ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

‘গরুর গোশত কেনার মুরোদ নাই শার্ট-প্যান্ট পরে ভাব দেখায়’

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৬ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৬ এএম

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন আমিনুল ইসলাম। স্ত্রী-দু সন্তান নিয়ে রাজধানীর কদমতলীর শনির আখড়ায় থাকেন। বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল আর বিদ্যুৎ বিল দিতে চলে যায় ১৮ হাজার টাকা। গত শুক্রবার গোবিন্দগঞ্জ (শনির আখড়ায়) বাজারে সংসারের সদাই কিনতে এসে তীব্র অস্বস্তিতে পড়েন আমিনুল। সার্টপ্যাণ্ট পড়েই বাজারে প্রথমে ফার্মের মুরগির গিলা-কলিজি-পা-চামড়ার বিক্রির দোকানে যান। দুইশ টাকা কেজি দরে এক কেজি গিলা কলিজি কিনে যান পাশের গরুর গোশতের দোকানে। ছেলেমেয়ের জন্য আধাকেজি গরুর গোশত ক্রয় করবেন। কিন্তু দোকানদারের কাছে আধা কেজি গোশত ক্রয়ের কথা বলেন। কিন্তু কসাই আধা কেজি গোশত বিক্রি করতে রাজী হচ্ছে না। ৫ কেজি গোশত কিনেছেন এমন একজন সুপারিশ করায় কসাই আধা কেজি গোশত দিতে রাজী হন। কিন্তু আমিনুল পছন্দ করে একটি গোশত দিতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন কসাই। আমিনুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক কেজি গোশত কেনার মুরোদ নাই, শার্ট-প্যান্ট পরে ভাব দেখাতে আইছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান আমিনুল। অতপর গোশত না কিনেই কসাইয়ের দোকান ত্যাগ করেন।

জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বাসায় চাল, তেল শেষ। দোকানি পোলট্রি মুরগির কেজি ২৩০ টাকা চাওয়ায় ২০০ টাকা দিয়ে মুরগির গিলা-পা এক কেজি কিনেছি। মেয়েটা বায়না ধরেছিল সেহেরিতে গরুর গোশত খাবে। তাই আধা কেজি গোশত নিতে এসেছিলাম। প্রথমে আধা কেজি গোশত বিক্রি করতে রাজী হয়নি; পরে যখন রাজি হলো তখন আধা কেজি গোশতের বেশির ভাগ হাড় ও চর্বি দিচ্ছে। ভাই একটু দেখে দেবেন বলায় দোকানি বলে উঠলো, ‹এক কেজি গোশত কেনার মুরোদ নাই, শার্ট-প্যান্ট পরে ভাব দেখাইতে আইছে।’ কথাটা এখনও আমার কানে বাঁজছে।

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন মধ্য ও নিম্নবিত্তদের জীবন। টাকার সংকটে পণ্য কিনতে এসেও অসৎ ব্যবসায়ী, মাছ বিক্রেতা ও কসাইদের অবহেলা ও কটুকথার শিকার হতে হচ্ছে। শুধু আমিনুল ইসলাম নন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সব পণ্যই নাগালের বাইরে। দামের এই ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয় ধরতে হাঁসফাঁস অবস্থা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে বিপণিবিতান, সবখানে জীবন দুর্বিষহ। তবু সংসার চালাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা ছাড়া উপায় নেই। আবার চাহিদা বেশি থাকলেও প্রয়োজনীয় পণ্য অল্প পরিমাণে কিনতে বাজারে যান অনেকে। অল্প পণ্য কিনে কোনোভাবে পরিবার চালান তারা। কিন্তু এই অল্প পণ্য কিনতে এসেও অবহেলা ও কটুকথার শিকার হতে হচ্ছে মধ্য ও নিম্নবিত্তদের।

যাত্রাবাড়ি বাজারে দেখা গেছে, শরিফা বেগম অনেকক্ষণ ধরে ফল বিক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। অনেকক্ষণ পর ২৫০ গ্রাম কালো আঙুর ৯০ টাকায় দিতে রাজি হন দোকানদার। কিন্তু যখনই মাপতে গেলেন, তখনই ঘটে বিপত্তি। দোকানদার তাকে আঙুর না দিয়ে অন্য ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম শুরু করেন। শুরু হয় কথা-কাটাকাটি। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই জাহানারা বেগম বলেন, আমার পরে তিন জন আঙুর কিনতে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজন দুই কেজি করে, আরেকজন এক কেজি আঙুর কিনলেন। আমি আগেই দোকানদারকে এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) আঙুর দিতে বললাম। দোকানদার আমাকে উপেক্ষা করে পরের তিন জনকে আঙুর দিলো। জানতে চাইলে সে আমাকে বললো, ‘আপনার তো কম, আপনি একটু দাঁড়ান, স্যারগোরে আগে দিয়ে দিই।’ তখন আমি বললাম, আমার একটু তাড়া আছে, আমি আগে এসেছি, আমাকে আগে দেন। দুবার বলার পর দোকানদার আমাকে ধমকের সুরে বললো, ‘আরে আপা একটু ধৈর্য ধরেন, নয়তো অন্যদিকে যান। আপনার অল্প জিনিসের জন্য কি আমি দামি কাস্টমার হারাবো?’ ক্ষোভ জানিয়ে শরিফা বেগম বলেন, আমি কি ফ্রিতে দোকানদারের কাছে আঙুর চেয়েছি? ছোট মেয়ের কথা মনে করে খানিকটা অপেক্ষা করে তারপর আঙুর নিলাম। আরেক ক্রেতা মনসুরা বেগম বলেন, বাজারে এসেছি মাছ কিনতে। সব মাছের দাম জিজ্ঞেস করলাম। দেখলাম হিসাবে মিলছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই দাম বেশি মন্তব্য করে এই গৃহিণী বলেন, তেল, পেঁয়াজ এক পোয়া বা আধা কেজি কিনতে গেলে দোকানদার মুখের দিকে তাকায়, তারপর অবজ্ঞা সুচক বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে। আর যদি দোকানে কাস্টমার বেশি থাকে, তাহলে সবার শেষে সদাই দেয়। টাকা দিয়ে পণ্য কেনার পরও প্রতিনিয়তই আমাদের এমন কটুকথা শুনতে হয় শুধু পরিমাণ অল্প বলে। একটা বিষয় লক্ষ করলাম, যারা ভিক্ষা করে দোকানে দোকানে, তাদের সঙ্গে আরো সুন্দর ও সাবলীল কথা বলে দোকানিরা। আমরা অল্প জিনিস কিনতে গেলেই নাক সিটকায়।

মনসুরা বেগমের মতো এমন অসংখ্য মানুষ অল্প পণ্য কিনতে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে কটুকথার শিকার হন, হয়তো হতেও হবে। নিত্যদিনের এসব ঘটনায় কষ্টে থাকা মানুষ ঝগড়া না করে নীরবে সহ্য করে চলে যান।
প্রতিনিয়ত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের এমন অল্প পরিমাণে পণ্য কিনতে এসে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়। অবশ্য দোকানদাররা এই বিষয়টিকে অস্বীকার করে অন্যভাবে উপস্থাপন করছেন। তাদের দাবি, অল্প কিনুক আর বেশি কিনুক, সবাই আমাদের জন্য ক্রেতা। তবে ক্ষেত্রবিশেষে দোকানের স্টাফরা কিছুটা বিপত্তি ঘটায় বলে স্বীকার করেছেন দোকানদাররা।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ও সিন্ডিকেটের কাছে সরকার জিম্মি বলে প্রতিনিয়তই সরকারকে উপহাস করছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। তবে সরকারদলীয় লোকজনও জোর দাবি জানাচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু কোনো ভাবেই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকার ২৯ টি পণ্যের দাম বেধে দিলেও কেউ তা কার্যকর করছে না। শুধু তাই নয় সরকার দাম বেধে দিয়ে দায় সেরেছে। ভোক্তা পর্যায়ে দাম কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

গরমের সাথে বাড়ছে লোডশেডিং
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি আড়াই হাজার মেগাওয়াট বন্ধ ৯টি ইউনিট : জনজীবনে দুর্ভোগ : বিঘ্নিত শিল্প কারখানায় উৎপাদন স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ কর্মসংস্থান
রফিকুল ইসলাম সেলিম
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গরমের তীব্রতার সাথে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। গ্যাস ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না সব বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার পানি সঙ্কট আর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছোটবড় নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এতে পবিত্র মাহে রমজানে রোজাদারদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তীব্র গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে বিদ্যুতের বিরাট ঘাটতি এই অঞ্চলের শিল্প কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ এখন পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। অব্যাহত ডলার সঙ্কটের কারণে কমেছে এলএনজি আমদানি। তাতে চট্টগ্রামে মোট চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ মিলছে। এতে গ্যাসনির্ভর ভারী, মাঝারিসহ সবধরনের কলকারখানার উৎপাদনে রীতিমত ধ্বস নেমেছে। তার উপর বিদ্যুতের আসা যাওয়া শিল্প কারখানার উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

বিকল্প জ্বালানিতে উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন শিল্প কারখানা মালিকেরা। বাড়ছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের উপর তা প্রভাব পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে বিদ্যুৎনির্ভর ছোটখাট কলকারখানা। গ্রামের কৃষি, গবাদি পশুর খামারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেচের অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চলমান বোরো আবাদ।
অব্যাহত গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন স্থবির হওয়ার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগও হচ্ছে না। বিদ্যমান কলকারখানায় নতুন ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। আবার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও থমকে আছে। অথচ বিনিয়োগ আকর্ষণে বিগত দেড় দশকে এই অঞ্চলে সড়ক অবকাঠামো তথা যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কটের কারণে কাঙ্খিত বিনিয়োগ আসছে না।

তাতে নতুন কর্মসংস্থান না হওয়ায় বেকারত্ব বাড়ছে। আবার হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের সুফলও মিলছে না। অব্যাহত গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের পাশাপাশি বৈশ্বিক মন্দার কারণে রফতানিমুখি শিল্প কারখানা চরম সঙ্কটে পড়েছে। রফতানি কমে যাওয়ায় তৈরি পোশাকসহ শতভাগ রফতানিমুখি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা লোকসানের মুখে পড়ে শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। তাতে বেকারত্ব বাড়ছে। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আর্থ-সামাজিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে নগর, মহানগর থেকে গ্রামীণ জনপদে গ্রাহকেরা ত্যক্ত-বিরক্ত, ক্ষুদ্ধ। নগরীতে দফায় দফায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা আরো বেশি শোচনীয়। সামনে ঈদ, ক্রেতার প্রত্যাশায় মার্কেট বিপণী বিতানের ব্যবসায়ীরা হরেক পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে প্রত্যাশিত ক্রেতা মিলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিগত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। অথচ এর কোন সুফল মিলছে না।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৪০৪ মেগাওয়াট। সবকটি কেন্দ্র চালু রাখা গেলে সক্ষমতার চেয়ে কিছুটা কম চার হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলে। কিন্তু গ্যাস, জ্বালানি তেল আর পানি সঙ্কটের কারণে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে সচল রাখা যাচ্ছে না। আবার যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেও বন্ধ আছে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। জ্বালানি সাশ্রয় করতে দিনের বেলায় গ্যাস ও তেলনির্ভর কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে কিছু সময়ের জন্য এসব কেন্দ্র চালু রাখা হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির সর্বশেষ উৎপাদন বিবরণী থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনের বেলায় এক হাজার ৪২৭ মেগাওয়াট এবং পিক আওয়ারে এক হাজার ৭৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এই হিসাবে উৎপাদন ঘাটতি দিনের বেলায় দুই হাজার ৫৬৩ মেগাওয়াট।

গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট বন্ধ। একই কারণে বন্ধ শিকলবাহা ১৫০ ও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র। কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ মহাপ্রকল্পে নাম মাত্র উৎপাদন হচ্ছে। এই প্রকল্পের ৫টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। সারাদিন বন্ধ রেখে রাতের বেলায় কিছু সময়ের জন্য চালু রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

চট্টগ্রামে গ্যাসের পাশাপাশি ফার্নেস অয়েল চালিত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও খরচ কমাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে। গড়ে ছোটবড় মিলিয়ে ৯ থেকে ১২ কেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে নানা কারণে। তাতে উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি বিরাট অংশ জাতীয় গ্রিড হয়ে সারা দেশে সরাবরাহ করা হয়। কারণ দেশের অন্য অঞ্চলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন নানা কারণে কমে গেছে। পিডিবির সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয় ২৫ হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট। তবে বিগত ১৪ মার্চ সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে দিনের বেলায় ১১ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট এবং পিক আওয়ারে ১২ হাজার ৬২১ মেগাওয়াট।

উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় সারা দেশেই বিদ্যুতের সঙ্কট চলছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট। পবিত্র রমজানের কারণে এই চাহিদা আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের সঙ্কট জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা বলছে, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে পানি উৎপাদন ও পরিশোধন বিঘ্নিত হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে পানির নিন্মমুখি চাপ কমে গেছে। তাতে জোয়ারের সময়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে অতিমাত্রায় লোনা পানি প্রবেশ করছে। পানির উৎসে লবণ পানি প্রবেশ করায় ওয়াসার পানিতেও লবণ ছড়িয়ে পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত লবণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। আর তাই লবণাক্ততা এড়াতে ওয়াসার পরিশোধন কেন্দ্রে জোয়ারের সময় পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে না। আবার ভাটার সময় পানি সংগ্রহ করতে গেলে পানির সাথে ময়লা আর্বজনা ও শেওলা উঠে আসছে।

এসব কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন ও পরিশোধ দিনে ছয় থেকে সাত কোটি লিটার কম হচ্ছে। তাতে নগরজুড়ে পানির হাহাকার চলছে। রেশনিং করে পানি সরবরাহ করায় অনেক এলাকায় নিয়মিত তো দূরের কথা কয়েকদিনেও পানি মিলছে না। ওয়াসা থেকে দূরবর্তি এবং নগরীর উচু এলাকাগুলোতে পানি সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার গভীর নলকূপগুলো চালু করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে এসব নলকূপও পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ