গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশে আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা
২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে সামরিক জান্তার সঙ্গে সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার পাশাপাশি রাখাইনের সর্বত্র এই লড়াই ছড়িয়ে পড়ছে বলে সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে গত শনিবার বিকেলে রাখাইনে দু’পক্ষের গোলাবর্ষণে ছোড়া একটি গুলি এসে পড়েছে টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্তের একটি বাড়িতে। উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, সীমান্তের ওপারে দিনব্যাপী মর্টার শেল হামলা ও গোলাগুলির একপর্যায়ে একটি গুলি বাড়ির টিনের চালে এসে পড়ে। পরে গুলিটি বিজিবির স্থানীয় ফাঁড়ির ইনচার্জকে জমা দেওয়া হয়।
জানা যায়, মিয়ানমারে সামরিক জান্তার সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এ এ) মধ্যে সংঘর্ষ, রাজ্য দখল, উদ্ধার, হতাহতের ঘটনা দীর্ঘদিনের। কিন্তু চলমান সংঘর্ষ গত কয়েক সপ্তাহে বেগ পেয়েছে বলে মনে হয়। সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেলে রাখাইনের রামরি শহরে বোমারু বিমান নিয়ে আরাকান আর্মির ওপর হামলা চালায় ‘তাতমাদো’ নামে পরিচিত মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এ ছাড়া একই দিন ভোর থেকে রাখাইনের ‘বুচিডং’ ও ‘ফুমালি’ নামক রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলমান থাকলেও, এবারের সংকট সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকের। বিশেষ করে অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকারের বিরোধিতা করা শান রাজ্যের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজোট হয়ে চালানো একের পর এক হামলা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতায় থাকা দেশটির সামরিক বাহিনী। বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ হারানো ও প্রতিবেশী দেশে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আশ্রয় নেবার খবর প্রতিদিনই উঠে আসছে গণমাধ্যমে।
এদিকে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা কক্সবাজারের টেকনাফ নাফনদী সংলগ্ন সীমান্ত এলাকাসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুংধুম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এখন দিন কাটাচ্ছে ভয়ে আর আতঙ্কে। কখন বুঝি সীমান্তের ঐ পাড়ের গোলা এসে বাংলাদেশ সীমান্তের এসে আছড়ে পড়ে বা পরস্পর বিবদমান বাহিনীর সশস্ত্র গ্রুপ বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে। কারণ ইতিমধ্যে জান্তা সরকারের প্রায় ৪শ’ সশস্ত্র সদস্য ভারত সীমান্তে প্রবেশ করেছিল। অবশ্য পরে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে গত শনিবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেকনাফ সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি এলাকায় থেমে থেমে গুলির বিকট শব্দ শুনতে পায় বলে জানান এপারের স্থানীয়রা। রাখাইন ও কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার সকালে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করে, সে জন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
সূত্রগুলো আরো জানিয়েছে, রাখাইনে চলমান বিবদমান সশস্ত্র গোষ্টীর সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক দিন ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। তবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় তারা পুনরায় তাদের আবাসস্থলে ফিরে গেছে। সীমান্ত এলাকায় খবর নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আবারো ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘুংধুম সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুংধুম ইউনিয়নের স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘প্রায় বছর দু’য়েক পূর্ব থেকে মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলমান অস্থিতিশীলতা দেখে আসছি। মাঝেমধ্যে গোলাগুলির শব্দ আমরা শুনতে পাই। গোলাগুলির শব্দে এপারের স্থানীয়রা নানাভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ গত বছর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন বিবাদে তাদের ছোড়া গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে পড়েছিল যা অবিস্ফোরতি থাকার কারণে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। টেকনাফের উপকুলীয় ইউনিয়নের সাবরাং সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যেও ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা যায়। কারণ হিসেবে গত শনিবার ভোর রাত থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত মিয়ানমার ওপারের সংঘটিত গোলাগুলির বিকট শব্দ শুনতে পায় তারা।
ব্যাপারটি নিশ্চিত করে টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমেদ আনোয়ারী জানিয়েছেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা তার এলাকার ওপারে শনিবার সকালে মর্টারশেলের মতো বিকট শব্দ শোনা গেছে। বিষয়টি সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি’। নতুন করে কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উক্ত বিষয়টি তার জানা নেই।
এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে নতুন করে ফের ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। গত ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে ওপারে যুদ্ধ চলছে। এরপর থেকে সীমান্তে নিয়মিত টহল পাটিকে আরো জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বিজিবি সৈনিকরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা