গরমের সাথে বাড়ছে লোডশেডিং
১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২১ এএম
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গরমের তীব্রতার সাথে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। গ্যাস ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না সব বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার পানি সঙ্কট আর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছোটবড় নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এতে পবিত্র মাহে রমজানে রোজাদারদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তীব্র গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে বিদ্যুতের বিরাট ঘাটতি এই অঞ্চলের শিল্প কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ এখন পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। অব্যাহত ডলার সঙ্কটের কারণে কমেছে এলএনজি আমদানি। তাতে চট্টগ্রামে মোট চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ মিলছে। এতে গ্যাসনির্ভর ভারী, মাঝারিসহ সবধরনের কলকারখানার উৎপাদনে রীতিমত ধ্বস নেমেছে। তার উপর বিদ্যুতের আসা যাওয়া শিল্প কারখানার উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।
বিকল্প জ্বালানিতে উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন শিল্প কারখানা মালিকেরা। বাড়ছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের উপর তা প্রভাব পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে বিদ্যুৎনির্ভর ছোটখাট কলকারখানা। গ্রামের কৃষি, গবাদি পশুর খামারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেচের অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চলমান বোরো আবাদ।
অব্যাহত গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন স্থবির হওয়ার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগও হচ্ছে না। বিদ্যমান কলকারখানায় নতুন ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। আবার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও থমকে আছে। অথচ বিনিয়োগ আকর্ষণে বিগত দেড় দশকে এই অঞ্চলে সড়ক অবকাঠামো তথা যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কটের কারণে কাঙ্খিত বিনিয়োগ আসছে না।
তাতে নতুন কর্মসংস্থান না হওয়ায় বেকারত্ব বাড়ছে। আবার হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের সুফলও মিলছে না। অব্যাহত গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের পাশাপাশি বৈশ্বিক মন্দার কারণে রফতানিমুখি শিল্প কারখানা চরম সঙ্কটে পড়েছে। রফতানি কমে যাওয়ায় তৈরি পোশাকসহ শতভাগ রফতানিমুখি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা লোকসানের মুখে পড়ে শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। তাতে বেকারত্ব বাড়ছে। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আর্থ-সামাজিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে নগর, মহানগর থেকে গ্রামীণ জনপদে গ্রাহকেরা ত্যক্ত-বিরক্ত, ক্ষুদ্ধ। নগরীতে দফায় দফায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা আরো বেশি শোচনীয়। সামনে ঈদ, ক্রেতার প্রত্যাশায় মার্কেট বিপণী বিতানের ব্যবসায়ীরা হরেক পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে প্রত্যাশিত ক্রেতা মিলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিগত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। অথচ এর কোন সুফল মিলছে না।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৪০৪ মেগাওয়াট। সবকটি কেন্দ্র চালু রাখা গেলে সক্ষমতার চেয়ে কিছুটা কম চার হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলে। কিন্তু গ্যাস, জ্বালানি তেল আর পানি সঙ্কটের কারণে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে সচল রাখা যাচ্ছে না। আবার যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেও বন্ধ আছে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। জ্বালানি সাশ্রয় করতে দিনের বেলায় গ্যাস ও তেলনির্ভর কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে কিছু সময়ের জন্য এসব কেন্দ্র চালু রাখা হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির সর্বশেষ উৎপাদন বিবরণী থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনের বেলায় এক হাজার ৪২৭ মেগাওয়াট এবং পিক আওয়ারে এক হাজার ৭৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এই হিসাবে উৎপাদন ঘাটতি দিনের বেলায় দুই হাজার ৫৬৩ মেগাওয়াট।
গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট বন্ধ। একই কারণে বন্ধ শিকলবাহা ১৫০ ও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র। কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ মহাপ্রকল্পে নাম মাত্র উৎপাদন হচ্ছে। এই প্রকল্পের ৫টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। সারাদিন বন্ধ রেখে রাতের বেলায় কিছু সময়ের জন্য চালু রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
চট্টগ্রামে গ্যাসের পাশাপাশি ফার্নেস অয়েল চালিত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও খরচ কমাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে। গড়ে ছোটবড় মিলিয়ে ৯ থেকে ১২ কেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে নানা কারণে। তাতে উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি বিরাট অংশ জাতীয় গ্রিড হয়ে সারা দেশে সরাবরাহ করা হয়। কারণ দেশের অন্য অঞ্চলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন নানা কারণে কমে গেছে। পিডিবির সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয় ২৫ হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট। তবে বিগত ১৪ মার্চ সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে দিনের বেলায় ১১ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট এবং পিক আওয়ারে ১২ হাজার ৬২১ মেগাওয়াট।
উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় সারা দেশেই বিদ্যুতের সঙ্কট চলছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট। পবিত্র রমজানের কারণে এই চাহিদা আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের সঙ্কট জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা বলছে, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে পানি উৎপাদন ও পরিশোধন বিঘ্নিত হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে পানির নিন্মমুখি চাপ কমে গেছে। তাতে জোয়ারের সময়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে অতিমাত্রায় লোনা পানি প্রবেশ করছে। পানির উৎসে লবণ পানি প্রবেশ করায় ওয়াসার পানিতেও লবণ ছড়িয়ে পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত লবণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। আর তাই লবণাক্ততা এড়াতে ওয়াসার পরিশোধন কেন্দ্রে জোয়ারের সময় পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে না। আবার ভাটার সময় পানি সংগ্রহ করতে গেলে পানির সাথে ময়লা আর্বজনা ও শেওলা উঠে আসছে।
এসব কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন ও পরিশোধ দিনে ছয় থেকে সাত কোটি লিটার কম হচ্ছে। তাতে নগরজুড়ে পানির হাহাকার চলছে। রেশনিং করে পানি সরবরাহ করায় অনেক এলাকায় নিয়মিত তো দূরের কথা কয়েকদিনেও পানি মিলছে না। ওয়াসা থেকে দূরবর্তি এবং নগরীর উচু এলাকাগুলোতে পানি সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার গভীর নলকূপগুলো চালু করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে এসব নলকূপও পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ