বারি’ উদ্ভাবিত বীজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার তাগিদ
০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম
প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই প্রায় ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ব বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ফসল আবাদ ও উৎপাদনে নানা বৈচিত্র কৃষকদের সাথে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। তবে এখনো প্রকৃতির রুদ্ররোষের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করেই এ অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাদের জীবন কাটে। অতীতে বরিশাল অঞ্চলে কৃষি ব্যবস্থা বলতে শুধু ধানকে বোঝালেও কালের বিবর্তনে সেখানে গম, ভুট্টা, ডালসহ নানা দানাদার খাদ্য ফসলসহ তরমুজ ও সূর্যমুখীর মতো অপ্রচলিত রসালো ও তেল জাতীয় ফসল স্থান করে নিচ্ছে। ফলে কৃষিতে নানা বৈচিত্রের মতো কৃষকের ভাগ্যেরও ক্রমে পরিবর্তন ঘটছে। বিশে^র শতাধিক দেশে বাংলাদেশের যে কৃষিপণ্য রফতানি হচ্ছে, সেখানে বরিশালের অবদানও অপরিসীম। এ অঞ্চলে শুধু দানাদার খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ এখন প্রায় ৫০ লাখ টন।
‘বরিশালের বালাম চাল’-এর খ্যাতী এ উপমহাদেশ জুড়েই ছিল অনেকের মুখে। নানা প্রবন্ধ ও কবিতাসহ শিল্পীর গানেও এ কথা উঠে এসেছে বার বার। সেই বরিশালের কৃষি ব্যবস্থায় নানা ফল ও ফসল উৎপাদনেও বৈচিত্র এসেছে। এমনকি ‘মাচান পদ্ধতি’ এবং ‘সারজন পদ্ধতি’ সহ নানা আধুনিক লাগসই প্রযুক্তিতে বরিশাল অঞ্চলে শাক-সবজি সহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চারা বীজ সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপদনের লক্ষ্য নিয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদও প্রায় শেষের পথে। বিদায়ী ‘খরিপ-২’ মৌসুমে তিন দফার প্রকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে প্রায় ২৩ লাখ টন আমন চাল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বরিশালের কৃষিযোদ্ধাগণ। দেশে উৎপাদিত আউশের প্রায় ৬০ ভাগের উৎপাদন এ অঞ্চলে।
সারা দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের ৮০ ভাগ ও খেশারি ডালের ৪০ ভাগ এ অঞ্চলে আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। মিষ্টি আলুর প্রায় ৬০ ভাগই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে বরিশাল অঞ্চলে। এমনকি গম আবাদেও বরিশাল কৃষি অঞ্চল ক্রমে সৃমদ্ধ হচ্ছে। সারা দেশে আবাদকৃত তরমুজ’ -এরও ৮০ ভাগেরও বেশি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে বরিশাল অঞ্চলে। গত রবি মৌসুমে দেশে আবাদকৃত ৭৫ হাজার হেক্টরের ৬৪ হাজার হেক্টর তরমুজের আবাদ হয় বরিশাল কৃষি অঞ্চলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফত-ডিএই’র মতে, গত বছর প্রায় ৩০ লাখ টনের মত তরমুজের উৎপাদন হয় শুধু বরিশালেই। কৃষি উৎপাদনের ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’ উন্নতজাতের ডাল ফসল ও তেল ফসল সহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীর জাত উদ্ভাবন করেছে। এমনকি ‘বারি আম-১১’ নামের বারমাসী নতুন জাতের আম-উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। যার আবাদ ও উৎপাদনও ক্রমশ বাড়ছে বরিশালে। ফলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বরিশালের ১২ মাসী আম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন কৃষিবীদগণ।
আটঘর-কুড়িআনাসহ ভিমরুলী এলাকার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর অন্তত ৩০ হাজার টন পেয়ারা এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে পাশর্^বর্তি দেশের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতেও যাচ্ছে। বরিশালের আমড়া’র সুখ্যাতীও দীর্ঘদিনের। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও ‘বরিশালের আমড়া’ বাজার করে নিয়েছে।
সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সুমিষ্ট মাল্টার চাষ ও উৎপাদন হতে শুরু করেছে। যার চারা-কলম সরবরাহ হচ্ছে বরিশালের বানরীপাড়া ও নেসারাবাদ থেকে। এমনকি সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে বরিশালে প্রায় ১০ হাজার টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে। সম্প্রতিককালে বরিশাল অঞ্চলে সিমিতাকারে স্ট্রবরি’ এবং ‘ক্যাপসিকাম’এর সফল আবাদের আশাব্যঞ্জক সম্প্রসারণ ঘটছে।
চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে ডাল, তেলবীজ ও মসলা জাতীয় ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসল আবাদের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন কৃষিযোদ্ধাগণ। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টরে প্রায় ১৫ লাখ টন শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া ৬০ হাজার হেক্টরে ১.৬০ লাখ টন গম, ১৪ হাজার হেক্টরে মিষ্টি আলু, ১০ হাজার হেক্টরে গোল আলু, ১২ হাজার হেক্টরে ভুট্টা, আড়াই হাাজার হেক্টরে আখ, সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরে শশা-ক্ষিরা ও মর্মা ছাড়াও প্রায় দেড় হাজার হেক্টরে ফুট আবাদের লক্ষ্য অর্র্জনে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগণ।
এমনকি বরিশাল অঞ্চলে এবার প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টরে মসলা জাতীয় ফসলেরও আবাদ হচ্ছে। যার মধ্যে মরিচই আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টরে। সারা দেশে আবাদ ও উৎপাদনের ৩৫ ভাগ পেঁয়াজের উৎপাদন বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। পাশাপাাশি রসুন ছাড়াও ধনিয়া, আদা, কালোজিরা ও হলুদেরও আবাদ হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে ‘বারি’ উদ্ভাবিত পেঁয়াজ ও রসুন সহ অন্য সব ধরনের ফসলের উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহারসহ আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ।
একই সাথে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উন্নতজাত ও উচ্চ ফলনশীল সব ধরনের ফসলের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগকেও কাজে লাগানোর পরামর্র্শ দিয়েছেন কৃষিবীদগণ। এ লক্ষে ডিএই’র জেলা থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দায়িত্ব পালনে সমন্বিত ও আন্তরিকতাপূর্ণ কর্মকান্ডের বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাতের ভোটের কারিগর হেলাল উদ্দিন এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজার বাসী
খুলনার ডিসি সাইফুলকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ৩০ কর্মকর্তার বদলি
মোহাম্মদপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়ায় ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ, সড়ক অবরোধ
বরিশাল রেঞ্জের আনসারের উপ-মহাপরিচালক ফখরুলকে বরখাস্ত
সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ঘরে ঘরে, হাঁসফাঁস জীবন
গাজীপুরে ১২ দফা দাবি জানিয়ে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ
চিরচেনা রূপে রাঙামাটি
ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা নিয়ে যেভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে
লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ নিয়ে যে ছয়টি প্রশ্ন সামনে আসছে
সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ
নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তিনে শ্রীলঙ্কা
খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক
শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত
এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা
নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন
বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ