন্য সাক্ষাত করছেন, কথা-বার্তা বলছেন, কেউ কেউ ফুল দিচ্ছেন। সেটাকে সরকার তাদের প্রতি তাদের একটা রাজনৈতিক সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করে একটা প্রচারের ঢামাঢোল তারা তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, কূটনীতিকদের এই ফুল নিয়ে যাওয়া সৌজন্য সাক্ষাতকার, এটাকে সরকার তার অবৈধ শাসন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে কোনো সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করার কারণ নেই এবং কূটনীতিকের এই ফুলটুল নিয়ে যাওয়াকে আরও পাঁচ বছরের জন্যে এটাকে লাইসেন্স হিসেবে যদি বিবেচনা করেন বড় ধরনের ভুল করা হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, মিথ্যাচার এই সরকারের বড় আশ্রয়। টেলিভিশনসহ সমস্ত মাধ্যমে তারা দেখাবে যে, এটা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং এটাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে সারা দুনিয়া। সেদিন আমরা দেখলাম বিরোধী দলকে নিয়ে কতরকম প্রচার-প্রচারণা করে সরকারি মিডিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এই নতুন মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্র মন্ত্রী আগে যিনি তথ্য মন্ত্রণালয়কে মিথ্যা প্রচারের একটা মন্ত্রণালয়ে পরিণত করেছিলেন, সেই সাফল্যের পরে হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেন এখন থেকে উনি বিদেশীদের মিথ্যা প্রচার করতে পারেন, সেটা প্রথম নমুনা দেখলাম যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নৌকা উপহার দেয়া হয়েছে দুই রাষ্ট্রদূতকে। কিন্তু কোন কোন সংবাদমাধ্যম দেখাচ্ছে রাষ্ট্রদূতরা নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে নৌকা উপহার দিচ্ছে, এটা হচ্ছে ভেল্কিবাজী।এসব ভেল্কিবাজী প্রচার করে কোনো কাজ হবে না।

গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষের শক্তিকে, জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কোনো ফ্যাসিস্ট গণহত্যা চালিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারেনি, এদেশে একাত্তর সাল তার প্রমাণ। কাজেই আওয়ামী লীগ যত মিথ্যা, যত ভয়ের আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন না কেনো, যত দমনপীড়ন আসুক না কেনো তারা আমাদের দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সময় ঘনিয়ে আসছে। ওরা ভাবছে, পাঁচ বছর টিকে গেলাম, পাঁচ বছর টিকে গেলাম, আর বিদেশীরা আমাদের সমর্থন দিচ্ছেন, এটা বললেই বোধহয় টিকে যাবে। আমরা পরিস্কার করে বলি, আপনাদের এতো নিশ্চিন্তে ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদেরকে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেবে না এবং তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং অচিরেই রাজপথে জনতার সংগ্রাম ফুলে-ফুসে উঠবে, অভ্যুত্থানে রুপ নেবে।

নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- জাতীয় গণফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, গণঅধিকার পরিষদের নেতা বাবুল বিশ্বাস, নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি একেএম আশরাফুল হক প্রমূখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান