একজন মানুষ প্রতিবছর ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করেন
৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম
২০২২ সালে বাসাবাড়ি, খাদ্য সেবা ও খুচরা পর্যায়ে সারা বিশ্বে মোট খাদ্যের প্রায় ১৯ শতাংশ (১০০ কোটি টনের বেশি) অপচয় হয়েছে। ওই বছর বাংলাদেশেও একজন ব্যক্তি বছরে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করেছেন। বাংলাদেশে খাদ্য অপচয়ের এ প্রবণতা ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি ইউনেপের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ওই বছর বিশ্বে বেশিরভাগ খাদ্য অপচয় হয়েছে বাসাবাড়িতে। মোট খাদ্য অপচয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ বাসাবাড়িতে হয়েছে। গড়ে একজন মানুষ বছরে ৭৯ কেজি খাবার অপচয় করেছেন।
ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট-২০২৪ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে ইউনেপ বলেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের খাদ্য অপচয়ের প্রবণতা ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ছিল। জাতিসংঘের হিসাবে বাসাবাড়িতে এক ব্যক্তি বছরে গড়ে ভারতে ৫৫, যুক্তরাজ্যে ৭৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩ ও রাশিয়ায় ৩৩ কেজি খাবার অপচয় করেছেন। তবে এ হিসাবে সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় হয়েছে মালদ্বীপে ২০৭ কেজি। আর সবচেয়ে কম ১৮ কেজি হয়েছে মঙ্গোলিয়ায়।
খাদ্য অপচয়বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক কামরুল হাসান বলছেন, বাংলাদেশে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোতে বেশি খাদ্য নষ্ট বা অপচয় হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক খাদ্য অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ঢাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় গবেষণা করেছেন।
ইউনেপের আগের প্রতিবেদনের সাথে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগের চেয়ে ২০২২ সালে খাদ্য অপচয় বা খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করার প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি ২০২১ সালের প্রতিবেদনে জানায়, একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন।
গবেষকরা বলছেন, সাধারণভাবে খাবার সম্পূর্ণ না খেয়ে অপচয় করাটাই হল ফুড ওয়েস্ট। আর ফুড লস হল উৎপাদন বা আহরণের পর গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত না পৌঁছানো। সেটিও খাদ্য অপচয়ের মধ্যেই পড়ে। আবার যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কোনো খাবার যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটি খাদ্য অপচয়ের আওতায় আসবে। এর মধ্যে ফুড লস হয় মাঠ পর্যায় থেকে গ্রাহকের হাতে আসা পর্যন্ত। আর ফুড ওয়েস্ট বা অপচয় হয় গ্রাহকের হাতে আসার পর। অধ্যাপক কামরুল হাসানের সাথে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন গবেষক অধ্যাপক শাহেদ রেজা। তিনি মাছের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ছোট মাছের ক্ষেত্রে বেশি ফুড লস হয়ে থাকে।
অধ্যাপক কামরুল হাসান বলছেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে তারা যে গবেষণা করেছেন তাতে দেখা গেছে, কমিউনিটি সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫-১৩ শতাংশ খাবার নষ্ট বা অপচয় হয়। বাসাবাড়ি ও হোটেল রেস্টুরেন্টে অনেক খাবার নষ্ট হয়। আমরা গবেষণায় পেয়েছি উচ্চ আয়ের বাসাগুলোতে সপ্তাহে একজন মানুষ দুই কেজির বেশি খাবার অপচয় করে থাকেন।
অধ্যাপক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে করা এস্টিমেশন অব ওভারঅল ফুড লসেস অ্যান্ড ওয়েস্ট এট অল লেভেলস অব দ্য ফুড চেইন শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোতে খাদ্য অপচয় বেশি হয়। আর কম অপচয় হয় একেবারে গরীব পরিবারগুলোতে। তাছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ ক্যাটাগরির রেস্তোরাঁগুলোতেও সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য অপচয় হয়ে থাকে। সে তুলনায় বি ক্যাটাগরির রেস্তোরাঁয় কিছুটা কম নষ্ট হয়।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্ডার দেওয়া এবং সব খাবার একটু চেখে দেখার প্রবণতাই রেস্তোরাঁ গুলোতে খাবার অপচয়ের বড় কারণ বলে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে। মূলত এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় বেশি বলে ধারণা বাংলাদেশের গবেষকদের। তারা মনে করেন, রেস্তোরাঁ বা কমিউনিটি সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি নজরদারি বা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় খাদ্য অপচয় প্রতিরোধে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে ভালো করছে।
বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় বিষয়টি দেখার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও কর্তৃপক্ষ নেই। বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলছেন, খাদ্য অপচয় প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া তেমন কিছু তাদের করণীয় নেই। আমরা ভোক্তা পর্যায়ে কেউ নষ্ট বা মানোত্তীর্ণ খাবার দিলে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কেউ খাদ্য নষ্ট করলে বা অপচয় করলে আমাদের কিছু করার আছে বলে এখনও জানা নেই। বাংলাদেশে বছরে প্রায় এক কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয় এবং বছরে জন প্রতি ৬৫ কেজি খাবার কখনও খাওয়াই হয় না। যদিও ২০২৩ সালের জুন মাসে ঢাকায় দশম আন্তর্জাতিক নিরাপদ খাদ্য ফোরামের এক অনুষ্ঠানে ‘খাদ্য নিরাপদ এবং পুষ্টিকর রাখা, ক্ষতি রোধ করা’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
গবেষকরা বলছেন, বাসা ও রেস্তোরাঁয় খাবার অপচয়ের মূল কারণ হল, দরকারের চেয়ে বেশি রান্না করা, অতিরিক্ত খাবার কিনে তা ব্যবহার না করা এবং খাবার সংরক্ষণ যথাযথভাবে না করা। আমাদের গবেষণায় খাবার অপচয় বা নষ্টের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে এসব কারণই উঠে এসেছিল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২
পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল
মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব
ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ
শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব
আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর
আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩
কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা
সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা
মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার
বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি