ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
২০২৩-২৪ অর্থবছর ৭ মাসে বিক্রি ৯ বিলিয়ন ডলার

সংকটেও অব্যাহত ডলার বিক্রি

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম

দেশের মধ্যে তীব্রতর ডলার-সংকট চলছে। এ সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখা হয়েছে। যদিও তারপরও নিত্যপণ্যের লাগাম টানা যাচ্ছে না। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ মাস (জুলাই-জানুয়ারি) ৯ দিনে রিজার্ভ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংকে এ ডলার বিক্রি করা হয়। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার কিনেছে। যদিও গত নভেম্বরে রিজার্ভ থেকে আর কোনো ডলার বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। যদিও এই কথা ঠিক থাকেনি। প্রতিনিয়তই ডলার বিক্রি চলছে। সবশেষ হিসাব (বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল) অনুযায়ী, দেশে গ্রস রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, গ্রস রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এর বাইরে আরও একটি হিসাব রয়েছে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব। সে হিসাবটি শুধু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফকে দেওয়া হয়। ওই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করছে। এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। এরই মধ্যে রেমিট্যান্সে কিছুটা গতি এলেও তা আশানুরূপ না। চলতি বছরের প্রথম মাসের পুরো সময়ে ২১০ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর চলতি মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম ৯ দিনে এসেছে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। এদিকে ডলার সংকটে দীর্ঘদিন থেকেই নিয়ন্ত্রিত আমদানির কারনে রফতানি আয়েও প্রবৃদ্ধি নেই। গত জানুয়ারি মাসে পূরণ হয়নি রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। এ মাসে বাংলাদেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৭৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ কম রফতানি আয় হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং রিজার্ভ বাড়াতে ডলারের দামের স্থিতিশীলতা জরুরি। একই সঙ্গে ডলারের দাম বাজারের উপর ছেড়ে দিতে হবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন থেকে বলছে, তারা ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের উপরই ছেড়ে দিয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের উপর ছাড়া হয়নি।

বর্তমানে পরিস্থিতিকে অভূতপূর্ব উল্লেখ করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একদিকে যেমন দাম নির্ধারণের উপর নিয়ন্ত্রণটা রাখতে চাইছে, অন্যদিকে তেমনি নিয়ন্ত্রণের কারণে বাইরে থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলারের দাম বাজারের উপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের এক ধরণের স্পর্শকাতরতা আছে। তারা মনে করে একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের উপর ছেড়ে দেয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ঠিক বলা যায় না। এছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, একটা মিসট্রাস্ট (অবিশ্বাস) বাজারের উপর আছে। তারা মার্কেটকে পুরোপুরি ছাড়ে নাই কোনও দিনই, আর এখনো ছাড়ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, রিজার্ভ মূলত রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ওপর নির্ভর করে। রেমিট্যান্স বাড়াতে নীতিমালা সহজ করা হয়েছে। প্রবাসীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রচারণা চলমান করা হয়েছে। হুন্ডি বন্ধে কাজ করছে বিশেষ দল। পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াতে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি ও এডিবি ঋণের টাকা রিজার্ভে সমন্বয় করা হয়েছে। আরও কিছু ঋণ পাইপলাইনে রয়েছে। সামনে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে।

কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৩১ কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে। বিপরীতে দেশ আমদানি করেছে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা। অর্থাৎ বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে চার দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৯২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে ঘাটতি ছিল ৪৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার।

‘ক্রলিং পেগ’ চালু মার্চে
ডলার সংকট কাটাতে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু হচ্ছে আগামী মার্চেই। ডলার দর নিয়ন্ত্রিত ও বাজারভিত্তিক করতে দ্রুত ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আসছে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। ল্যাটিন আমেরিকার উরুগুয়েতে প্রথম ক্রলিং পেগের প্রচলন ঘটে। বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় বতসোয়ানা, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়ায় ক্রলিং পেগ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি টাকার বিপরীতে ডলারের দামের ভিত্তি হবে রিয়াল ইফেকটিভ একচেঞ্জ রেট (রিয়ার) ও নমিনাল ইফেকটিভ একচেঞ্জ রেট (নিয়ার)। বৈশ্বিক মানদণ্ডের আলোকে ‘ক্রলিং পেগ’ রেটের সঙ্গে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকার করিডোর রাখা হবে। আর স্মার্ট সুদহারের আলোকে বাংলাদেশ ফরেন একচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দর নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে এক কর্মকর্তা জানান, ডলার সংট কাটছে না। সংকটের সুযোগে কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে ব্যাংক-এক্সচেঞ্জ হাউজ। অন্যদিকে, রিজার্ভও তলানিতে। এ পরিস্থিতিতে ডলারের দর শতভাগ বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবেশ নেই। তাই গভর্নর ক্রলিং পেগ পদ্ধতি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ