জবিতে খাতে খাতে আর্থিক অনিয়ম
১২ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম
এক গ্রেডের কর্মকর্তাকে আরেক গ্রেডে বেতন প্রদান, এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ দেখানো, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি খরচ, অতিরিক্ত হারে ভাতা প্রদান, গাড়ী কেনাকাটায় নিয়মের ব্যত্যয়সহ অসংখ্য অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজেট পর্যালোচনায় ২৫টি বিষয়ে আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিতও করেছে। চিহ্নিত এসব অনিয়মে ক্ষতি হওয়া টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি।
গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনা দল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেট পর্যালোচনাকালীন সময় ২৫টি বিষয়ে আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায়।
ইউজিসি বলছে, জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী তৃতীয় গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডে বেতন পাবেন না। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামানকে দ্বিতীয় গ্রেডে বেতন দিয়ে সরকারের বেতন স্কেলের ব্যত্যয় ঘটানোর পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। তাই অতিরিক্ত প্রদান করা অর্থ আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দিতে হবে। সরকারি আদেশ ও বাজেট পরিপত্র অনুযায়ী এক খাতের অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তর অথবা সমন্বয়ের সুযোগ নেই। কিন্তু জবি বাজেট বরাদ্দ হতে খাতে খাতে কম-বেশি করে সমন্বয় করেছে যা নিয়মের ব্যত্যয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভার, তবলা সঙ্গীতকারী, বাস হেল্পার নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ এসব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কোন সুযোগ নেই। সংশোধিত বাজেট প্রণোয়নের পূর্বেই কিছু খাতে মূল বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে অধিক অর্থ ব্যয় করায় অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। যা করার কোন সুযোগ নেই। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন বাধ্যতামূলক হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি অনুসরণ করেনি।
ইউজিসির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, জবিতে অতিরিক্ত হারে দায়িত্ব ভাতা প্রদান করা হয়। যা সরকারি বিধি লঙ্ঘন ও আর্থিক ক্ষতি। সরকারি বিধি অনুযায়ী অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ১টি দায়িত্বের জন্য বেসিক এর ১০ শতাংশ সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের সুযোগ আছে। বই ভাতার ক্ষেত্রেও অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বই ভাতা হিসেবে শিক্ষকদের প্রতিবছর ৩ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হয়। এটিও সরকারি বিধি লঙ্ঘন ও আর্থিক ক্ষতি। এ জন্য শিক্ষকপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দিতে বলেছে ইউজিসি।
ইউজিসি বলেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইউজিসির প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই দুটি মাইক্রোবাস ও একটি বাস কেনা হয়েছে। একই অর্থবছরে ইউজিসির বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও ১০টি বাস কিনে আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে জমা দিয়ে ইউজিসিকে জানাতে বলা হয়েছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু যানবাহন ভাড়ায় চালিত। কিন্তু সে বিষয়েও ইউজিসির অনুমোদন নেই। অথচ যেকোনো প্রকার ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম আছে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে ইউজিসি।
প্রশিক্ষণ ভাতার নীতিমালার বাইরে প্রশিক্ষণকালে ৬০০ টাকা হারে দৈনিক মজুরি বিল দিয়ে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। আবার অনিয়ম করে একই প্রশিক্ষণে একই ব্যক্তিকে অতিথি এবং অংশগ্রহণকারী দেখিয়ে উভয় ক্ষেত্রে সম্মানী দেওয়া হয়েছে। চালক ও হেলপারদের তদারকির জন্য ভাতা দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র চালক, সিনিয়র গার্ড পদ জনবল কাঠামোয় না থাকা সত্ত্বেও আপগ্রেডেশন দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মের ব্যত্যয় বলে মনে করে ইউজিসি।
শিক্ষকদের টোফেল, আইইএলটিএস, জিআরই পরীক্ষার ফি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আয়োজনকৃত কোর্সসমূহের পরীক্ষার ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিশোধ না করার জন্য অনুরোধ করেছে ইউজিসি।
জবি ভিসির দপ্তর, রেজিস্ট্রারের দপ্তরের একাডেমিক কাউন্সিল ও ব্যক্তিগত শাখার কর্মকর্তাগণকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সম্মানি প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠান উৎসবাদি ভাতা থেকে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া ইউজিসি বলছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বাজেট সেল নেই। এ জন্য বাজেট-সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, আমাকে যে দ্বিতীয় গ্রেড দেওয়া হয়েছে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস ও রেজল্যুশন ফলো করেই দেওয়া হয়েছে। আমার জানামতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও দ্বিতীয় গ্রেড পান।’
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর সাদেকা হালিম বলেন, যেসব আপত্তির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো তিনি যোগ দেওয়ার আগের ঘটনা। তবে কিছু আপত্তি সঠিক বলে তাঁর কাছেও মনে হয়েছে। তিনি আপত্তির বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের জরুরী মতবিনিময় সভা
উন্মুক্ত অনলাইন রিটার্ন সিস্টেম, দাখিল ২০ হাজার
চার হত্যা মামলায় ফের ৮ দিনের রিমান্ডে গোলাম দস্তুগীর গাজী
‘দ্রুত’ নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রবাসীদের নতুন এনআইডির আবেদন
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পুলিশ সংস্কারে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে না.গঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ আহত ১০
২১ দিনে ১ মাসের চেয়েও বেশি রেমিট্যান্সএলো
সোনারগাঁওয়ে নারীর লাশ উদ্ধার।
হঠাৎ অশান্ত ক্রীড়া পরিদপ্তর, ক্রীড়া অফিসারদের ধর্মঘটের ডাক
আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মনসুরুল হকের পদত্যাগের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে ছাত্র জনতার সড়ক অবরোধ
চবিতে একদিনেই ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেলেন ২৩ জন
মাদারীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত
না.গঞ্জে চাঞ্চল্যকর মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি
কালিয়াকৈরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ
ইসরাইলের রাফায়েল প্রতিরক্ষা কোম্পানিতে হামলা হিজবুল্লাহর
ঈশ্বরগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
খুলনার কয়রায় হরিণের মাংস উদ্ধার
নগদের বোর্ড স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে- গভর্নর
কুষ্টিয়ায় কাউন্সিলরসহ ৬ জনের জামিন,আদালতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব আশরোফা ইমদাদ