তীব্র যানজটে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরী। পবিত্র মাহে রমজানেও সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। তাতে প্রধান সড়কের বিশাল অংশে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ঈদ সামনে রেখে রাস্তায় বৈধ অবৈধ রিকশা, টমটম, ব্যাটারি চালিত রিক্সাসহ ছোট যানবাহনের ঢল নেমেছেন। ফুটপাত সেইসাথে সড়ক দখল করে বসেছে হকারদের পসরা। নির্মাণ সামগ্রী রেখে রাস্তা দখল এখন অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। ট্রাফিক আইন মানছে না কেউ। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে তোলা হয় যাত্রী। সড়কে অবৈধ টার্মিনাল, টেম্পো স্টেশন। সড়কের দুপাশ দখল করে চলছে গাড়ি পার্কিং। মহানগরীতে এমনিতেই পর্যাপ্ত সড়ক নেই। তার উপর রাস্তা দখলের কারণে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে নিত্য যানজটের কবলে পড়ছে হচ্ছে নগরবাসী। অসহনীয় যানজট জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে চরম বিশৃঙ্খলায় আমদানি রফতানি এবং ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। রাস্তায় আটকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে ছিল তীব্র যানজট। বিশেষ করে ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ হয়ে টাইগার পাস এবং ওয়াসা থেকে মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত মুল সড়ক যানজটে অচল ছিল দিনভর। এল প্রভাবে অন্য সড়কগুলোতে যানজট বিস্তৃত হয়। দুপুরে সরেজমিন দেখা যায় নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং থেকেই প্রধান সড়কে হাজার হাজার যানবাহন আটকে আছে। ইপিজেড, সল্টগোলা ক্রসিং, কাস্টমস মোড়, বন্দর নিমতলা বিশ্বরোড, ফকিরহাট, বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ান হাট, টাইগার পাস থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত পুরো সড়কে গাড়ি চলে থেমে থেমে। ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ আসতেই দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। চালকেরা বলছেন এমন তীব্র যানজট নিকট অতীতে দেখা যায়নি। বন্দরমুখি সব সড়ক অচল ছিল সারা দিন।

এছাড়া পোর্ট কানেকটিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, মাঝির ঘাট সড়ক, ডিটি রোড়, জাকির হোসেন রোড, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, স্টেশন রোড, বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে কালুরঘাট সেতু, বহদ্দারহাট থেকে রাহাত্তার পুল হয়ে কর্ণফুলী সেতু, মেরিনার্স রোড সর্বত্রই যানজট ছড়িয়ে পড়ে। যানজটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় নগরবাসীকে। রোজাদারদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতির কারণে এমন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিমান বন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে বিগত ২০১৯ সাল থেকে। গত নভেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। তবে এখনো শুরু হয়নি যানবাহন চলাচল। বন্দর নিমতলা বিশ্বরোডের মাথায় এক বছর ধরে চলছে এক্সপ্রেসওয়ের ওঠানামার সড়ক নির্মাণ কাজ। এ কাজের জন্য সড়কের বিরাট অংশ দখল করে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। তাতে সেখানে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। একই চিত্র নগরীর টাইগার পাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তে ওঠানামার পথ নির্মাণের জন্য চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। রাস্তা দখলে নিয়ে ফাইলিং চলছে। সরু পথে চলতে গিয়ে যানবাহন আটকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। আশপাশের সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে যানজট। এমন বেহাল অবস্থা এক বছরের বেশি সময় ধরে। নগরীর আরো কয়েকটি সড়কে চলছে সংস্কার কাজ। এরফলে এসব সড়কে বিশৃঙ্খলায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। মাহে রমজানকে সামনে রেখে রোজাদারদের দুর্ভোগ লাঘবে বেশ কিছু উদোগ নেয় সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। যানজট নিরসনে নগরীর নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় হকার উচ্ছেদ করে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর এই উদোগ প্রশংসিত হয়। কিন্তু কিছু দিন যেতেই ফের বেদখল হয়ে গেছে ফুটপাত এবং সড়ক। আগ্রাবাদ এলাকায়ও একই চিত্র। হকারেরা ফের রাস্তায় বসে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের মদদেই হরকারেরা রাস্তা দখল করছে। এরফলে ওইসব এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রমজানে পরিস্থিতি সামাল দিতে রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের সাথে থানা পুলিশও যানজট নিরসনে কাজ করছে। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।