সামনে প্রধান তিন চ্যালেঞ্জ
৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে আরেকটি ‘একতরফা’ নির্বাচনের সমালোচনার বোঝা মাথায় নিয়েই আজ শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২২টি আসনে জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে জয়ী হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সরকারের ২৬টি আসনে সমঝোতা হলেও তারা মাত্র ১১টি আসনে জয়লাভ করেছে। ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ৬টি আসন ছেড়ে দিলেও তারা মাত্র ২টি আসনে জয়লাভ করেছে। কিংস পার্টি খ্যাত কল্যাণ পার্টি ১টি আসনে জয়ী হয়েছে।
এ নির্বাচনকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা এবং ‘আমি ও ডামি’র নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে। এ ছাড়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের অংশগ্রহণ ছাড়া যে নির্বাচন হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাতিসংঘ। নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই এ বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া এ নির্বাচনে বিকাল ৩টায় ব্রিফিং করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এখন পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। এরপর ১ ঘণ্টা পর নির্বাচন শেষে সাংবাদিকদের তিনি প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বললেও পাশ থেকে সচিব সেটা সংশোধন করে দেওয়ার পর তিনি ৪০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়ার কথা বলেন। ভোট পড়ার এই হার নিয়ে সেখান থেকেই বিতর্কের শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো বলছে নির্বাচনে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ ছাড়া সরকার ৪১ শতাংশ ভোট পড়ার দাবি করছে।
এ রকম একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। নতুন এই সংসদের সামনে নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৩টি বিষয়কেই প্রধানত চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন। এগুলো হচ্ছেÑ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এমনটিই মনে করছেন। তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকারের সামনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক-এই তিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই তিনটি খাতে বিশ্ব সংকটের যে বাস্তবতা তার প্রতিক্রিয়া থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা অত সহজ কাজ নয়। তবে আমাদের বিশ্বাস আছে আজকে যে সংকট তা অতিক্রম করে শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছি। এটা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক লিডারের জন্য সম্ভব হয়েছে। আগামী চ্যালেঞ্জগুলোও তার নেতৃত্বে আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষপটে অর্থনীতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করাটাও কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। কারণ প্রধান বিরোধী দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের হার কম হওয়ায় পশ্চিমা বিশ্বসহ অনেক দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকও এ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বলে উল্লেখ করেছে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচনের পর রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ইমেজ নিয়ে এ সংসদের একটা সংকট থেকে যাচ্ছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে এবার সংসদ কর্যত একদলীয় সংসদে পরিণত হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের যে ডামিরা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে এমন একটা ধারণা কেউ কেউ করছিলেন। তবে গত ২৮ জানুয়ারি ডামিদের ঢাকায় ডেকে এনে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি তাদের তার বাম হাত বলে উল্লেখ করেন। তাদের বিরোধী দল নয় বরং দলীয় পদে থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করার নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে স্পষ্টতই সংসদে এখন আওয়ামী লীগবিরোধী তেমন কেউই আর থাকছে না। তাই সরকারি নীতি বা সিদ্ধান্তের যথাযথ সমালোচনা অথবা সরকারকে চাপ সৃষ্টির মতো কোনো বিরোধিতা হবে না বলেই ধারণা করছেন অনেকে। এ অবস্থায় সংসদ কার্যকর করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। বর্তমান সংসদে নির্বাচিত এমপিদের মধ্যে শতাধিক রয়েছেন প্রথমবার নির্বাচিত। সংসদ কার্যকর করতে তাদের ভূমিকা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন থাকছে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সংসদকে বিরোধীদলবিহীন একদলীয় সংসদই বলা যায়। এখানে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। জাতীয় পার্টির যে ১১ জন সংসদ সদস্য বিরোধী দল বলে স্বীকৃতি পেয়েছেন তারাও সরকারের অনুগত। নির্বাচনের আগে তারাও বলেছেন যে শেখ হাসিনা সমর্থিত। এ ছাড়া সংসদে যারা বসবেন তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। সত্যিকারের রাজনীতিবিদের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। তাই সংসদে বিরোধী দল মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নেই। তবে রাজপথের রাজনীতি কোন দিকে যায় সেটি মোকাবিলার বিষয়ে নতুন সংসদ তথা সরকারে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জ থাকছে।
কুড়িগ্রাম-৪ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এমপি অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ দ্বাদশ সংসদের সামনে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কখনো ভয় পান না। তিনি সাহসের সাথেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবেন এটাই আমরা মনে করি। এ সংসদকে কার্যকর করা আমাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে এ সংসদকে কার্যকর এবং প্রণবন্ত করার চেষ্টা করব। এ ছাড়া এ সংসদের কাছে অনেক জনপ্রত্যাশাও রয়েছে। এর মধ্যে চলমান দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি তা নিয়ন্ত্রণ করাটাও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী ট্রাক মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত দেওয়ান জাহিদ আহমেদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান সংসদের সামনে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করি না। আমরা আওয়ামী লীগের হলেও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। তাই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ থাকছে। আমরা সেটা করব।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি নাজুক সময় পার করছে। এ অবস্থায় বিশ্লেষকেরা বলছেন নানামুখী চাপে থাকা অর্থনীতির সংকট মোকাবিলা করাই হবে এ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট ও বিনিয়োগ এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি চরম নাজুক অবস্থা। তাই এ সরকারকে এবার শুরু থেকেই দ্রব্যমূল্য কমানো, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি এবং রিজার্ভ সংকট সমাধানে তৎপর হতে হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। নতুন সরকারের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন হবে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। নির্বাচন হয়ে গেলেও দেশে রাজনীতির সংকট সমাধান হয়নি। রাজনীতির মাঠে বিরোধী দলকেও মোকাবিলা করতে হবে নতুন সরকারকে। সামনে রাজনৈতিক বিরোধীরা মাঠে কী ধরনের আন্দোলন করে এবং পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি নিয়ে কারো কারো মধ্যে দুশ্চিন্তা রয়েছে। অর্থনীতির সংকট পুঁজি করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে কি না সেটা নিয়েও দুর্ভাবনা আছে অনেকের মধ্যে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে সবার মধ্যেই একটা ঐকমত্য আছে। সকলেই মনে করেন মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণটাই হলো মূল চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে। একই সাথে ব্যক্তি খাতে যেসব বিনিয়োগ আছে, সেগুলোর জন্য অর্থায়ন করা, বৈদেশিক মুদ্রা দেয়া এগুলোতে সমস্যা হচ্ছে। এসব কিছু মিলিয়ে আমাদের যে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য সেটার ওপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। টাকার অবনমন ঘটছে। টাকার মূল্যমানকে স্থিতিশীল করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি