জাপাানি মা ডা. এরিকো নাকানোর সঙ্গে থাকবে ছোট ও বড় কন্যা। আপাতত: বাংলাদেশী বাবা ইমরান শরীফের জিম্মায় থাকবে মেজো মেয়ে। বাবা এবং মা উভয়ে তাদের তিন সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাত এবং সময় কাটানোর পূর্ণ সুযোগ পাবেন।

তিন কন্যা শিশুর জিম্মাদারী নিয়ে চলমান মামলায় এভাবেই তিন সন্তানের জিম্মাদারিত্ব ভাগ করে দিলেন হাইকোর্ট। বাবা ইমরান শরীফের করা রিভিশন অংশত: মঞ্জুর করে গতকাল মঙ্গলবার উপরোক্ত আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি মামনুন রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থানরত বড় মেয়ে ও জাপানে থাকা ছোট মেয়েকে জাপানি মা নাকানো এরিকো তার কাছে রাখতে পারবেন। বাংলাদেশে থাকা মেজ মেয়েকে বাবা ইমরান শরীফ তার জিম্মায় রাখতে পারবেন।

রায় ঘোষণার সময় ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম ও অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী। ডা: নাকানো এরিকোর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির।

জাপানের নাগরিক এরিকো ও বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরানের ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিয়ে হয়। তাদের তিনটি মেয়ে সন্তান রয়েছে । ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজ) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। তিন জনের মধ্যে ছোট মেয়ে জাপানে রয়েছে। ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে ২০২১ সালের আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন এরিকো। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে পৃথক রিট করেন ইমরান। উভয় রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে একই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো। পরে সেটি চেম্বার জজ আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

পরবর্তীতে এরিকোর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটি (২০২১ সালে শিশুদের বাবার করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপান থেকে আসা দুই শিশু তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। শিশুদের বাবা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।

আদেশে বলা হয়, মামলার পারিপার্শ্বিক বিষয় ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় তাদের এ আদালতের এখতিয়ারের বাইরে ( দেশের বাইরে) নেয়া যাবে না। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে শিশুদের বাবার আপিল খারিজ করে শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা মায়ের সঙ্গে থাকবে বলে রায় দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারি জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান। এ রায়ের বিরুদ্ধে বাবা আপিল করলে সেই আপিল খারিজ করে দুই শিশু সন্তান তাদের মায়ের জিম্মায় থাকবে-মর্মে রায় দেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভুইয়া। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে শিশুদের বাবা। ওই রিভিশন শুনানির পর গতকাল হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় অনুযায়ী বাবা-মা ও সন্তানেরা একে অন্েেয সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে বলে জানান মায়ের পক্ষের আইনজীবী। তবে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ডা: এরিকো নাকানো এবং ইমরান শরীফর আইনজীবীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।