ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণ দাবি বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ

কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্ত ঈমানদার জনতা রুখে দেবে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৩১ এএম | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৩১ এএম

ডিসি সম্মেলনে কওমি-নূরানী মাদরাসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, যদি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে থাকে তা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও ইসলাম বিদ্বেষী সিলেবাস গ্রহণের কারণে। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক ও ইসলামী শিক্ষা না দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও হিন্দুত্ববাদ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে মুসলিম অভিভাবকগণ বিতর্কিত শিক্ষাকে বর্জন শুরু করে মাদরাসামুখী হচ্ছে। সরকার ও স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থার এই ব্যর্থতার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দায়ী নন। নূরানী ও কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্ত করলে দেশের ঈমানদার জনতা তা রুখে দেবে। তারা ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

পীর সাহেব চরমোনাই ঃ সারা দেশে যত্রতত্র কওমি-নূরানী মাদরাসা বাড়ছে। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের এধরনের মন্তব্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নূরানী ও কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্ত করলে দেশের ঈমানদার জনতা তা রুখে দেবে।

গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী কমার কারণ মাদরাসা নয় বরং শিক্ষা কারিকুলাম। শিক্ষা কারিকুলামে ভিনদেশি শিক্ষার অনুপ্রবেশের কারণে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী কমছে। এর দায়ভার কোনভাবেই নূরানী মাদরাসা বা কওমি মাদরাসার নয়। এর দায়ভার শিক্ষামন্ত্রীকেই নিতে হবে। শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধনের দাবিকে পাশ কাটিয়ে মাদরাসার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর জন্য সুখকর হবে না। প্রাথমিক শিক্ষার্থী কমার অজুহাতে কওমি ও নূরানী মাদরাসার ওপর হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই। নূরানী ও কওমি মাদরাসা নিয়ে নতুন চক্রান্ত ঈমানদার জনতা রুখে দাঁড়াবে। পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আরো ঢেলে সাজানোসহ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কুরআন শিক্ষার জন্য নূরানী মুয়াল্লিম নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে অধিকাংশ মানুষের চিন্তা চেতনার আলোকে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে। সেইসাথে শিক্ষার সকল অসঙ্গতি দূর করতে হবে। এজন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধনের দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। দেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা চেতনাকে পাশকাটিয়ে চলমান শিক্ষা কারিকুলাম বহাল কখনো দেশপ্রেমিক ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, শিক্ষায় পূর্বের ন্যায় নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরামসহ মুসলিম মনীষীদের জীবন চরিত সংযোজন করতে হবে। আলীয়া মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। সর্বোপরি, শিক্ষায় হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বিরানব্বই ভাগ মানুষের উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : সারা দেশে যত্রতত্র কওমি-নূরানী মাদরাসা বাড়ছে। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এটি সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, যে কারণে এটি নিরসন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত ও কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাকের) সহ-সভাপতি আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। শিক্ষামন্ত্রীর এ আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, কওমি মাদরাসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য মাদরাসা ধ্বংসের নীল নকশা ও গভীর ষড়যন্ত্রের শামিল। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী স্কুলগুলোতে ভর্তি সময়কালীন নূরানী মাদরাসাগুলোর ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখা আপত্তিকর ও জঘন্য অপপ্রয়াস। এদেশের কওমি মাদরাসাগুলো মুসলমান দানশীলদের অর্থায়নে চলে। কওমি মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাস ও পরিচালনা নিয়ে নাক গলানোর অধিকার কারো নেই। কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র এ দেশের আলেম উলামা ও তাওহিদী জনতা বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মপ্রিয়। তারা স্বেচ্ছায় তাদের সন্তানদের জেনে বুঝেই মাদরাসায় ভর্তি করে থাকেন। এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মনে করে স্কুল-কলেজের পাঠ্য পুস্তক থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেয়ার কারণেই অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে না দিয়ে মাদরাসায় দিচ্ছে। স্কুলে ছাত্রছাত্রী কম হওয়ার দায় মাদরাসাগুলো নিবে কেন জাতি জানতে চায়। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধি করতে হলে পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় শিক্ষা পুনঃবহালের বিকল্প নেই। কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক ও আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার দায়ে শিক্ষা মন্ত্রীর পদত্যাগসহ সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা ইসলাম বিদ্বেষীদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ করার দাবি করেন তিনি ।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বলেছেন ‘সারা দেশে যত্রতত্র কওমি-নূরানী মাদরাসা বাড়ছে। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এটি সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, যে কারণে এটি নিরসন করতে হবে’ একটি মুসলিম দেশে শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্য খুবই দুঃখজনক। নেতৃবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রীর এ রকম বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, কওমি ও নূরানী মাদরাসাগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডগুলোর কোন প্রকার ত্রুটি থাকলে তা দূর করার পরামর্শে আমাদের কোন আপত্তি নেইÑ তবে যত্রতত্র এ সব মাদরাসা বাড়ছে বলে মন্ত্রী যে ভাবে বিষয়টি সামনে এনেছেন তা প্রকারান্তরে ধর্মশিক্ষাকে সঙ্কুচিত করারই ইংগিত বহন করে। তারা আরো বলেন, এ সব দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম জনসাধারণের নজরদারিতেই পরিচালিত হয়ে আসছে, এ সব মাদরাসা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্কুল শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে মর্মে শিক্ষামন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তাও সঠিক নয়। বরং ধর্মীয় বোধ-বিশ্বাসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এ সকল মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে এবং স্কুলে ধর্মশিক্ষা সঙ্কুচিত হওয়ায় তা কমছে। একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কাছ থেকে জাতি এমন বক্তব্য প্রত্যাশা করে না।

গতকাল সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে দলের সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়া উদ্দীন, সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া এ সব কথা বলেন।

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ : ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের নূরানী ও কওমি মাদরাসা মুসলমানের এক ঐতিহ্যবাহী জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুসলিম দেশ হিসাবে এদেশে কওমি মাদরাসা শত শত বছর ধরে দ্বীনদার আল্লাহওয়ালা এবং দেশের সুনাগরিক তৈরি করে আসছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কিছু নাস্তিক্যবাদী কর্মকর্তা অনেকদিন ধরেই ঘাপটি মেরে বসে আছেন। তারা সুযোগমতো পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিকতা এবং অনৈসলামিক সিলেবাস ঢুকিয়ে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের সন্তানদের মগজধোলাই করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। বর্তমানে আরেক বড় নাস্তিক্যবাদী মন্ত্রীকে ইসলাম প্রিয় মানুষের এই দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যা কেউ মানতে পারছেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিলেবাস এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের উপযোগী না হওয়ায় মুসলমানগণ মাদরাসা শিক্ষার দিকে ঝুঁকছেন এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু নাস্তিকরা এটা মানতে পারছেন না। মাদরাসা বন্ধ করলে এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনো এটা মেনে নিবেন না বরং আন্দোলন দানা বেঁধে উঠবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ষড়যন্ত্রকারী কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে এবং নাস্তিক অথর্ব মন্ত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে জনগণের আশাকে মূল্যায়ন করার জোর দাবি জানান।

ইসলামী ঐক্যজোট : ‘দেশে যত্রতত্র কওমি-নূরানী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় সরকারি নিবন্ধিত স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে’ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মাদরাসা বিরোধী এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সিলেবাস দেশের সংস্কৃতি ও ধর্মের সাথে সামঞ্জস্য নয়। এই সিলেবাসের বিরুদ্ধে সচেতন অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাজেই স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী কমার মূল কারণ হঠাৎ করে চাপিয়ে দেয়া এই শিক্ষা সিলেবাস। স্কুলে শিক্ষার্থী ফেরাতে চাইলে নূরানী মাদরাসা বন্ধ নয়, বরং প্রাথমিকের শিক্ষা সিলেবাস সংশোধন করতে হবে। তিনি বলেন, অনিবন্ধিত কওমি-নূরানী মাদরাসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আপত্তি থাকলে তিনি বেফাক বোর্ড কর্মকর্তাদের জানাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সামনে সরাসরি এমন মন্তব্য করে মূলত তিনি মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। আমরা তার এই বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, নূরানী মাদরাসাগুলো শিশুদের ইলম ও আমল চর্চার প্রাথমিক কেন্দ্র। কারো প্ররোচনা বা সুপারিশে এদেশে নূরানী মাদরাসা বন্ধ হবে না ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ডিসি সম্মেলনে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ করে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন “যত্রতত্র মাদরাসার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থী কমছে” শিক্ষামন্ত্রীর কথা সত্য নয়। মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোতে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় এবং দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার কারণে প্রকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মাদরাসায় দিচ্ছে। এতে তো শিক্ষামন্ত্রীর খুশি হওয়ার কথা। মাদরাসার শিক্ষকদের সরকারি বেতন দিতে হয় না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশপ্রেমিক আদর্শ নাগরিক গড়ার কাজ করছে। শিক্ষামন্ত্রীর নাখোশ হওয়ার পিছনে কারণ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী কট্টর মৌলবাদী সংগঠন ইসকনের সদস্য। যত্রতত্র মাদরাসা দেখলেই তার গাত্রদাহ শুরু হয়। তার ইচ্ছা আগামী প্রজন্মের ঈমান আক্বিদা ধ্বংস করা। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে দেবে না সচেতন অভিভাবকরা। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যভাবে সদ্য স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কৃষ্টি কালচার অনুপাতে বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলাম প্রবর্তিত হয়নি। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা করুন। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে আগামী প্রজন্মের জন্য নৈতিকতার কি উৎস আছে। নূরানী মাদরাসাগুলোতে আরবীর পাশাপাশি বাংলা অংক ইংরেজি সাধারণ জ্ঞানসহ বিভিন্ন শিক্ষা দেয়ার কারণে একজন অভিভাবক মনে করছে তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি না করে মাদরাসায় ভর্তি করলে যেমনিভাবে নৈতিকতা শিখবে তেমনিভাবে সাধারণ জ্ঞানে পারদর্শী হবে। এজন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধন করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের কৃষ্টি কালচারের আলোকে প্রণয়ন করুন এবং শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুনÑ দেখবেন স্কুলে কোনো শিক্ষার্থীর অভাব হবে না।

নাস্তিক-মুরতাদ নির্মূল কমিটি : নাস্তিক-মুরতাদ নির্মূল কমিটির সভাপতি ও হুসনুল কোরআন মাদরাসার পরিচালক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন কওমি-নূরানী মাদরাসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, যদি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে থাকে তা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও ইসলাম বিদ্বেষী সিলেবাস গ্রহণের কারণে, স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক ও ইসলামী শিক্ষা না দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও হিন্দুত্ববাদ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যার ফলে মুসলিম অভিভাবকগণ সে বিতর্কিত শিক্ষাকে বর্জন শুরু করে মাদরাসামুখী হচ্ছে। সরকার ও স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থার এই ব্যর্থতার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।

তিনি আরো বলেন, মাদরাসায় আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয়ে সময়োপযোগী সিলেবাস প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষা দিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। কওমি মাদরাসার এই সফলতা দেখেই দেশের জনগণ এই শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। যা দেশের জন্য শুভ লক্ষণ। দেশে আদর্শ নাগরিক তৈরি হলে সকল সেক্টরে দুর্নীতি, দুঃশাসন বন্ধ হবে। জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। তাই ৯২ ভাগ মুসলিম দেশে যে পরিমাণ মাদরাসা রয়েছে তা তুলনামূলক কম। আদর্শ নাগরিক ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আরো বেশি বেশি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। এতে কারো গাত্রদাহ শুরু হলে তা আমাদের কিছু করার নেই। মুফতি মহিউদ্দিন আরো বলেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত কওমি শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। একটি নূরানী-মক্তবও বন্ধের ষড়যন্ত্র হলে দেশে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠবে। ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা ও ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাতের ভোটের কারিগর হেলাল উদ্দিন এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজার বাসী

রাতের ভোটের কারিগর হেলাল উদ্দিন এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজার বাসী

খুলনার ডিসি সাইফুলকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন

খুলনার ডিসি সাইফুলকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ৩০ কর্মকর্তার বদলি

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ৩০ কর্মকর্তার বদলি

মোহাম্মদপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

মোহাম্মদপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়ায় ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ, সড়ক অবরোধ

শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়ায় ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ, সড়ক অবরোধ

বরিশাল রেঞ্জের আনসারের উপ-মহাপরিচালক ফখরুলকে বরখাস্ত

বরিশাল রেঞ্জের আনসারের উপ-মহাপরিচালক ফখরুলকে বরখাস্ত

সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ঘরে ঘরে, হাঁসফাঁস জীবন

সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ঘরে ঘরে, হাঁসফাঁস জীবন

গাজীপুরে ১২ দফা দাবি জানিয়ে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাজীপুরে ১২ দফা দাবি জানিয়ে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

চিরচেনা রূপে রাঙামাটি

চিরচেনা রূপে রাঙামাটি

ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা নিয়ে যেভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে

ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা নিয়ে যেভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে

লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ নিয়ে যে ছয়টি প্রশ্ন সামনে আসছে

লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ নিয়ে যে ছয়টি প্রশ্ন সামনে আসছে

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ

সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তিনে শ্রীলঙ্কা

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তিনে শ্রীলঙ্কা

খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক

খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর  মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত

অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত

এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা

এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা

নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন

নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন

বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ