সোমালি নৌদস্যুদের ধীরে চলো কৌশল
১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৩ এএম
সোমালিয়ার নৌদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে মুক্ত করে আনার উপায় খুঁজছে জাহাজটির মালিকপক্ষ। দস্যুরাও মুক্তিপণ আদায়ে ধীরগতি অবলম্বন করছে। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেখানে জিম্মি নাবিকেরা। জাহাজ ছিনতাইকারী দস্যুদের ভারি অস্ত্রের মুখে তাদের রাতদিন কাটছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের উপর কোন শারীরিক নির্যাতন করা না হলেও মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়েছেন। নির্দিষ্ট স্থানে তাদের রাখা হয়েছে। সশস্ত্র দস্যুদের কথামতো সবকিছু করতে হচ্ছে। তাদের নাওয়া খাওয়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। জাহাজটি নিজেদের দখলে নেওয়ার পর থেকে তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোনসহ যোগাযোগের সব ডিভাইস দস্যুরা কেড়ে নিয়েছে। এরফলে পরিবারের সদস্যদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারছে না নাবিকেরা। তাদের প্রতিটি ক্ষণ কাটছে চরম আতঙ্কে। কবে নাগাদ এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি মিলবে তাও অনিশ্চিত। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল জাহাজটি নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার পর দস্যুরা কিছুটা সহনশীল হবে। তারা নাবিকদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই হচ্ছে। তারা মুক্তিপণ আদায়ের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে। ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের অভিযান টহল ও নজরদারির কারণে দস্যুরা চাপে রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ৫৫ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে দস্যুরা। মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথেই এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করা হয়।
এরপর জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলীয় এলাকায় নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাজটি দস্যুদের ডেরায় নিয়ে যাওয়ার পর জাহাজের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের সাথে জাহাজের মালিক পক্ষের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয় দস্যুরা। তবে অন্য কোন নাবিককে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতে জিম্মি নাবিকদের মতো তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। অপহরণকারী দস্যুদের সাথে মালিক পক্ষের এখনো সরাসরি কোন যোগাযোগ হয়নি। ফলে মুক্তিপণ নিয়ে তাদের সাথে সরাসরি কোন আলোচনা শুরু করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন সাধারণত ছিনতাই করা জাহাজ নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মুক্তিপণ নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে কথাবার্তা শুরু করে দস্যুরা । এরপর মুক্তিপণের অংক নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়। তবে এবার এখনো এমন কিছু হয়নি। বলা হচ্ছে জাহাজ এবং তাতে জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্ত করে আনতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ চলছে। দস্যুদের সাথে সরাসরি কথা না হলে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে যাদের ভূমিকা থাকে তাদের সাথে যোগাযোগ চলছে। জানা গেছে এ ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি মূল ভূমিকা পালন করছে।
জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাব বলেন, এখনো সোমালি দস্যুদের সাথে আমাদের কথা হয়নি। আমরা তাদের কাছ থেকে সাড়া পাব সেই অপেক্ষায় আছি। তাদের সাথে যোগাযোগ হলে তাদের চাহিদা পূরণের যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। তবে অন্য চ্যানেলে আমাদের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তিন বলেন, নাবিকদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার রাতে একজনের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন তারা অক্ষত অবস্থায় আছেন, সুস্থ আছেন। খাবার এবং পানির মজুদ এখনো স্বাভাবিক আছে। তবে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা তাদের দ্রুত মুক্ত করে আনতে যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করছি। কৌশলগত কারণে সব কিছু প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এদিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ ছাড়াও ভারত মহাসাগরে একের এক নৌযান ছিনতাইয়ে ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর টহল, অভিযান এবং নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও কোণঠাসা অবস্থায় আছে দস্যুরা। এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করার পর নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধ জাহাজ তার পিছু নেয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর এসেছে এসময় সোমালি দস্যুদের সাথে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে দস্যুরা বাংলাদেশি নাবিকদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ওই জাহাজ দুটিকে দুরে সরে যেতে বলে।
এমভি আবদুল্লাহর ঘটনার প্রতি নজর রাখছেন এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমালিয়ার উপকূলীয় এলাকায় অগ্রসর হওয়ার সময় ইউরোপ আর ভারতীয় দুটি নেভির যুদ্ধজাহাজ সোমালিয়ার দস্যুদের থামতে বলেছে, ওয়ার্নিং দিয়েছে, ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলেছে আর আশপাশে পানিতে গোলাগুলি করেছে। কিন্তু দস্যুরা নির্বিকার ছিল এবং ওদের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি। এ সময় দস্যুরা মনে করেছিল বাংলাদেশের নাবিকরা ওদেরকে ডেকে এনেছে। তাই ওরা কিছুটা রাগ করে সবাইকে ব্রিজে ডেকে বন্দুকের মুখে রেখেছিল। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন বাংলায় রেডিওতে ভারতীয় নেভিকে দূরে সরে যেতে বললে, পরিস্থিতি শান্ত হয়। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ