বড় রাজস্ব ঘাটতির মুখে সরকার
১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম
দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রা সঙ্কটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করে সিপিডি। সিপিডি বলেছে, ১০ থেকে ১১ বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এই ঘাটতি থাকবে; বছর শেষে তা ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। তারা আরও বলেছে, সরকারের বাজেট ঘাটতি কমেছে ঠিক, কিন্তু ঘাটতি নিরসনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে; এ ছাড়া রফতানি, রিজার্ভ, প্রবাসী আয়, বিদেশি বিনিয়োগসহ বহিস্থ খাতের প্রায় সবগুলো সূচকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে সিপিডি। গতকাল রাজধানীর সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, অর্থনীতি এখন বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যেমন রাজস্ব আহরণ ও বাজেট বাস্তবায়নে শ্লথগতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকে তারল্যের সঙ্কট, রফতানি, প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। এমন বাস্তবতায় আগামী বাজেট প্রণয়নে তিনটি বিষয়কে মূল লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। প্রথমত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া; দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া, যাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রাজস্ব আয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় করা সম্ভব হয় এবং তৃতীয়ত, দক্ষতার সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ব্যয় করা, যাতে অর্থের অপচয় না হয়। বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, এমন একটা সময় বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট, বাজেট বাস্তবায়নে নিন্ম ও স্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিন্মগামী এবং রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যেটা আমরা দেখতে চাই বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিন্ম মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেটা নেই। বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটোই। তিনি বলেন, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেটই হবে কীভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়, সেটা বড় বিষয়। যেমন-গত ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্তি মাত্র ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আমরা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, তাহলে বাকি ৬ মাসে রাজস্ব আহরণে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বিগত দিনের ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায় রাজস্ব ঘটতি আগের মতোই চলমান থাকবে। যার পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছি।
অন্যদিকে সরকারি ব্যয়ে সংযম লক্ষ্য করছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ দেখতে পাচ্ছি। গত বছরে ২৭ শতাংশের মতো ছিল। যেখান থেকে আরও কমেছে। নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থা ও আইএমএফ পরামর্শে ব্যয় কমেছে। ওই সময় বাজেট ঘাটতি বেশ কমেছে, বাজেট ঘাটতি ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরের এই সময়ে ঘাটতি ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি পূরণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহর ও গ্রামে দুটোই জায়গায় বেশি ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ খুব বেশি প্রভাবে ফেলতে পারিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি কমানো ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তা বাস্তবায়নে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কেউ বাজারকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে সাত দিনে ৫০ কোটি টাকা লাভ করতে পারলে ৫০ লাখ বা ১ কোটি টাকা জরিমানা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। সে জন্য বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে এবং তা দৃশ্যমান হতে হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার ঘটনা ইতিবাচক। ব্যাংকগুলো দুর্বল হওয়ার পেছনে বাস্তব কারণ ছিল। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চতুর্থ প্রজন্মের এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের অভাব ছিল দৃশ্যমান। যেসব কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে, সেসব কারণগুলো আমলেও নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা না করে শুধু একীভূত করা হলে কার্যকর কিছু হবে না। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার আরেকটি গতানুগতিক বাজেট করতে যাচ্ছে। কারণ নতুন সরকার ও তার মন্ত্রীদের মধ্যে উৎসাহের ঘাটতি রয়েছে বলেও জানান তিনি। ড. মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন সরকার এসেছে। এই সরকার তার প্রথম ১০০ দিনের ভেতরে রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে আমরা নতুন সরকারের যে কর্মচাঞ্চল্য ও লক্ষ্যভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি, দুই/একটা মন্ত্রণালয় বাদ দিলে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের সেই ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এমনকি মন্ত্রীদের ভেতরে খুব বেশি উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি না। যদিও অনেক মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় এসেছেন। দুই/একজন মন্ত্রী বাদ দিলে অধিকাংশ মন্ত্রীর কার্যক্রম গতানুগতিক।
তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে সরকারি প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সেই ধরনের দুই/একটি উদ্যোগ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ দেখছি না। নতুন সরকার অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া বা মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারবে, পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিকে বেগবান করতে পারবে- তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, এনবিআর, বিডা, সিটি করপোরেশন, বিইআরসি, এসবের প্রত্যেকটি বিভাগে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগকে এক ধরনের জবাবদিহির মধ্যে আনা দরকার। এ ছাড়া সংসদে বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যদের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান