বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
বাংলা ব্যাকরণের ভাব-সম্প্রসারণ ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। ‘মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে’। এই প্রবাদগুলো যথার্থই। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) স্মরণসভায় সেটা বেশ উপলব্ধি হলো। সময় অনন্ত কিন্তু মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত জীবনে মানুষ তাঁর মহৎকর্মের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকেন। এমন একজন মানুষ হলেন মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে গতকাল এম এ মান্নান স্মরণে সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। সভায় সারাদেশ থেকে পীর-মাশায়েখ, প্রখ্যাত আলেম, মাদরাসার অধ্যক্ষ, ইসলামী স্কলারগণ এ সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় যারাই বক্তব্য দিয়েছেন তারা যে বিনম্র শ্রদ্ধায় মাওলানা এম এ মান্নানের কীর্তি তুলে ধরেছেন, তা অবাক করার মতোই। এমনকি অনেক ইসলামী স্কলার মাওলানা এম এ মান্নানের কর্মময় জীবন নিয়ে বই লিখে তা সারাদেশের মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পড়ানোর প্রস্তাব দেন।
আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মাত্রই জন্ম-মৃত্যুর অধীন। চিরন্তন সত্য হলো জন্মগ্রহণ করলে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মানুষ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়, কিন্তু পেছনে পড়ে থাকে তার মহৎকর্মের ফসল। যে কর্মের জন্যে তিনি মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকেন। কৃতকর্মের জন্যেই কারো কারো নাম পায় মহিমা, উত্তর-পুরুষ এবং হয় স্মরণীয়। মহৎকর্মের জন্যেই তারা এই পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। এমন ব্যক্তিই মানবসমাজে ধন্য বলে বিবেচিত। মাওলানা মান্নান তেমনই মানুষ।
স্মরণ সভায় প্রতিটি বক্তাই ক্ষণজন্মা ইসলামী দার্শনিক মাওলানা এম এ মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের এক সময়ের অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করার চিত্র তুলে ধরেন। অধ্যক্ষ মাওলানা ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে এম এ মান্নানের কীর্তি তুলে ধরে বলেন, বর্তমান দেশে যে অবস্থা চলছে এ সময় মাওলানা এম এ মান্নানের খুবই প্রয়োজন ছিল। তিনি মাদরাসা শিক্ষা এবং দেশের শিক্ষায় যে অবদান রেখে গেছেন তাতে তার জীবনী লিখে মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। কারণ, তার মতো সুফি মানুষের জীবনী পড়লে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। কারী হাবিবুল্লাহ বেলালি বলেন, মাওলানা এম এ মান্নান জন্ম গ্রহণ না করলে দেশের মাদরাসা শিক্ষার এতো প্রসার ঘটতো না। মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্ররা অবহেলিতই থাকতেন। মাওলানা মান্নান বাংলা, আরবি, ইংরেজি ভাষায় সাবলীল কথা বলতে পারতেন। মিশরে এম এ মান্নানের আরবিতে দেয়া বক্তৃতা সেখানে শ্রোতাদের তর্জমা করে দিতে হয়েছিল। মাওলানা আবুল বয়ান হাশেমী বলেন, মাওলানা মান্নান আমাদের জন্য যা করে গেছেন, তার অবদান যদি ভুলে যাই তাহলে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবো। আল্লাহ অকৃতজ্ঞ জাতিকে ধ্বংস করে দেন। আমাদের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মাওলানা মান্নানের অবদান মনে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। মুর্শীদ নগর দরবারের পীর অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হাকীম জেহাদী বলেন, মাওলানা মান্নান শুধু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রাখেননি। তিনি শিক্ষক হিসেবে যা পড়াতেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে গেঁথে যেত তার বক্তব্য। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মাওলানা মান্নান বলেছিলেন, আপনি মাদরাসা শিক্ষকদের সরকারি স্কেলে বেতনের ব্যবস্থা করেন। আমি প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে টাকা এনে সরকারি কোষাগারে জমা দেব। এমন মহৎপ্রাণ মানুষ খুব কমই জন্মগ্রহণ করেছেন। একই কথা বলেন অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, মাওলানা মান্নান যে ভাবে সরকারের কাছ থেকে শিক্ষকদের মর্যাদা আদায় করেছেন; আমাদের এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে সেটা করতে হবে।
এ ছাড়াও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজীর সঞ্চালনায় মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, মুশুরীখোলা দরবারের পীর আল্লামা মাওলানা আহসানুজ্জামান, জৈনপুরের পীর সাহেব মাওলানা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ মাওলানা ড. নজরুল ইসলাম আল-মারুফ, ড. আব্দুল কাইয়ুম আল-আজহারীসহ যারাই বক্তৃতা করেন তারা সকলেই মাওলানা এম এ মান্নানের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন বিনম্র শ্রদ্ধায়।
ঘড়ির কাঁটা কারো জন্য বসে থাকে না। মানুষ খুব অল্প সময়ের জন্যই পৃথিবীতে আসেন। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে জীবনের কর্তব্য সম্পাদন করতে হয়। এই সম্পাদিত কর্তব্য-কর্ম দ্বারাই নির্ণীত হয় জীবনের সার্থকতা কিংবা ব্যর্থতা। যারা সময়কে কাজে লাগিয়ে জীবনের স্বল্প পরিসরে মানবতার কল্যাণে মহৎ কর্ম সাধন করেন, মৃত্যুর পরও তারা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যান না। মরণ তাঁদেরকে পৃথিবী থেকে ছিনিয়ে নিলেও তাদের কর্ম-কীর্তিকে ছিনিয়ে নিতে পারে না। কৃতী মানুষেরা কর্মগুণে বেঁচে থাকেন। মাওলানা মান্নান যেন তেমনই একজন মানুষ ছিলেন। তার ১৮তম মৃত্যু বার্ষিকীতে দেশবরেণ্য আলেমদের কথা শুনে সেটাই মনে হলো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিশ্রামে যাচ্ছেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান!
শেনচেনে গ্যাস স্টেশন ছাড়িয়ে ৩৬২টি সুপারচার্জিং স্টেশন
অপকর্ম ডাকতে ইসরাইলে আল জাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধ
কনসার্টে সুনিধিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারলেন দর্শক
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেন আমান উল্লাহ আমান
ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার শুভেচ্ছাদূত হলেন কারিনা
নেপালের মানচিত্রে বিতর্কিত তিন এলাকা! মুখ খুললেন জয়শংকর
আমদানির খবরে হিলিতে কমেছে পেঁয়াজের দাম
ম্যাডোনার কনসার্টে হাজির ১৬ লাখ দর্শক
আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জোতানো কিংবদন্তি কোচের চিরবিদায়
কেনিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২২৮
গাজায় পানিশূন্যতায় ভুগছেন দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী
স্থানীয় নির্বাচনে বিশাল পরাজয়, বড়সড় অস্বস্তিতে ঋষি সুনাক
বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের উপর ‘ল্যান্ডিং চার্জ’ বসানোর দাবি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের
ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনি নারী
মাতুয়াইলে ইউটার্নের সময় পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা বাসের, চালকসহ নিহত ২
মোবাইলের আলোয় অস্ত্রোপচার, মা ও নবজাতকের মৃত্যু
নাগরিকদের রক্ষাই কানাডার উদ্দেশ্য, ৩ ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে জানালেন ট্রুডো
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অবশ্যই ভারতের অংশ: জয়শঙ্কর
রেকর্ড সংখ্যক হাজির সমাগম হবে মক্কায়, প্রস্তুতি নিচ্ছে সউদী আরব