মাতৃভাষা দিবসে জনস্রোত বইমেলায়
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালির আবেগের দিন। এ দিন প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মযজ্ঞ। রাত গড়িয়ে ভোর হতেই শহীদ মিনার অভিমুখে দেখা যায় গণমানুষের জনস্রোত। রাত পেরিয়ে বেলা পোহালে সেই স্রোত গিয়ে মিশে বইমেলায়।
গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বইমেলা শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। দিনের প্রথম প্রহর থেকে শহীদ মিনার অভিমুখি গণমানুষের ঢল নামে বইমেলায়। সকাল থেকেই টিএসসি ও আশপাশের দুই কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি হয় অচলাবস্থা। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তবে দুপুরের দিকে ভিড় কিছুটা কমে। যা বেলা গড়াতেই ফের জনস্রোতে রূপান্তরিত হয়।
এদিন সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায় সাদা কালো পাঞ্জাবী আর বাসন্তী শাড়ির রাজত্ব। তরুণিদের মাথায় ছিল ফুলের টায়রা। মায়ের সঙ্গে আসা শিশুদের হাতে ও মুখে ছিল বর্ণমালা আর শহীদ মিনারের আল্পনা। সকলের চোখে মুখে ছিল বিজয়ের উচ্ছাস। মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ের আনন্দ। বর্ণমালার সাজে সেজে মাথায় টায়রা লাগিয়ে তরুণীরা যেন একুশের চিত্রই ধারণ করছিলেন নিজেদের অঙ্গে। তরুণরাও বর্ণমালা খচিত পাঞ্জাবীতে রাঙ্গিয়েছেন নিজেদের। তাদের এই উচ্ছ্বাস আর আনন্দের চিত্র যেন জানান দিচ্ছিল একুশ আমাদের। এটি আমাদের আত্ম পরিচয়ের দিন। আমাদের গর্বের দিন।
গতকাল স্টলগুলোর বিক্রয় কর্মীরাও সেজেছিলেন একুশের সাজে। সরাসরি একুশের বইমেলার অংশ হতে পেরে তারা প্রকাশ করছিলেন তাদের আনন্দ আর গর্বের কথা। কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাবের ওয়াকি ও সিনথিয়া তাবাসসুম সেজে এসেছিলেন একুশের সাজে। তাদের পড়নে ছিল বর্ণমালা খচিত সাদা পাঞ্জাবী ও কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। তারা বলেন, আসলে একুশ ব্যাপারটা মনের মাঝে একটি অন্যরকম দোলা দেয়। এই দিন এলে মনে হয় আমরা বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি। যে জাতি তার মায়ের ভাষার প্রতি বিন্দুমাত্র কোন আপোষ করেনি। তারসাথে এই একুশের বইমেলার অংশ হতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমিই একুশ।
এদিকে অমর একুশে বইপ্রেমীরা খুঁজে বেড়িয়েছেন একুশের বই। তবে এবারের মেলায় একুশের বই ছিল অপ্রতুল। বাংলা একাডেমির তথ্য মতে এবছর এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি বই এসেছে ভাষা আন্দলোনের উপর। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, মেলায় ভাষা আন্দলোনের উপর লিখিত বই পাওয়া যাচ্ছে না। ভালো লেখকের বই কম। আজেবাজে লেখকের বইয়ে ভর্তি। শিক্ষনীয় বইয়ের অভাব পরিলক্ষিত। সঠিক ইতিহাস জানার জন্য দরকার বিশ্বস্ত লেখক।
শুধু একুশে নয়, সারাবছরব্যাপী বাংলা ভাষার প্রতি যতœশীল হওয়ার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নেছার উদ্দিন। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে আমরা দেখতে পায় মানুষ শুদ্ধ বাংলায় কতটা কথা বলতে পারে সে নিয়ে মাতামাতি। সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে ইউটিউবাররা মেতে উঠে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। এটা আসলে কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন বাঙালি হিসেবে, ভাষা আন্দলোনের চেতনাকে যদি কেউ বুকে ধারণ করে তবে তার উচিত ইংরেজি শেখার আগে বাংলা ভাষাটা শেখা, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে না। দশ শব্দ কথা বলতে গেলে তারমধ্যে ৩ থেকে ৪ শব্দই বলে ইংরেজিতে।
গতকাল মেলার ২১তম দিনে নতুন বই এসেছে ২৩৪টি।শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত ১২:৩০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৮ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। স্বরচিত কবিতাপাঠে প্রায় ১৩৫জন কবি কবিতা পাঠ করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি শামীম আজাদ।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর। একুশে বক্তৃতানুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, শিশুসাহিত্যিক ওয়াসিফ এ খোদা, কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ এবং শিশুসাহিত্যিক ইমরান পরশ।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকেল ৫:০০টায় ‹প্রথম কবিতার বই অনুভূতির দলিল› এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আশনা হাবিব ভাবনা, স্নিগ্ধা বাউল, সঞ্জয় ঘোষ, রিপন আহসান রিতু, মীর রবি, মাশরুরা লাকী ও মিনহাজুল হক। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন কবি ফারহান ইশরাক ও কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ।
আজ বৃহস্পতিবার বইমেলার ২২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: আসাদ চৌধুরী এবং স্মরণ: জাহিদুল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন দিলারা হাফিজ, বায়তুল্লাহ কাদেরী, খালেদ হোসাইন এবং মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ড. মুহম্মদ সামাদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল
বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!
বাগেরহাটে জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস
খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর
হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী
তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল
‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’
শ্রীনগরে বিদুৎপৃষ্ট হয়ে রং মিস্ত্রির মৃত্যু