দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভারত পাশে ছিল বলেই বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ভারত পাশে ছিল বলেই বাংলাদেশের নির্বাচনে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। এ ছাড়া গায়ে পড়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ততা করে তিস্তাসহ কোন সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় বলেও এ সময় উল্লেখ করেছেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী। ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধেও মত দেন তিনি।

গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূূজা উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দেয়াল ছিল তা ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো বলে সিট মহল বিনিময় ৬৮ বছরের যে সমস্যা তার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন। তিস্তা সহ অভিন্ন নদীর পানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর সমাধানও অবশ্যই হবে, ধৈর্য ধারণ করতে হবে। গায়ে পড়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ততা করে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামাজিক মাধ্যমে যে ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন এটি সমীচীন নয়। প্রশ্ন রাখেন ভারত বিরোধী মনোভাব কেন জাগ্রত করার চেষ্টা করা হচ্ছে? যারা নির্বাচনে আসেনি এটি তাদের অপপ্রচারে একটা ঢাল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ভারত বিরোধীতায় লিপ্ত হয় একটি মহল। এখনো তারা সেটি করছে।

বাজারে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট কি ভালো? সরকার কেন সিন্ডিকেটকে সমর্থন করবে? সিন্ডিকেট যে বা যাহারা করুক এর সূত্র খুঁজতে হবে। প্রকৃত সত্য বের করতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এখানে সক্রিয় আছে। সংকট সমাধানের যোগ্য নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই সকলকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানর ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক।

মাইনোরিটি (সংখ্যালঘু) ভাবনাটাই দাসত্বের শেকল। দেশের সনাতন ধর্মালম্বীদের উদ্দেশ্যে বলেন ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, এই দাসত্বের শেকল ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তিনি আরো বলেন, দাসত্ব কেন করবেন? মুসলমানের ভোট আপনার ভোটের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? কোনো ভোটের মূল্য বেশি; কোনো ভোটের মূল্য কম এমনটা কি আছে? আমাদের সংবিধান কি এ কথা বলে? তাহলে আপনারা নিজেরা কেন মাইনোরিটি কমপ্লেক্সে ভুগবেন?

ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা এ দেশের নাগরিক। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশের স্বাধিকার, স্বাধীনতার সংগ্রামে মুসলমানদের পাশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব বাঙ্গালির অবদান আছে। কারো অবদান কম নয়।
কিছু লোক আছে যাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে তাদের বিষয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীদের সম্পত্তি, মন্দির এই সব স্পর্শকাতর বিষয়ে যারা তাদের মনে কষ্ট দেন এইসব লোকের রাজনৈতিক পরিচয় যদিও থাকে তাদের আসল পরিচত এরা হচ্ছে দুর্বৃত্ত। এরা হিন্দুদের বাড়ি দখন মন্দির ভাঙ্গচুর করে। এরা আমাদের সকলের শত্রু।

এ সময় শেখ হাসিনার সরকারকে সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার হিসেবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন আছে ততদিন পাশে আছে। আওয়ামী লীগ আগেও পাশে ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে। অন্য দল ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের মতো আবার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

এর আগে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্র্রনাথ পোর্দ্দারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার সামন্ত লাল সেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্তসহ সনাতন ধর্মের অন্যান্য নেতারা।