ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
চট্টগ্রামে গ্যাসের অভাবে ধুঁকছে সিএনজিচালিত যানবাহন আয় কমে গেছে চালক শ্রমিকদের

গণপরিবহন সঙ্কটে জনদুর্ভোগ

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

ক্রমবর্ধমান গ্যাস জ্বালানি সঙ্কটে ধুকছে গণপরিবহন খাত। পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় ঘুরছে না সিএনজিচালিত যানবাহনের চাকা। তাতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে বেড়েছে গণপরিবহন ভাড়া। গ্যাসের অভাবে অচল বসে থাকায় পরিবহন মালিক ও চালকদের আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে কঠিন দিন পার করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পৌনে এক কোটি মানুষের বসবাস। তাদের বিরাট অংশ গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড চট্টগ্রামে। সরকারি বেসরকারি মিলে তিনটি ইপিজেডে প্রায় দশ লাখ শ্রমিক কর্মরত। ইপিজেডের বাইরে পাঁচ শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা ছাড়াও কয়েক হাজার ছোটবড় কারখানায় কর্মরত আরো কয়েক লাখ শ্রমিক। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবীরাও গণপরিবহনে চলাচল করেন। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কাজে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ এই মহানগরীতে আসে। যাতায়াতে তাদেরও বাহন গণপরিবহন।

এখানকার গণপরিবহনের বিরাট অংশ সিএজিচালিত। নগরীতে বৈধ ১৩ হাজারসহ ২০ হাজারের বেশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। জেলায় এ সংখ্যা আরো বেশি। নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, টেম্পু, হিউম্যান হলারও সিএনজি চালিত। মহানগরী থেকে জেলার অর্ধশত রুটে চলাচলকারী মিনিবাসও সিএনজি চালিত। অব্যাহত গ্যাস সঙ্কটে এসব যানবাহন মহাবিপাকে পড়েছে। ডিজেল চালিত গণপরিবহনের তুলনায় সিএনজি চালিত যানবাহনে খরচ কিছুটা কম। কারণ ডিজেলের দাম বেড়ে সিএনজির প্রায় তিনগুণ হয়েছে। সিএনজিচালিত যানবাহনের ভাড়াও কিছুটা কম। তবে ক্রমবর্ধমান গ্যাস সঙ্কটের কারণে সিএনজিচালিত যানবাহনের চাকা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে গত নভেম্বর মাস থেকে চরম গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ এ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ এখন পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর। তবে ডলার সঙ্কটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহও কমে গেছে। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও গত কয়েক মাস ধরে অর্ধেকেরও কম সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে আবাসিক গ্রাহকেরাও চরম গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলা করছেন। গ্যাসের অভাবে রান্নাবান্না বিঘ্নিত হচ্ছে নিয়মিত। চট্টগ্রামে ছয় লাখ আবাসিক গ্রাহক, সাড়ে তিন হাজার বাণিজ্যিক গ্রাহক এবং ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ ২৮শ’ শিল্প গ্রাহককে গ্যাসের যোগান দেয় কেজিডিসিএল। নভেম্বর থেকে সব ধরনের গ্রাহকেরা তীব্র গ্যাস সঙ্কটের মোকাবেলা করছেন। তাতে সিএনজিচালিত গণপরিহন খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সিএনজি অটোরিকশা ও মিনিবাস চালকেরা বলছেন, গ্যাসের জন্য কয়েক ঘণ্টা ফিলিং স্টেশনের সামনে লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘ লাইন ঠেলে গ্যাস নেওয়ার সুযোগ ফেলেও মিলছে না পর্যাপ্ত গ্যাস। লাইনে চাপ কম থাকায় চাহিদার অর্ধেক গ্যাস নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। ওই গ্যাস দিয়ে কয়েক ঘণ্টা চালাতে ফের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। গ্যাসের অভাবে দিনের অর্ধেক সময়ও গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। তাতে আয়-রোজগার আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। মালিকের জমার টাকা আর গ্যাস খরচ তুলতেই গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাতে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের সাথে নগরীতে তীব্র যানজটের কারণেও আয় কমে গেছে পরিবহন চালকদের।

একদিকে আয় কমে গেছে। অন্যদিকে বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখি। ফলে সীমিত আয়ের এসব লোকজনকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে দীর্ঘদিন অটোরিকশা চালান বরিশালের মুলাদি এলাকার মোহাম্মদ মহসীন। গত কয়েক মাস ধরে তার আয় আগের অর্ধেকে নেমে এসেছে। যা আয় করেন তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের খাবার কিনতেই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। আছে ঘর ভাড়া, চিকিৎসা খরচ। অভাবে বড় ছেলের কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শহরে ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে জানান তিনি। তার মতো অন্যদের অবস্থাও শোচনীয়। পরিবহন শ্রমিকদের অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। গ্যাসের সঙ্কটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে ফিলিং স্টেশনের মালিকেরা। এখাতের শ্রমিক কর্মচারীরাও পড়েছেন সঙ্কটে।

গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামে গণপরিবহন সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। এমনিতেই নগরীর নির্ধারিত রুটে পর্যাপ্ত বাস, মিনিবাস নেই। তার উপর গ্যাসের অভাবে সিএনজিচালিত যানবাহনের বিরাট অংশ অলস থাকায় যানবাহনের জন্য হাহাকার চলছে। প্রতিদিন অফিস শুরু আর ছুটির সময় কর্মজীবী মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় মানুষের ভিড় জটলা লেগেই আছে। কোন একটি বাস, মিনিবাস আসতে তাতে উঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। এমন দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। বাসে ঠাসাঠাসি করে, দরজায় ঝুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মজীবীরা। এই সুযোগে অটোরিকশা আর রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে। স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজনের আয়ের বিরাট অংশ যাতায়াতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও নানা দুর্ভোগ আর ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। মহানগরীতে এখন নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। গণপরিবহনের নেই কোন শৃঙ্খলা। একশ্রেণির পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি যাত্রীরা। সকালে অফিস শুরু আর বিকেলে ছুটির সময় নির্ধারিত রুটে চলাচল করে না বেশিরভাগ গণপরিবহন। দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও যাত্রীদের নির্ধারিত গন্তব্যের আগে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।

নগরীতে চলাচলকারী বেশির ভাগ বাস, মিনিবাসের নেই ফিটনেস সনদ। লক্কর-ঝক্কর গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। নগরীর দুটি রুটে কাউন্টার সার্ভিস বাস চলাচল করে। মেট্রো প্রভাতি ও সোনার বাংলা নামের এই দুটি বাসে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও ওই বাস সার্ভিসে ন্যূনতম সেবা মিলছে না। ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। টিকিট কেটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও মিলছে না বাস। আবার মাঝ পথে বাস বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাতে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার

বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার

বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব

বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব

ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ

ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ

শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব

শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫