৫ বছরে মেলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৪৫০টি
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা বাঙালির জ্ঞান বিজ্ঞান ও ইতিহাস চর্চার অন্যতন সঙ্গী হয়ে রয়েছেন কয়েক যুগ ধরে। প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারির এই মেলাকে ঘিরে লেখক প্রকাশকরা সৃষ্টি করে থাকেন তাদের অনবদ্য সৃষ্টি নতুন সব বই। এসব বইয়ে স্থান পায় মানুষের জীবন-মরন, আকাশ-বাতাস ও মহাজাগতিক সৃষ্টির নানান ইতিহাসের সমারোহ। তারই একটি অংশ জুড়ে স্থান পায় বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের ইতিহাস। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল এ ইতিহাস নিয়ে গত ৫ বছরে বইমেলায় এসেছে ৪৫০ টি বই। এসব বইয়ে উঠে এসেছে ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাত্তর ঘিরে নানান ইতিহাস। যেখান থেকে নতুন প্রজন্ম খুঁজে পায় তাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবময় স্মৃতি।
পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালো রাতের বর্বতার থেকে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তা ‹৭১এর ১৬ ডিসেম্বর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিজয় নিশান উড়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। দীর্ঘ ৯মাসের এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাঙালির নিকট মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত। এই মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি দেখতে না পারলেও তা নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহের কমতি নেই। তাই তো প্রতিনিয়ত সে চাহিদা পূরণ করতে প্রবীণ ও তরুণ ইতিহাস বোদ্ধারা নিয়ে আসছেন নতুন নতুন সব ইতিহাসের বই। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের বইমেলায় এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মোট ১৬৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিগত চার বছরে বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই এসেছে ২৮৭টি।
লেখক ও প্রকাশকরা জানান, এসব বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ঘটনা ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে যাতে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। এসব বইয়ের মধ্যে অনেক বইয়ে কোনো একক ব্যক্তির আত্মত্যাগ, কোনটাতে একটি ইউনিটের সংগ্রাম, আবার কোনটাতে পুরো জাতির আত্মত্যাগের কথা ফুটে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের মধ্যে এবছর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই হলো- মোস্তফা সেলিম রচিত সাপ্তাহিক যুক্তবাংলা, পপি দেবি থাপা রচিত শরনার্থীদের জবানবন্দি ১৯৭১, সরদার মোশারফ হোসেনের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও একটি কালো অধ্যায়, আসাদুজ্জামান আসাদ রচিত মুক্তির সংগ্রামে বাংলা ও এস এম আব্রাহাম লিংকন রচিত ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের শহীদ আইনজীবী অন্যমত। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে এর গুণগত মান ঠিক রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ। তিনি বলেন, অনেক ইতিহাস জানার চেয়ে সঠিক ইতিহাস জানাটা বেশি জরুরি। এমন ইতিহাস চাই না যা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করবে। গতকাল মঙ্গলবার মেলার ২০তম দিনে নতুন বই এসেছে ৯৯টি। এ নিয়ে মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৯২ টি।
গতকাল বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ। জামাল নজরুল ইসলাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। প্রাবন্ধিক বলেন, প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাণিতিক, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববরেণ্য কসমোলজিস্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি জে, এন, ইসলাম হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশ বছরের বৈজ্ঞানিক জীবনে তিনি ধ্রুপদি সব বিজ্ঞান-ধারার ওপর কাজ করে গেছেন। তন্মধ্যে আছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব, আপেক্ষিকতার সূত্র, নক্ষত্রের গঠন ও মহাবিশ্ব তত্ত্ব। তবে তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল আপেক্ষিকতাবাদ ও মহাবিশ্বতত্ত্ব। তার লিখিত দ্য আলটিমেট ফেন্ট অব দ্য ইউনিভার্স গ্রন্থটি ফরাসি, ইতালীয়, জার্মান, পর্তুগিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়।
আলোচকবৃন্দ বলেন, প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচিন্তা ও গবেষণার পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিম-লে বিশিষ্ট অবস্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি কেবল বড় বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একজন সংস্কৃতিবান ও দেশপ্রেমিক মানুষও ছিলেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগদান করেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা তাকে কখনও সমাজ ও মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম বড় বিজ্ঞানী হয়েও ছিলেন নিরহংকারী, অত্যন্ত আন্তরিক, সদাশয় ও সরল মনের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই ও সংলাপ মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে আজ বিকেল ৫:০০টায় ড. হাসান কবীর রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কৃষি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ২১ ফেব্রুয়ারী শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলা শুরু হবে সকাল ৮ টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি শামীম আজাদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ
অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য
আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী
পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?
‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?
গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ
আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম
মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী
কলাপাড়ায় নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেলেন মা
প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের গলায় পরাজয়ের মাল্য
সিলেটে একদিনে ৫ থানার ওসি বদলি
সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগের দাবি
তেজগাঁও থানার হত্যা মামলা ইনু-মেনন-পলক-দীপু মনি, মামুন-রুপা-শাকিল গ্রেপ্তার
নিজ বাড়িতে কোয়াড নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাইডেন
ফিরলেন লিটনও, সঙ্গী পাচ্ছেন না শান্ত
থিতু হয়ে ফিরলেন সাকিব
হঠাৎ কেন ভারত সফরে যাচ্ছেন চীন ঘনিষ্ঠ মুইজ্জু
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ফের ৫ দিনের রিমান্ডে
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর পদত্যাগ