অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় ৩০ গ্রুপের ৫০০ সদস্য
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রশাসনের নাকের ডগায় ৩০টি গ্রুপ বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ছে। গত দু’বছর ধরে ওই চক্রের পাঁচ শতাধিক সদস্য অনলাইন প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে সক্রিয় রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের কারবার চালছে। মাঝে মধ্যে এ চক্রের দু’একজন আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আবারো একই অপরাধ করছে এরা। একই সাথে জাল টাকা কীভাবে তৈরি করতে হবে, এই কাজে কোন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা সহজ হবে, কীভাবে এসব টাকা ছড়িয়ে দিতে হবে, কোথায় ও কীভাবে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যাবে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এসব চক্র। ইউটিউব, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হয় এই প্রশিক্ষণ। এসব মাধ্যমে এই চক্রের পেজ ও গ্রুপও রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের অভিযোগে জাল নোট চক্রের অন্যতম সদস্য জিসান হোসেন রিফাতকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকার বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট ও ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অল্পসময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে উচ্চাভিলাষী জিসান ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে একটি চক্রের কাছ থেকে জাল নোট তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি নিজেই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্নভাবে সরবরাহ করে আসছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ে গ্রেফতার জিসান।
গ্রেপ্তার জাল নোট কারবারী ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাল নোট তৈরির জন্য প্রথমে টিস্যু কাগজের এক পার্শ্বে ছবি স্ক্রিনের নিচে রেখে গাম দিয়ে ছাপ দেয়। এরপর ১০০০ লেখা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রামের ছাপ দেয়। অতপর অপর একটি টিস্যু পেপার নিয়ে তার সাথে ফয়েল পেপার থেকে টাকার পরিমাপ অনুযায়ী নিরাপত্তা সূতা কেটে তাতে লাগিয়ে সেই টিস্যুটি ইতোপূর্বে প্রতিচ্ছবি জলছাপ দেয়া টিস্যু পেপারের সাথে গাম দিয়ে সংযুক্ত করে দেয়।এভাবে টিস্যু পেপার প্রস্তুত করে বিশেষ ডট কালার প্রিন্টারের মাধ্যমে ল্যাপটপে সেভ করে রাখা টাকার ছাপ অনুযায়ী প্রিন্ট করা হয়। ওই টিস্যু পেপারের উভয় সাইট প্রিন্ট করা হয় এবং প্রতিটি টিস্যু পেপারে মোট ৪টি জাল টাকার নোট প্রিন্ট করা হয়। এরপর প্রিন্টকৃত টিস্যু পেপারগুলো কাটিং গ্লাসের উপরে রেখে নিখুঁতভাবে কাটিং করা হয়। পরবর্তীতে কাটিংকৃত জাল টাকাগুলো বিশেষভাবে বান্ডিল করে এটি চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে জাল টাকা তৈরির গডফাদারখ্যাত জাকির বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার চক্রের অন্যরা সক্রিয় রয়েছে। ৩০টি গ্রুপ বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ছে। গত দু’বছর ধরে ওই চক্রের পাঁচ শতাধিক সদস্য অনলাইন প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে সক্রিয় রয়েছে জাল টাকার কারবারীরা। সারা দেশে সক্রিয় জাল টাকার কারবারি ৩০টি চক্রের হোতাদের মধ্যে অন্যতম বিহারি সুমন, সাইফুল ওরফে রিকশা সাইফুল, সেলিম, জাকির, রাজশাহীর জামান, মো. ইমন, হামিদ, শিহাব, হুমায়ুন কবির, আজাদ, কাওসার, সেলিম ব্যাপারী, আমজাদ, জামান, খসরু ও সাগর। প্রতিটি চক্রে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার কেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ঈদ বা বড় বড় উৎসব গুলোতে জাল টাকা প্রস্তুতকারক ও কারবারীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কারবারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা বাইরে আছে তাদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। পুলিশ রোজার আগ থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে কেউ জাল নোট বাজারে ছাড়তে না পারে।
উদ্ধার হওয়া জাল টাকা আগের টাকার চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া জাল টাকায়ও নিরাপত্তা সুতা স্থাপন করা হয়েছে। এসব নিরাপত্তা সুতা তারা কিভাবে যোগাড় করেছে সেই ব্যাপারে গ্রেপ্তাকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাধারণ চোখে বোঝা খুবই কঠিন যে এটা জাল টাকা। তবে অরজিনাল টাকা কিছুটা খসখসে এবং জাল টাকা বেশি মসৃণ বলে তিনি জানান। এক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহবান জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক জাল চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। চলতি বছরেও বাণিজ্যমেলা থেকে কোটি টাকার বেশি জাল নোট বাজারে ছাড়ার চক্রকে ধরা হয়েছে। এ সব জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিলার রয়েছে তারা কৌশলে কাজ করে। সবাইকে সচেতন হলে এসব অপরাধ হয় তো কমে আসবে।
র্যাবের একজন কর্মকর্তারা ইনকিলাবকে বলেন, গ্রেফতারকৃত জিসান র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, জাল টাকা তৈরির ‘দক্ষতা’ অর্জন করার পরে সে জাল টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনে। নিজের তৈরি করা জাল টাকা সরবরাহের জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজ ও গ্রুপে সংযুক্ত হয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরির প্রযুক্তি আদান-প্রদান করত। জাল টাকা বিক্রির পন্থা বলে দিত চক্রের সদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে জাল নোট বিক্রি করত। ফেসবুক গ্রুপে জাল টাকা বিক্রির পোস্ট দিত। এরপর কেউ আগ্রহী হয়ে কমেন্ট করলে তাদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করা হতো। জাল টাকা সরবরাহকারী চক্রটি মাছ বাজার, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানা কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করে আসছিল। জিসান অধিক জনসমাগম হয় এসম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানির পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপিয়ে মজুদ করতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। সে এখন পর্যন্ত ২ কোটি টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের মানুষ কারো কাছে ভিক্ষা করে চলবে না : প্রধানমন্ত্রী
আরেকটি রক্তক্ষয়ী রাত দেখলো গাজাবাসী, এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ৯ লাখ মানুষ
জম্মু ও কাশ্মীরে পৃথক হামলায় পর্যটক দম্পতি গুলিবিদ্ধ, নিহত ১
‘জংলি’ লুকে চমকে দিয়েছেন সিয়াম
মোদির ভারতে মুসলিমরা নিজভূমে পরবাসী
আবদুল গাফফার চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
জাতীয় এসএমই পুরস্কার পেলেন ৭ উদ্যোক্তা
ফের ফারিণের সঙ্গে গান করতে চান তাহসান!
অবশেষে জানা গেল ঐশ্বরিয়ার হাত ভাঙার কারণ
যে কারণে এবারও ভোটে লড়লেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
কানের রেড কার্পেটে মুগ্ধতা ছড়ালেন কিয়ারা
চাঁদের মাটিতে ছুটবে রেলগাড়ি! রেলস্টেশন তৈরির কথা ভাবছে নাসা
সালথার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রার্থিতা বহাল
দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘুমের প্রতিযোগিতা
কী ভাবে প্রেমে বিশ্বাস রেখেছিলেন ক্যাটরিনা
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা কংগ্রেসের ভোটব্যাংক : অমিত শাহ
ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও, স্লোগানে উত্তাল মার্কিন ক্যাপিটল
সউদীতে সাঁতারের পোশাকে ‘ঐতিহাসিক’ ফ্যাশন শো!
তেঁতুলিয়ায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে এবার নতুন নির্দেশনা বিআরটিএর