দাদন কারবারীদের তালিকা হয়নি তিন বছরেও বন্ধুত্ব পর্যবসিত শত্রুতায় ছিন্নভিন্ন সমাজ-কাঠামো বাড়ছে আত্মহত্যা

মামলার জালে গরীব

Daily Inqilab সাঈদ আহমেদ

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

দারিদ্র্যের ছোবলে নীল হচ্ছে মানুষ। অর্থনৈতিক টানাপড়েনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে গরীবের ভাতের থালায়। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ধার-কর্জ করছে। সুদখোর, দাদনকারবারীদের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিচ্ছে ব্ল্যাংক চেক এবং স্ট্যাম্প বন্ধক রেখে। এতে চেক ডিজঅনারের মামলায় পড়ছে। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর থাকায় পড়ছে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায়। পাল্টা মামলাও হচ্ছে। এভাবে মামলায় জর্জরিত হচ্ছেন গরবী মানুষ। আর্থিক কারণে সহজ-স্বাভাবিক আত্মীয়তা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। বন্ধুত্ব পর্যবসিত হচ্ছে শত্রুতায়। সমাজ-কাঠামোয় ভাঙন ধরছে। হামলা, মামলা, খুন এমনকি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে সমাজ-শরীর। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসসহ বহুমাত্রিক এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের যেন কোনো পথ নেই।

সুদ কারবারীদের দৌরাত্ম্য : দাদন ব্যবসায়ী বা সুদ কারবারীদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে দারিদ্র্যপীড়িত দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি ঘটনা দিয়ে। দিনাজপুর, পার্বতীপুর, নিউকলোনীর দরিদ্র গৃহিণী মোছা: আলিফ নূর। করোনা মহামারি শুরু হলে পড়ে যান চরম অর্থকষ্টে। স্বামীর চিকিৎসার্থে ছোট হরিপুর (মুন্সিবাড়ি)ও দাদন ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন সাজুর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ঋণ দেয়ার সময় সাজু আলিফ নূরের স্বাক্ষরিত কৃষি ব্যাংকের ২টি ব্ল্যাংক চেক এবং ৩শ’ টাকার ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। আলিফ নূরের স্বামী আব্দুর রহমানও ঋণ নেন। তার কাছ থেকেও জামানত রাখা হয় জনতা ব্যাংকের ২টি স্বাক্ষরিত ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প। ২০২০ সালে নেয়া এই ঋণের বিপরীতে আলিফ নূর দম্পতি ২০২২ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু সাজু পরিশোধিত টাকাকে ‘সুদ’ হিসেবে ধরে তাদের কাছ থেকে দাবি করে বসেন ৪ লাখ টাকা।

এ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সাখাওয়াত হোসেন সাজু দু’জনের ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে ইচ্ছে মতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে ঠুকে দেন মামলা। আলিফ নূর এলাকার ইস্রাফিল হোসেনের স্ত্রী সুদ কারবারী মরিয়ম খাতুনের কাছ থেকেও নেন ১৪ হাজার টাকা। ঋণের সমুদয় অর্থ সুদসহ পরিশোধ করলেও তার কাছ থেকে রাখা ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে ইচ্ছে মতো অঙ্ক বসিয়ে দাবি করেন ৮ লাখ টাকা। দাবিকৃত টাকা শোধে ব্যর্থ হওয়ায় সুদ কারবারী চক্রের সদস্য সোহানুর রহমানকে দিয়ে সাজু ও মরিয়ম আলিফ নূর দম্পতির বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে কয়েকটি মামলা করেন। দিনাজপুর,পার্বতীপুরের প্রান্তিক জনপদে সুদ বা দাদন ব্যবসা এখন রমরমা। একই ভাবে রমরমা দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের আদালতগুলোর আইনজীবীদের পকেট। দাদনব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পক্ষে মামলায় লড়েন আইনজীবীরা। তাদের সঙ্গে হাত মেলান গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ প্রশাসন। ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক সুদ বা দাদন কারবার রোধে রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
শুধু সাখাওয়াত হোসেন সাজু কিংবা মরিয়মই নন। ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট পার্বতীপুরের দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে মানব বন্ধন হয় বড়পুকুরিয়ায়। আনোয়ারুল হামিদপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণ পলাশ বাড়ি গ্রামের জাকির হোসেনের পুত্র। মানববন্ধনকারীদের প্রায় সবাই দাদনচক্রের হাতে জিম্মি। এর মধ্যে গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, পান দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভ্যান চালক, এমনকি স্বল্প আয়ের স্কুল শিক্ষকও রয়েছেন। তারা আনোয়ারুলকে দাদন ব্যবসার পাশাপাশি কুখ্যাত মামলাবাজ, চেক ও দলিল জালিয়াতকারী, নারী অপহরণকারী হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। তারা অভিযোগ করেন, আনোয়ারুল ফাঁকা চেকে ঋণ গ্রহীতার স্বাক্ষর নিয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার করে চড়া সুদে টাকা ধার দেন। স্বাক্ষর নেয়া স্ট্যাম্পে পরে নিজের ইচ্ছামতো টাকা লিখে মামলা করে টাকা আদায় করেন। এলাকার তাজুল ইসলাম, গৃহবধূ নার্গিস বানু, রিওয়ন আলী, আব্বাস আলী, এনামুল, মাহামুদ, মামুন, মজমুল, আব্দুর রশীদ, আব্দুল কাদের, শফিকুল, রাজ্জাক, রবিউল, মোকলেছার, মর্তুজা, সাদ্দাম, বাবলু, নূর আলম, শাহাজালাল, প্রতিবন্ধী মজবুল ও আবুল কালাম আজাদ তার কাছ থেকে ঋণ নেন। দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ না করায় আনোয়ারুল ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে ৩ থেকে ৪টি মামলা করে। মামলায় হাজিরা দিতে দিতে তারা এখন নিঃস্ব। হামিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জানান, আনোয়ারুল সুদে টাকা খাটান। শত শত মানুষ তার মামলার শিকার হয়ে এখন নিঃস্ব। ভুক্তভোগীরা কাউন্সিলে নালিশ নিয়ে এলে বেশ কয়েকবার মীমাংসার উদ্দেশ্যে তাকে কাউন্সিলে ডাকা হয়। কোনোবারই সে হাজির হয়নি।
একই এলাকার ‘দাদন সম্রাজ্ঞী’ হিসেবে পরিচিত নাজমা খাতুন। তিনি তাজনগরের স্কুল শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের মেয়ে। নাজমা খাতুনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চেক ও আত্মসাৎ মামলার আসামি হয়েছেন স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে শতাধিক স্কুল কর্মচারী। তার স্টাইল আনোয়ারুলের মতোই। ব্ল্যাঙ্ক চেক ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রদত্ত ঋণের ১০ থেকে ২০ গুণ অঙ্ক বসিয়ে ঋণ গ্রহণকারীকে প্রথম লিগ্যাল নোটিশ দেন। তাতে সমঝোতায় না এলে চক্রের অন্য সদস্যদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিজ-অনার করিয়ে ঠুকে দেন মামলা। অনেক সময় দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলে লিখে নিচ্ছেন জমি, বসত ভিটা। এক যুগের বেশি সময় ধরে সুদের কারবার করে নাজমা এখন বিপুল সম্পত্তির মালিক। তার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ফাঁদে পড়েছেন খোড়াখাই সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ, হাবড়া ইউনিয়নের ফকিরপাড়া সড়েয়াডাঙ্গা গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন, হামিদপুর প্রামাণিকপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক লায়লা বানু। চক্রের হোতা সাখাওয়াত হোসেন সাজুর নাম বসিয়ে লায়লার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন নাজমা খাতুন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় বেলাইচন্ডি মৌজার সাড়ে ৫২শতক জমি নরেশ চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে লিখে নেন নাজমা খাতুন। ছোট হরিপুর মুন্সিপাড়া মৌজার ২৩ শতাংশ জমি লিখে নেন মোশারফ হোসেন মুন্সির কাছ থেকে। ২নং মনমথপুর ইউনিয়নের রাজাবাসর মৌজার সাড়ে ৪ শতক জমি লিখে নেন মাহবুবুর রহমান মুন্সির কাছ থেকে। এটির দলিল হয় নাজমা খাতুনের পুত্র নাদির শাহ নয়নের নামে। নাজমা খাতুন এবং সাখাওয়াত হোসেন সাজু সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করেন স্থানীয় আনিসুর রহমান, আল মামুন, মোতাহার, অমেজুল হক, খালেদা বেগমের মতো অনেকে।

সুদের কারবারী সেকেন্দার আলীর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ছোট চন্ডিপুর কালিরহাত এলাকার ৫শ’ সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ। সেকেন্দার আলী সরকারদলীয় নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কারোর কিছু বলার সাহস নেই।

লালমনির হাটের দারিদ্র্য পীড়িত এলাকা কালিগঞ্জ উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চল। এখানে হাজারো দরিদ্র মানুষ দাদন ব্যবসায়ী লাভলী বেগমের অত্যাচারে অতীষ্ঠ। তিনি উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ ভুল্যারহাটের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুল্যারহাট বাজারে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী ছিন্নমূল মানুষ।

ঋণের কারণে মৃত্যু এবং আত্মহত্যা : মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সুদকে হারাম করেছেন। ব্যবসাকে করেছেন হালাল। কিন্তু সুদখোর না শোনে ধর্মের কাহিনী। আর্থিক অনটনে পড়া প্রান্তিক মানুষ যখন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ পায় না তখন উচ্চ সুদে টাকা বিতরণ করে দাদন ব্যবসায়ীরা। একসময় এদেশে মহাজনী প্রথা ছিলো। ফসল ফলানোর আগেই মহাজনদের কাছ থেকে বর্গাচাষিরা চড়া সুদে টাকা ধার নিতেন। ফসল ওঠার পর সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারলে নিষ্ঠুর নির্যাতন নেমে আসতো। মহাজনি সেই ব্যবস্থার ইতি ঘটলেও হালে নতুন মোড়কে প্রত্যাবর্তন করেছে সুদের ব্যবসা। এখন সমাজের একশ্রেণির লোভী মানুষ ব্যক্তিগতভাবে, কখনো বা সমিতির মাধ্যমে সুদের ব্যবসা চাঙ্গা রেখেছে। সুদে টাকা নিয়ে মামলার আসামি হচ্ছে গরীব মানুষ। শুধু মামলার জালেই জড়াচ্ছে না। সুদ ব্যবসায়ীদের উপর্যুপরি মানসিক চাপে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’ নামক বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু মহাজনী ঋণে জর্জরিত হয়ে দেশে অন্ততঃ ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক আত্মহত্যা করেন গতবছর। তার লাশের সঙ্গে পাওয়া যায় একটি চিরকুট। যেখানে লেখা ছিলো, ‘সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গা-জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি।’

সুনামগঞ্জ তাহিরপুরের ফয়সাল আহমেদ সৌরভ আত্মহত্যা করার আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে লিখেছেন, ‘১ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার পর ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু সুদখোর এখনো সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করছে। একেকজনের কাছ থেকে যে টাকা নেয়, তার সাত-আট-দশ গুণ পরিমাণ টাকা দিয়েও রেহাই দিল না তারা। কেউ কেস করেছে। কেউ কেউ অপমান-অপদস্থ করেছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তাই বিদায় নিলাম। আমার জানাজা হবে কি না, জানি না। যদি হয়, তখন সব সুদখোররা টাকা চাইতে এলে আমার শরীরটাকে কেটে ওদেরকে দিয়ে দিবেন।’

এরকম দৃষ্টান্ত রয়েছে অসংখ্য। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে মানুষ আত্মহত্যা করছে। অথচ ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে। বিদেশে পাচার করছে। প্রচলিত আইন তাদের কিছুই করতে পারছে না।

উপেক্ষিত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা : এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনাসহ একটি রুল জারি করেন। নির্দেশনায় সুদ কারবারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছিলো। আদালত বলেছিলেন, মানুষের কাছ থেকে কারা আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দিতে পারবে এবং ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, সেটি আইন দ্বারা নির্দিষ্ট। কিন্তু এর বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মানুষকে ঋণ দিয়ে উচ্চ হারে সুদ আদায় করছে। ব্যাংক খাতে ক্রেটিড কার্ড ছাড়া এখন বার্ষিক সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশের মধ্যে। তবে সুদ কারবারীরা মাসে ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে সুদে ঋণ দিয়ে থাকেন। এ প্রেক্ষাপটে অনিবন্ধিত বা অনুমোদিত সুদ কারবারী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি জাকির হোসেনের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন। অনিবন্ধিত বা অননুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকা-ের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া হয়। তদন্তকালে কোনো অননুমোদিত বা লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক সেগুলো বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। চড়া সুদে ঋণদানকারী স্থানীয় মহাজনদের তালিকা দিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকেও নির্দেশ দেয়া হয়। রিটে অর্থসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৩৬ ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়।

আদেশ সম্পর্কে ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন, আদালত সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে ৪৫ দিনের সময় দিয়েছে। চড়া সুদে দেয়া ঋণের বিপরীতে জমি বা বাড়িঘরের দলিল বা অন্য মূল্যবান সম্পদ বন্ধক রাখা হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে প্রায়ই সেগুলো দখল করে নেয়ার অভিযোগ আসছে পত্রপত্রিকায়। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাও করছেন অনেকে। রিটে অর্থসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৩৬ ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়।

ওই নির্দেশনা ও রুল জারির পর বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ সদস্যের একটি কমিটি করেছে বলে জানা যায়। কিন্তু ৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও রুল শুনানির কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও টেলিফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। রিটের প্রাথমিক শুনানিতে সরকারপক্ষে অংশ নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল) নূর উস সাদিক। গতকাল শনিবার তিনি প্রতিবেদককে বলেন, রুল জারির পর রিটকারী পক্ষ থেকে শুনানির কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে সরকারপক্ষে শুনানির জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদের কারবারীদের আইনগত হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট (এনআই অ্যাক্ট)। এ আইনে দায়েরকৃত মামলায় তদন্তের কোনো সুযোগ নেই। ফলে আইনটির সুযোগ নিয়ে নিষ্ঠুর অপপ্রয়োগ করছে অপরাধীচক্র। এর কারণ হচ্ছে, এনআই অ্যাক্টে দায়েরকৃত মামলার কোনো তদন্ত হচ্ছে না। যিনি চেক ডিজঅনারের মামলা করছেন, তিনি আদৌ চেকটির ন্যায়সঙ্গত প্রাপক কি না-এ প্রশ্নটিই উঠছে না। ফলে যেনতেন প্রকারে চেক হস্তগত করে যে কেউ ইচ্ছেমতো অঙ্ক বসিয়ে ডিজঅনারের মামলা ঠুকে দিতে পারছে। এমনটি চলতে পারে না। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এস এম আব্দুর রউফ বলেন, এনআই অ্যাক্টে করা মামলায় পুলিশ কিংবা কোনো সংস্থা কর্তৃক তদন্ত করার বিধান নেই বটে। কিন্তু বিচারিক আদালত নিজেই এ বিষয়ে তদন্ত কিংবা ‘কয়েরি’ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আসামিপক্ষ তার পক্ষের যুক্তিগুলো তুলে ধরতে পারেন। আইনে সবই আছে। কে কিভাবে এটির প্রয়োগ করেন সেটি হচ্ছে বিষয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অবশেষে জানা গেল ঐশ্বরিয়ার হাত ভাঙার কারণ

অবশেষে জানা গেল ঐশ্বরিয়ার হাত ভাঙার কারণ

যে কারণে এবারও ভোটে লড়লেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

যে কারণে এবারও ভোটে লড়লেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

কানের রেড কার্পেটে মুগ্ধতা ছড়ালেন কিয়ারা

কানের রেড কার্পেটে মুগ্ধতা ছড়ালেন কিয়ারা

চাঁদের মাটিতে ছুটবে রেলগাড়ি! রেলস্টেশন তৈরির কথা ভাবছে নাসা

চাঁদের মাটিতে ছুটবে রেলগাড়ি! রেলস্টেশন তৈরির কথা ভাবছে নাসা

সালথার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রার্থিতা বহাল

সালথার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রার্থিতা বহাল

দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘুমের প্রতিযোগিতা

দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘুমের প্রতিযোগিতা

কী ভাবে প্রেমে বিশ্বাস রেখেছিলেন ক্যাটরিনা

কী ভাবে প্রেমে বিশ্বাস রেখেছিলেন ক্যাটরিনা

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা কংগ্রেসের ভোটব্যাংক : অমিত শাহ

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা কংগ্রেসের ভোটব্যাংক : অমিত শাহ

ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও, স্লোগানে উত্তাল মার্কিন ক্যাপিটল

ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও, স্লোগানে উত্তাল মার্কিন ক্যাপিটল

সউদীতে সাঁতারের পোশাকে ‘ঐতিহাসিক’ ফ্যাশন শো!

সউদীতে সাঁতারের পোশাকে ‘ঐতিহাসিক’ ফ্যাশন শো!

তেঁতুলিয়ায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড

তেঁতুলিয়ায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে এবার নতুন নির্দেশনা বিআরটিএর

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে এবার নতুন নির্দেশনা বিআরটিএর

লাঠিসোটা হাতে সড়কে অটোরিকশাচালকরা, যান চলাচল বন্ধ

লাঠিসোটা হাতে সড়কে অটোরিকশাচালকরা, যান চলাচল বন্ধ

কান চলচ্চিত্র উৎসবে শুভকে প্রশংসায় ভাসালেন নাসিরুদ্দিন শাহ

কান চলচ্চিত্র উৎসবে শুভকে প্রশংসায় ভাসালেন নাসিরুদ্দিন শাহ

কানে নজরকাড়া লুকে চমকে দিচ্ছেন ভাবনা

কানে নজরকাড়া লুকে চমকে দিচ্ছেন ভাবনা

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি

তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য অধীর আগ্রহে ইউক্রেনীয় সেনারা

তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য অধীর আগ্রহে ইউক্রেনীয় সেনারা

কুড়িগ্রামে নির্বচনী সংঘর্ষে আহত ১০

কুড়িগ্রামে নির্বচনী সংঘর্ষে আহত ১০

সোনারগাঁয় ভোট কিনতে এসে টাকাসহ যুবক আটক

সোনারগাঁয় ভোট কিনতে এসে টাকাসহ যুবক আটক

তিন দশক পর ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তিন দশক পর ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী