পুরাতন পদ্ধতি অবলম্বন করেই মশা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা
১২ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম
রাজধানীজুড়ে মশার রাজত্ব। কিছুতেই যেন কমছে না মশার প্রকোপ। মশার অসহনীয় যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।
বছরজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও এই মশা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই ব্যর্থ ভূমিকায় রয়েছে দুই সিটি। অতীতে বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে মশার উৎপাত বাড়লেও বর্তমানের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বছরজুড়েই চলে আসছে মশার রাজত্ব। এরই মধ্যে ঘরে-বাহিরে সবখানে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। তবে এই মশা নিয়ন্ত্রণে বাইরের দেশে অত্যাধুনিক পদ্ধতি থাকলেও তার ধারে কাছে হাঁটছে না নগর কর্তৃপক্ষ। পুরোতন পদ্ধতি অবলম্বন করেই মশা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছেন তারা। তবে কীটতত্ত্ববিদরা দুই সিটি করপোরেশনসহ নগরবাসীকে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নিজ নিজ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। নগরবাসীর অভিযোগ, লোক দেখানো মশা মারার কার্যক্রম করেই দায়িত্ব শেষ করে সিটি করপোরেশনের মশক কর্মীরা। আর এই কর্মীদের কাজের ঠিকমত তদারকি করারও কেউ নেই।
চলতি বছরে এডিস মশার প্রকোপ কমাতে দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনগুলোতে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ বরাদ্দের মধ্যে ডেঙ্গু মোকাবিলা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য ৩২ কোটি টাকা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়ের জন্য ৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের জনসচেতনতা বাড়াতে ও প্রচারণায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, দুই এক বছর আগেও এমন একটা সময় ছিল রাতে ঘুমানোর সময়ও মশারি লাগতো না। কিন্তু এখন যে অবস্থা বাসায় থাকলে দিন রাত সব সময় মশারির মধ্যে থাকতে পারলে ভালো হয়। মাঝে মধ্যে দেখি মশা মারার জন্য ফগার মেশিন নিয়ে আসে। কিন্তু এগুলো আসলে লোক দেখানো। এতে কোন কাজের কাজ হয় না। তারা নামমাত্র এসে একটু ধোঁয়া দিয়ে চলে যায়। আসলে তারা ঠিকমত কাজ করছে কিনা এটাও দেখার কেউ নেই।
মিরপুরের বাসিন্দা শরীফুল বলেন, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছে মানুষ। দিনের বেলায়ও কোথাও দাঁড়ানোর উপায়ও থাকে না। রুমের মধ্যে সবসময় মশারি টানিয়ে থাকতে পারলে ভালো হয়। মশার এমন উপদ্রব বেড়েছে যে চলন্ত অবস্থাতেও মশার আক্রমণের শিকার হতে হয়। বর্তামানে বছরজুড়ে ডেঙ্গুর উৎপাত থাকে। ডেঙ্গুর সিজন বাদেই সারা বছর যেভাবে ডেঙ্গু হচ্ছে- সিজনে এটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আমাদের কর্তৃপক্ষ যদি এখনই সচেতন না হয় তাহলে ভবিষ্যতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার রেকর্ড ছাড়াবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণটা বাড়ি বাড়ি ধরে করতে হবে। এডিসের লার্ভা ড্রেন বা নর্দমাতে জন্মায়। এজন্য ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণহলে মানুষের বাসাবাড়ি ও আপশেপাশে যে ছোট বড় পাত্র পরে থাকে যেগুলোতে এডিস লার্ভা জন্ম নেয় সেগুলো থেকেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। কিউলেক্স মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে মিলিয়ে ফেললে হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে শুধু সিটি করপোরেশন দেখভাল করবে এমন হলে হবে না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে বা সচেতন হতে হবে। বর্তমানে আমরা দেখি ফগার মেশিনের মাধ্যমে ধোঁয়া দিয়ে মশা মারা হয়। আসলে এটা কোন কার্যকারী পদ্ধতি না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের বছরব্যাপী নরমাল যে কার্যক্রম সেটা চালু থাকবে। দুইটা সাইড একটি হলো যেখানে মশার প্রডাকশন (জন্ম) যেখানে হয় সেটাকে ধ্বংস করা। আর আরেকটি হলো মশার জন্ম হয়ে গেলে সেটাকে মেরে ফেলা। মশার লার্ভাকে মেরে ফেলার যে কার্যক্রম সেটা অব্যাহত আছে। স্প্রের মাধ্যমে যেভাবে মশার লার্ভা ধ্বংস করি সেই কার্যক্রম চলমান আছে। আর প্রিভেন্টিভ যেটা, যেখান থেকে লার্ভার উৎপত্তি হয় সেখান ক্লিনিং ওয়ার্ক আমাদের চলছে। বিভিন্ন খাল নর্দমা জলাশয় আমরা পরিষ্কার করছি। সেখানে যাতে মানুষ আর ময়লা ফেলতে না পারে সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই মশার যেখানে প্রজনন ক্ষেত্র সেটা যদি কমে আসে তাহলে মশা অটোমেটিক্যালই কমে আসবে। আর ডেঙ্গুর জন্য কতগুলো পয়েন্ট আছে আমরা সেগুলো চিহ্নিত করেছি। সেই স্থানগুলোতে আমরা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গত বছরে আমাদের যে বেটার এক্সপেরিমেন্ট সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে তারা ইতিমধ্যে পর্যালোচনায় বসেছিলেন। পর্যালোচনা শেষে তারা আমাদের সুপারিশনামা দিয়েছেন। সেই আলোকে আমরা শিডিউল তৈরি করেছি এবং সেই শিডিউল মেনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ চলবে। বর্তমানে কিউলিক্স মশার সিজন চলছে। এরপর এডিস আসবে। এডিস নিয়ন্ত্রণে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে। ওষুধ সংগ্রহ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় হর্ন বাজানোয় নতুন নির্দেশনা
খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের জরুরী মতবিনিময় সভা
উন্মুক্ত অনলাইন রিটার্ন সিস্টেম, দাখিল ২০ হাজার
চার হত্যা মামলায় ফের ৮ দিনের রিমান্ডে গোলাম দস্তুগীর গাজী
‘দ্রুত’ নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রবাসীদের নতুন এনআইডির আবেদন
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পুলিশ সংস্কারে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে না.গঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ আহত ১০
২১ দিনে ১ মাসের চেয়েও বেশি রেমিট্যান্সএলো
সোনারগাঁওয়ে নারীর লাশ উদ্ধার।
হঠাৎ অশান্ত ক্রীড়া পরিদপ্তর, ক্রীড়া অফিসারদের ধর্মঘটের ডাক
আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মনসুরুল হকের পদত্যাগের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে ছাত্র জনতার সড়ক অবরোধ
চবিতে একদিনেই ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেলেন ২৩ জন
মাদারীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত
না.গঞ্জে চাঞ্চল্যকর মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি
কালিয়াকৈরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ
ইসরাইলের রাফায়েল প্রতিরক্ষা কোম্পানিতে হামলা হিজবুল্লাহর
ঈশ্বরগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
খুলনার কয়রায় হরিণের মাংস উদ্ধার
নগদের বোর্ড স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে- গভর্নর
কুষ্টিয়ায় কাউন্সিলরসহ ৬ জনের জামিন,আদালতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ