ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
রোজার আগে বিনা নোটিশে রাজধানীর রেস্টুরেন্ট-হোটেল বন্ধ তিন দিনে রাজধানীর ১১৩২টি হোটেল-রেস্টুরেন্টে অভিযান, ৮৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী-বয়-বেয়ারা গ্রেফতার কাজ হারিয়ে শত শত কর্মচারী থাকার জায়গা হারিয়েছেন। ইফতার-সাহারি নিয়ে শঙ্কা গুলশানে দু’টি বাণিজ্যিক ভবন ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা দুর্ঘটনার দায়সারা তদন্তে কেউ সাজা পায় না : মেয়র তাপস

অনিশ্চয়তায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা

Daily Inqilab সাখাওয়াত হোসেন

০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম

অনিয়ম ও অবৈধতার অভিযোগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়ার দৃশ্য দেখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতার পঙক্তি মনে পড়ছে। কবি লিখেছেন, ‘যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, ‘কেষ্ট বেটাই চোর’। রোজার আগে রাজধানীর হোটেলগুলো সিলগালা করার অভিযানে সেটাই মনে হচ্ছে। যারা অভিযান চালাচ্ছেন সেই রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারোই যেন দায় নেই? বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলভাবে এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ চলল কিভাবে? রাজধানী ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে হলে ১০ সংস্থার প্রত্যায়নপত্র নিতে হয়।

এখন যে সিটি কর্পোরেশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজউকসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযান চালিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করছে, এতদিন তারা কেন ঘুমিয়ে ছিলেন? নানা ঘাটে ঘুস নিয়ে এই অভিযানকারীদের মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। এখন তারা হঠাৎ দায়িত্ববান হওয়ার ভান করছেন। নিজেদের ব্যর্থতা, ঘুস-বাণিজ্য এবং ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বের হওয়ার ভয়ে কি এভাবে একের পর এক রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য মতে, সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এসব রেস্তোরাঁয় প্রায় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। ঢাকায় এই সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত তিন দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১১৩২টি হোটেল-রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ৮৭২ জনকে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিযানে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের প্রায় সবাই হোটেলের কর্মচারী, শেফ, বয়-বেয়ারা। তারা কার্যত চাকরি করে আয়-রোজগার করেন। হোটেল-রেস্তোরাঁর অবৈধতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মূল হোতাদের বদলে কর্মচারীদের গ্রেফতার করায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে এসব ছোট চাকুরের সংসার। রমজানে যারা হোটেলে ইফতার, সাহারি গ্রহণ করেন তারা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছেন। এসব হোটেল বন্ধ রাখা হলে তারা ইফতার-সাহারিতে বিপদে পড়বেন। এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা কোনো কথা বলছেন না। প্রতিদিন তারা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়ে বাহ্বা নিচ্ছেন। আসলেই কি তারা বাহ্বা পাওয়ার যোগ্য? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, রাজউকের যেসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এতদিন মাসোহারার বিনিময়ে হোটেল-রেস্তোরাঁর অনিয়ম দেখেও উট পাখির মতো গর্তে মুখ লুকিয়ে রেখেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কে?

রাজধানীর হোটেল-রেস্টুরেন্টের শেফ-কর্মচারী, ওয়েটার, বয়রা হুট করেই কর্মস্থল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। রোজার আগে কাজ হারানোয় অনিশ্চয়তার মুখে তাদের ভবিষ্যৎ। আর কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমেছেন তাদেরও পথে বসার অবস্থা। পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে তারা যে ব্যবসার স্বপ্ন দেখছেন তা হাওয়ায় উবে গেছে অভিযানে হোটেল সিলগালা করার মাধ্যমে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রশাসনযন্ত্রের দায়িত্বশীল লোকজন এতদিন নানাভাবে ঘুস-আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যবসা চালাতে দিয়েছে। এখন হঠাৎ করে তারা সাধু সেজেছেন। তারা যদি আগে দায়িত্বশীল হতেন ঘুস না দিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করতেন তাহলে এত দুরবস্থায় পড়তে হতো না। রাজউক, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা কার্যত নিজেদের অনৈতিকতার মুখোশ খুলে যাওয়ার ভয়ে কারণে-অকারণে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে।

বেইলি রোডে ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই একযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে রেস্টুরেন্ট-হোটেলে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে বন্ধের নোটিশ। আর ক’দিন পরই পবিত্র রমজান মাস। নগরীর হাজার হাজার রোজাদার ইফতার ও সাহারি করতেন হোটেল-রেস্টুরেন্টে। তাদের মধ্যেও এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে কিভাবে সম্পন্ন হবে ইফতার ও সাহারির কার্যক্রম। এছাড়া রমজান মাসে ব্যবসা, চাকরি ও অন্যান্য নানা কারণে মফস্বল থেকে লাখ লাখ রোজাদারকে ঢাকায় আসতে হয়। তারাও ইফতার ও সাহারির জন্য রাজধানীর হোটেল- রেস্টুরেন্টের ওপর নির্ভর করতেন। ঢালাওভাবে হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে তাদেরও বিপাকে পড়তে হবে।

গতকাল অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীর গুলশান-২ এর একটি ছয়তলা ও আরেকটি সাততলা বাণিজ্যিক ভবন ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে দুপুর ১২টায় গুলশান-২ এর ৪৬ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের এই ভবনে থাকা ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া একই অভিযোগে ধানসিঁড়ি নামে আরেকটি রেস্তোরাঁকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর ৩৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে সেভা হাউজের সামনে সিঁড়িতে মালামাল রাখায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এক ব্যবসায়ীকে। এই দু’টি ভবনেই অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যানার টানানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত তিন দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১১৩২টি হোটেল-রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ৮৭২ জনকে।
সরেজমিন বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে শতাধিক হোটেল শেফ ও কর্মচারীকে অপেক্ষমাণ দেখা যায়। অনেকেই দিনভর কাজের পর রাতে রেস্টুরেন্টেই ঘুমাতেন। এগুলো একেবারে সিলগালা বন্ধের কারণে তাদের চাকরি যেমন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে তেমনি কেউ হারিয়েছেন নিজের থাকার জায়গাও।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দেশে যেকোনো অঘটন ঘটলে রাষ্ট্রে দায়সারা সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এখন বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর তা আবার দেখা যাচ্ছে। এখানে রাজউকের মুখ্য ভূমিকায় থাকার কথা ছিল। এখন তারা নানা অজুহাতে দায় সারতে চাইছে। আবার সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কেউ এর দায় এড়াতে পারে না। অথচ নগর এলাকার সঠিক পরিকল্পনা, ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ভবন নির্মাণ, কার্যকরী উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা, সেবা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার মাধ্যমে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড এড়ানো সম্ভব ছিল।

নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকায় যে পরিমাণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে বসবাস করতে হয়, বিশ্বের আর কোনো শহরে জীবনের এমন ঝুঁঁকি নেই। বেইলি রোডের এ অগ্নিকাণ্ড ঢাকায় জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আবার সবার সামনে আনলো। অথচ নগর পরিকল্পনা, ভবনের ডিজাইন, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা, ভবনের ব্যবহার, ভবনের অগ্নি প্রতিরক্ষা, ফায়ার ড্রিল, ভবন মালিকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ এবং নগর সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকি থাকলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তাই এটিকে গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি। এ গাফিলতিতে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এর পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, একটি দুর্ঘটনা ঘটলে, পরে দায়সারা তদন্ত হয়। ফলে কে অপরাধী সে দায়ভার নির্ধারণ হয় না। যার কারণে তারা পার পেয়ে যান। এতে বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মানুষের মুখের কথায় একজনের ওপর আরেকজনের দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা না করে আইনের আওতায় যেভাবে দায়ভার নির্ধারণ করা হয় সেটি করতে হবে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক থানার ওসিরা তৎপর হয়েছেন। প্রত্যেক এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হোটেল-রেস্টুরেন্টকে আমরা চিঠি দিচ্ছি, সতর্ক করছি। তারপর অভিযান চালাচ্ছি। এ পর্যায় ক্রমে চলবে।

ধানমন্ডির ঝিগাতলায় ক্রাশ স্টেশন নামে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন বরিশাল বিএম কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম আকাশ। রেস্টুরেন্টের আয়েই গ্রামে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ সাতজনের সংসার চলে তার। এই অভিযানে বন্ধ হয়েছে তার কর্মস্থল রেস্টুরেন্টটি। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। আমিনুল ইসলাম বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বেতন কবে পাব, জানি না। খাবার টাকাও নেই।

একই এলাকার সি মাইনর ক্যাফে নামে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী মমিনুল বলেন, আমাদের থাকা-খাওয়ার খরচ মালিক নিজেই বহন করতো। আমরা বেশ কয়েকজন এই ভবনেই থাকতাম। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের থাকার জায়গাটুকু নেই। গত মাসের বেতন না দেয়ায় পকেটে চলার মতো টাকা নেই। এ অবস্থায় কোথায় যাব, কি করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

গতকাল খিলগাঁও এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাঁধূনি (শেফ) ইনকিলাবকে বলেন, মালিকপক্ষ থাকার ব্যবস্থা করে দিলেও খাওয়ার টাকা নেই। সকাল থেকে না খেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ অন্তত রমজান মাস পর্যন্ত মালিকদের সময় দিন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সব ভবন বন্ধ করে দিন।
গতকাল মতিঝিলে কথা হয় মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। সেই সুবাদে ফকিরাপুলে থাকি। পরিবার থাকে ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে। অফিস শেষে বাসায় ফিরে খাবার খেতে রেস্টুরেন্টে যাই। আর ক’দিন পরেই রমজান ইফতার-সাহারি নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।

মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, আমার বাড়ি বরিশালে। চাকরির সুবাদে ঢাকায় একটি মেসে থাকি। এখন অভিযান চলছে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় খাওয়া-দাওয়া করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খিলগাঁও এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে তিন বন্ধু মিলে এক বছর আগে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করি। কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন দফতর থেকে অনুমোদনও নেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু ত্রুটি থাকায় আতঙ্কে রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে রেখেছি। আমরা তরুণ উদ্যোক্তা, কি করে এই লোকসান কাটিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না। তাছাড়া সামনে রমজান ও ঈদ রয়েছে। ২৫ জন স্টাফের বেতন কোথা থেকে দেবো বুঝে উঠতে পারছি না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যারা লাইসেন্স দিয়েছে তাদের আগে দেখা দরকার ছিল ভবনটিতে রেস্তোরাঁ করার জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কি না, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম (অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা) ঠিক আছে কি না। কিন্তু ডিএসসিসি তার কোনোটিই করেনি। যখন যে প্রতিষ্ঠান এ ভবনে রেস্তোরাঁ করতে চেয়েছে, ডিএসসিসি তাদেরই ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। অথচ রাজউকের এফ-১ এ ভবনে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন নেই।

রেস্তোরাঁ খাতে সারাদেশে মোট ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁয় প্রায় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন জানিয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন, এই সেক্টরটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। বহু বছর ধরে রেস্তোরাঁ সেক্টরের সমস্যা নিয়ে সরকারি দপ্তর/ সংস্থা/কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি, মনিটরিং এর নামে শুধু হয়রানি চলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন, সরকার কর্তৃক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স গঠন করা। যার মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। একই সঙ্গে রেস্তোরাঁ সেক্টরের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইনও তৈরি করতে হবে।

গুলশানে দু’টি বাণিজ্যিক ভবন ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা : অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীর গুলশান-২ এর একটি ছয়তলা ও আরেকটি সাততলা বাণিজ্যিক ভবন ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুরে ওই দুই ভবনে ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যানার’ টানিয়ে দিয়েছেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নাইন। অভিযানে তার সঙ্গে আরও আছেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা। এর আগে দুপুর ১২টায় গুলশান-২ এর ৪৬ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের এই ভবনে থাকা ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া একই অভিযোগে ধানসিঁড়ি নামে আরেকটি রেস্তোরাঁকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর ৩৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে সেভা হাউজের সামনে সিঁড়িতে মালামাল রাখায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই দু’টি ভবনেই অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যানার টানানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নাইন বলেন, ৩৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাণিজ্যিক ভবনটিতে অনেকগুলো রেস্তোরাঁ রয়েছে। কিন্তু তার কোনোটিতেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া এই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। নাম দি এইচ হোটেল। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বের হওয়ার সুযোগ কম। দুই পাশে দু’টি সিঁড়িা থাকলেও তা সরু। এমন পরিস্থিতিতে এই হোটেলটি কীভাবে অনুমোদন পেল, তার সব কাগজপত্র বিকেলের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। এ ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪৬ জনের। ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যারা শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ভবনটি থেকে কমপক্ষে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে।

খিলগাঁওয়ে চার রেস্তোরাঁকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা : ফায়ার সেফটি ও ভবনে বিকল্প কোনো সিঁড়ি না পাওয়ায় কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজাসহ চারটি রেস্তোরাঁকে মোট সাত লাখ টাকা জরিমানা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গতকাল বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযান পরিচালনা করার সময় সংশ্লিষ্টরা দেখতে পান অধিকাংশ ভবন ও রেস্তোরাঁ নিয়ম লঙ্ঘন করে গড়ে তোলা হয়েছে। সেগুলোর কোনোটিরই ফায়ার সেফটি ও বিকল্প সিঁড়ি নেই।

অভিযানে অংশ নেয়া রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম জানান, কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজায় গিয়ে ফায়ার সেফটি ও ভবনে বিকল্প কোনো সিঁড়ি পাওয়া যায়নি। এছাড়া আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ তৈরি করা হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে রেস্তোরাঁ দুটিকে দুই লাখ টাকা করে মোট চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া চায়না ল্যান্ড রেস্তোরাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই কারণে চারটি রেস্তোরাঁকে মোট সাত লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাদেরকে সব নিয়মকানুন মেনে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রেস্তোরাঁ চালাতে বলা হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত

ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত

রোমাঞ্চকর মিলান ডার্বিতে ইন্টারের হার

রোমাঞ্চকর মিলান ডার্বিতে ইন্টারের হার

ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় চীন

ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় চীন

মধ্যরাতে রাজধানীর সড়কে সড়কে সেনা চেকপোস্ট

মধ্যরাতে রাজধানীর সড়কে সড়কে সেনা চেকপোস্ট

বিপন্ন মেরু ভালুককে গুলি করে হত্যা, তোপের মুখে আইসল্যান্ডের পুলিশ

বিপন্ন মেরু ভালুককে গুলি করে হত্যা, তোপের মুখে আইসল্যান্ডের পুলিশ

বাড়িতে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

বাড়িতে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

নদীতে মেহেদী রাঙা হাতে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা যুবতীর লাশ উদ্ধার

নদীতে মেহেদী রাঙা হাতে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা যুবতীর লাশ উদ্ধার

গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সমালোচনার ঝড়

গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সমালোচনার ঝড়

বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল দ. আফ্রিকা

বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল দ. আফ্রিকা

গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়

গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়

রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড

রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে