ঋণ জালিয়াতির একটি মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: তানভীর মাহমুদ এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী সেজমিন ইসলামহ সহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ১ নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো: আবুল কাশেম এ রায় দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি রায়ে তানভীর মাহমুদ ও জেসমিন ইসলামকে ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতারণার একটি ধারায় তাদের ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুর হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহম্মেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগণ গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আব্দুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সাবেক জিএম ননী গোপাল নাথ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিএমডি মাইনুল হক, উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো: সফিজউদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হাসান খান ও সোনালী ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখার সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মেরীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, হলমার্কের ঘটনা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুর মতো সাজা হওয়া উচিৎ মর্মে অত্র আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।
আদালত তার রায়ে সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান মো: জামাল উদ্দিন সরকারকে এক ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণল্ড দেয়া হয়েছে।আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ ধার্য রেখেছিলেন। কিন্তু ওইদিন রায় থেকে মামলাটি উত্তোলন করে আরো দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে গত ১২ মার্চ আদালত দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য গতকাল মঙ্গলবার তারিখ ধার্য রাখেন।

উল্লেখ্য, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস নামে ভুয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান Íর করা হয়। পরবর্তী এ অর্থ তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন তুলে নেন।

২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির তৎকালিন সহকারী পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো: মশিউর রহমান মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেন।
২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার তৎকালিন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।