ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

পাকিস্তানে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ক্রমশ মরিয়া ও দুর্বল করছে জেনারেলদের

Daily Inqilab দ্য ইকোনোমিস্ট

২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম

নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ পার্টি (পিএমএল-এন) দেশটিতে আবার ক্ষমতায় এসেছে। গত মাসে নির্বাচনের পর তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের ছোট ভাই শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানো হয়েছে। নওয়াজ-কন্যা মরিয়ম পেয়েছেন জনবহুল পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ। তবে, ৭৪ বছর বয়সী ‹পাঞ্জাবের সিংহ› হতাশাগ্রস্ত বলে শোনা যাচ্ছে। এর অবশ্য যথাযোগ্য কারণও রয়েছে।

নওয়াজ শরীফকে লন্ডনে চার বছর স্বেচ্ছানির্বাসন কাটাতে হয়েছে, কারণ পাকিস্তানের গণতন্ত্রের কান্ডারী জেনারেলরা তার বিরুদ্ধে ছিলেন। তারা ২০১৮ সালে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানের পক্ষ নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তারা ইমরানকে হটিয়ে নওয়াজকে বেছে নেন। সাবেক ক্রিকেট ঈশ্বর ইসরান খানকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ভেঙে দেয়া হয়েছে। তাই আশা করা হয়েছিল যে, পিএমএল-এন নির্বাচনে ব্যাপক জয়লাভ করবে এবং নওয়াজ শরীফ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু ঘটেছে ঠিক উল্টোটা।

পাকিস্তানিদেরকে ইমরানকে খানের পক্ষে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর অগণিত চক্রান্ত সত্ত্বেও ইমরানের দলের সাথে যুক্ত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসাবে দাঁড়িয়ে দেশকে শক্ত ঝাঁকুনি দিয়েছেন। প্রারম্ভিক গণনায় তারা পাঞ্জাবের দুই-তৃতীয়াংশ আসন এবং সামগ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। এই সময়ে সেনাবাহিনী এমন এক মাত্রায় হস্তক্ষেপ করেছে, যা একটি অপদার্থকেও ভোট বন্যায় ভাসিয়ে দিতে পারে।

পাকিস্তানের সামরিক প্রতিনিধিদের ভুয়া ফলাফল দিয়ে কেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যথায়, ২শ’ ৬৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৭৫টি আসন পেয়ে শরীফের দলের ভরাডুবি ঘটতো। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী লাহোরে পিটিআই সমর্থক প্রার্থী সালমান আকরাম রাজাকে জানানো হয়েছিল যে তিনি ৯৫হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন। এরপর তাকে জানানো হয় যে, তিনি পিএমএল-এন প্রার্থীর কাছে ১৩হাজার ৫শ’ ভোটে হেরেছেন। তারপরেও, ক্ষমতায় আসতে পিএমএল-এনকে ভুট্টোদের পাকিস্তান পিপলস পার্টির সাথে একটি চুক্তি করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়াতে হয়েছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশ শাসন করে আসছে। এর জেনারেলরা একজন নিয়ন্ত্রণযোগ্য বেসামরিক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসান, তারপর সে স্বাধীনভাবে কাজ করার দু:সাহস করলে, তার ক্ষমতা অন্য আরেক আজ্ঞাবাহীর কাছে চলে যায়। এর ফলে পাকিস্তানে চারজন সেনা স্বৈরশাসকের আমলে ২০ জন বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর কেউই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। এটি বলে দেয় যে, কেন দেশটি এত খারাপভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানিদের অবস্থা ভারতীয়দের তুলনায় ভালো ছিল। কিন্তু এখন ভারতের গড় আয় পাকিস্তানের তুলনায় ৬০শতাংশ বেশি।

সর্বশেষ নির্বাচনের ফলাফল থেকে যে বড় প্রশ্নটির উদয় হয়েছে, তা হল, সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে পাকিস্কানের শাস ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পরবে কি না। এই সংশয়ের দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি ইমরান খান। তিনি পাকিস্তানিদের দীর্ঘস্থায়ী হতাশাকে সামরিক সংস্থার প্রতি ক্ষোভের দিকে নিয়ে গেছেন। এটি পাকিস্তানের রাজনীতিকে নতুন রূপ দিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির ভোট গণনার প্রতিক্রিয়ায় তার পূর্বসূরিদের মতো পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা আরোপ করেছিলেন। অন্যথায় গণবিদ্রোহের ঝুঁকি ছিল।

পাকিস্তানের সোবাহিনীর স্থিতাবস্থাকে বিপন্নকারী দ্বিতীয় কারণ হল সুদীর্ঘ অর্থনৈতিক সঙ্কট। দীর্ঘস্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের সমস্যাগুলির সাথে যোগ হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী অপশাসনের প্রভাব। এই পরিস্থিতিতে, ২০২২ সালে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতি তার জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে, আগাম নির্বাচনের পরিবর্তে শাহবাজকে ১৬ মাসব্যাপী অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার নওয়াজ শরিফের সিদ্ধান্ত একটি বড় ভুল বলে মনে হচ্ছে। এতে উণ্টো তার দলের গলায় সঙ্কটের মালা ঝুলেছে।

পাকিস্তানের ২৪ তম আইএমএফ ঋণের মেয়াদ এই মাসে শেষ হতে চলেছে, এবং আরেকটি বড় ঋণ জরুরীভাবে প্রয়োজন। এতে নতুন সরকারকে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা এটিকে বর্তমানের চেয়েও বেশি অজনপ্রিয় করে তুলবে। পাকিস্তানের সামরিক সংস্থার ক্ষেত্রেও একই ফল ঘটতে পারে। সেনাবাহিনী তার সর্বশেষ নির্বাচনী লুটতরাজ করে রেহাই পেলেও ইমরানের খানের সমর্থকরা এটিকে মরিয়া এবং দুর্বল করে তুলেছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ