২০ মন বেগুনে এক কেজি গরুর গোশত
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে রংপুরের গ্রামে এখন এক কেজি গরুর গোশত নিতে হলে কৃষককে বিক্রি করতে হবে ২০ মন বেগুন। গ্রামে এক কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে এক টাকা থেকে দুই টাকা দরে; আর রংপুর শহরে এক কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮শ টাকা কেজি দরে। ফলে বেগুন চাষীরা বেগুন বিক্রী করে রমজান মাসে গরুর গোশত খেতে চাইলে ১৭ থেকে ২০ মন বেগুন বিক্রি করে এক কেজি গোশত কিনতে হবে। বেগুনের দামে ধ্বস নামায় কৃষকরা গরুতে বেগুন খাওয়াচ্ছেন। রংপুর জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, লালমনির হাট জেলার হাতিবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় গেরস্থ বাড়িতে গরুতে বেগুন খাওয়ানোর দৃশ্য এখন সাধারণ দৃশ্য। অথচ সেই বেগুন রাজধানী ঢাকায় ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও রংপুর শহরে বেগুনের দাম গ্রামের চেয়ে কয়েকগুন বেশি।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কেসামত ছাওলা গ্রামের কৃষক মো. আশরাফুল ইসলাম। ২০ শতক জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। শুরুতে কিছুটা দাম থাকায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে এখন ক্রেতা না থাকায় আর ক্ষেত থেকে বেগুন তুলছেন না তিনি। এতে করে ক্ষেতেই বেগুন পচে নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, বেগুনের যে দাম জমি থেকে বেগুন উঠানের ক্ষেতমজুরের দাম ওঠে না। তাই অনেকে গরুতে বেগুন খাওয়াচ্ছেন।
ছাওলা গ্রামের অনেক কৃষকই জানান, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়। ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে যে খরচ সেটিও উঠছে না। ফলে অনেকেই গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন এই সবজি। শুধু তাই নয়, ১০ থেকে ১২ মণ বেগুন বিক্রি করেও এক কেজি গরুর গোশত কিনতে পারছেন না বলে জানান তারা।
কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, বেগুন বাজারে নিয়ে গেলে ১০০ টাকা বস্তা অথবা এক টাকা কেজি দাম বলে। তাই এখন ক্ষেতেই বেগুন থাকছে। মাঝে মাঝে কিছু বেগুন তুলে গরুকে খাওয়াই নিজে খাই। কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় পচে যাচ্ছে বেগুন।
একই গ্রামের কৃষক মো. মমিনুল ইসলাম। দাম না থাকায় বাসায় বেগুন এনে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। এই কৃষকের দাবি, বেগুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচের টাকা বাদ দিয়ে শুধু শ্রমিকের মজুরির টাকা তোলাই সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বেগুনের দাম মাত্র ১ টাকা কেজি বলায় অনেকে ক্ষোভে বেগুনকে বানিয়েছেন গরুর খাদ্য। ওই এলাকায় মো. আব্দুল ওয়াহাব, মো. মিজু মিয়া ও মো. নজরুল ইসলামসহ বেগুন চাষিদের অবস্থা একই। তাদের আক্ষেপ এক কেজি গরুর গোশত কিনতে হলে বেগুন বিক্রি করতে হবে ১৭ মণ থেকে ২০ মন। এই কারণে জমি থেকে বেগুন তুলছেন না তারা। কারণ এক টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করলে শ্রমিকের মজুরি তুলতেই তাদেরকে হিমশিম খেতে হবে। তবে সরেজমিন পীরগাছার তাম্বুলপুর-পাওটানা- নেকমামুদ, সাতদরগা, অন্নদানগর হাটে বেগুন প্রতিকেজি ২ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ছাওলা ইউনিয়নে ১ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হলেও একই উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে ভিন্নচিত্র। এখানকার কান্দি বাজারে জাত ভেদে বেগুনের কেজি ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর রংপুরের সবচেয়ে বড় কাঁচামালের ব্যবসা কেন্দ্র সিটি বাজারের পাইকারি আড়তেও বেগুনের দামে এখনো খানিকটা আগুন অনুভব করছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর রমজান এলেই আগুন লাগে বেগুনের বাজারে। ব্যতিক্রম ছিল না এবারও। দুই সপ্তাহ আগেও জাত ভেদে বেগুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই ধস নেমেছে বেগুনের দরে। বর্তমানে সিটি বাজারের আড়তে বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে জাত ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিতে।
অন্যদিকে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর খান বহুমুখী মার্কেট, কামাল কাছনা বাজার, মুলাটোল বাজার, কামারপাড়া বাজার, মাহিগঞ্জ বাজার, নিউ আদর্শপাড়া বউ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাত ভেদে খুচরা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেগুন।
শহরের বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি ২--৩০ টাকা হলেও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষক। বেগুন চাষিদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবি কৃষক সংগঠনের নেতাদের। তারা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের মুনাফা যাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চাষাবাদ থেকে বিমুখ হলেও বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রান্তিক পর্যায় থেকে বাজার ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বারোপ করা উচিত বলে মনে করছেন জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি। তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে কৃষক। প্রান্তিক গরিব কৃষক উৎপাদন করেন কিন্তু তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সরাসরি বাজারে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন না। প্রতিটি শহরে কিংবা গ্রামে যদি কৃষকের বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে একদিকে ভোক্তারা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কৃষকরাও লাভবান হবেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শিক্ষার্থী হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগের ২ কর্মীকে গণধোলাই
লিভারপুল কিংবদন্তি ইয়েটসের চিরবিদায়
কালিয়াকৈরে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা মামলা
পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’
গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির
জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু
পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই
স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া
মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার
'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'
শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ
সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে
আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল
নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু
পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত
মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন
বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না
নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব
নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন
সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক