জানেন না চালক-কন্ডাক্টর
০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম
জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাসভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাস ভাড়া কমানোর এই সিদ্ধান্ত জানেন না সড়কে চলাচলরত বাসের চলক ও কন্ডাক্টররা। তবে এর প্রভাব পড়েনি সড়কে। বাসভাড়া আছে আগের মতোই। রাজধানীর অধিকাংশ রুটেই কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বাসচালকের সহকারী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্তে যাত্রীদের কোনো উপকারই হয়নি, বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা ভাড়া কমানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতায় বাসের ভাড়ায় এর কোনো প্রভাব নেই। এর আগে ২০১১ সালে বাসের ভাড়া দুই পয়সা কমিয়েছিল সরকার। ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলের মূল্য কমায় বাসের ভাড়া তিন পয়সা কমানো হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাসের ভাড়া পাঁচ পয়সা কমেছিল। কখনোই কমতি ভাড়ার সুফল যাত্রীরা পায়নি। এক বাসের শ্রমিক বলেন, ভাড়া কমছে এমন কিছু জানি না। অনেক সময় আমরা দুই-পাঁচ টাকা এমনিই ছেড়ে দিই।
পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাসের ভাড়ায় তিন পয়সার প্রভাব খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নেই। একজন যাত্রী ১০ কিলোমিটার ভ্রমণ করলে ৩০ পয়সা কমবে। এই ভাড়া সমন্বয় করা অবাস্তবিক। ৩৩ কিলোমিটার ভ্রমণ করলে এক টাকা ভাড়া কমবে। ঢাকায় কতজন যাত্রীর গন্তব্যের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার? আর এমন বড় রুট আছে কয়টি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগে ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। তেলের দাম কমলেও পরিবহন ভাড়া কমে না কোথাও। কিন্তু দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ যখন বিশ্ববাজারে দাম কম এবং দেশে বেশি থাকে, তখন বাড়তি মুনাফা আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। আবার যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়বে, তখন দেশে দাম না বাড়িয়ে ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে।
রাজধানীর আজিমপুর থেকে একটি বাস নীলক্ষেত, আসাদগেট, খামারবাড়ি, বিজয়নগর, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, বনানী, কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত যায়। একজন যাত্রী যদি আজিমপুর বা নীলক্ষেত থেকে ওই বাসে উঠে খামারবাড়ি বা বিজয়নগর যায় তাহলে তাকে ২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। আবার আসাদগেট থেকে উঠলেও ২০ টাকাই ভাড়া দিতে হয়। যাত্রী যেখানেই নামুক না কেন, আসাদগেট থেকে বনানী পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। বনানী পার হলেই এই ভাড়া হয়ে যায় ৪০ টাকা।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, দূরত্ব অনুযায়ী যাত্রীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবে। ভাড়া কিছুটা হলেও কমবে বলে দাবি করছেন তারা। তবে, এই ভাড়া কমানোতে যাত্রীদের উপর তেমন কোনো প্রভাবই পড়বে না বলে মনে করছেন যাত্রী অধিকার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে যে হারে ভাড়া বাড়ানো হয়, কিন্তু কমলে সেভাবে ভাড়া কমানো হয় না।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রতি মাসে সমন্বয়ের অংশ হিসেবে গত ৩১ মার্চ ডিজেল ও কেরোসিনে ২ টাকা ২৫ পয়সা কমানো হয়েছে। এর ফলে এই দুই জ্বালানির দাম হয়েছে ১০৬ টাকা। দাম কমানোর পর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) গত সোমবার বাস, মিনিবাসের ভাড়া তিন পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
যাত্রীরা বলছেন, মিরপুর ১২ থেকে তিব্বত পর্যন্ত ভাড়া প্রথমে ২০ টাকা ছিল। যখন তেলের দাম বাড়ায় তখন ভাড়া একবারে ২৫ টাকা করে ফেলে বাস মালিকরা। পরে তেলের দাম কমলেও কিন্তু ওই ভাড়া কমানো হয়নি। আবার যেসব রুট অনুযায়ী ২৩ টাকা ভাড়া হয় সেখানে তারা কখনোই ভাঙতি টাকা দেয় না। দূরপাল্লার রুটে ভাড়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়। এবারো যতক্ষুদ্র অঙ্কের ভাড়াই কমানো হোক না কেন তাতে যাত্রীদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) জ্বালানি তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে কিলোমিটারপ্রতি বাসভাড়া ৩ পয়সা কমানোর সুপারিশ করেছে বাসভাড়া পুনর্নিধারণ কমিটি। গত সোমবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ভাড়া কমানোর এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। রাতেই বাসভাড়া ৩ পয়সা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪৫ পয়সা। এটা কমিয়ে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে মিনিবাসের নির্ধারিত ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৩৫ পয়সা। এই হার কমিয়ে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বাসভাড়া পুনর্র্নিধারণ কমিটি। বর্তমানে দেশের দূরপাল্লার (রাজধানী ঢাকা টু বিভিন্ন জেলা রুট) রুটের জন্য সরকার নির্ধারিত বাসভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা। এ ভাড়া কমিয়ে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ভাড়া কমানোতে যাত্রীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কোনো বাস কাউন্টারেই এ ধরনের ভাঙতি পয়সার প্রচলন নেই। অতীতে যখন বিভিন্ন সময় ভাড়া কমানো হয়েছিল, তখন কোনো যাত্রাপথে ছয় টাকা, পাঁচ টাকা বা তিন টাকার খুচরা ভাড়া থাকলে সেটাকে তারা একটা রাউন্ড ফিগারে আদায় করে নেয়। তারা খুচরা এ টাকা কোনো হিসাবের মধ্যে নিয়ে আসেন না। যাত্রীরা এই টাকা কম দেয়ার সুযোগ পায় না। অতীতে বিভিন্ন সময় ভাড়া কমালেও বাসে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে কার্যকর করা যায়নি। এবারো এই ভাড়া কার্যকর করা যাবে এমনটি মনে হয় না। এরই মধ্যে দু’দফা জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে অথচ বাস ও পণ্যবাহী পরিবহনের ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানির দাম নির্ধারিত হচ্ছে। দু’দফায় মিলে লিটারে ৩ টাকা কমেছে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম। এ সুবিধা কিন্তু সাধারণ মানুষ পায়নি। এখন ১০৬ টাকার মধ্যে সরকারের পকেটে যাচ্ছে ১৬ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লিটার ১০০ টাকা করা যেতে পারে। এর আগেও লিটারে ৫ টাকা কমেছিল। তখনো কিন্তু পরিবহন ভাড়া কমেনি। এবার দু’দফায় মিলে লিটারে ৩ টাকা কমেছে, পরিবহন মালিকরা কিছু বলছে না। যদি দাম বাড়ে তখনই বলে ওঠে পরিবহন ভাড়া বাড়াতে হবে।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম শামসুল আলম বলেন, এতে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পায়নি। দাম নির্ধারণ করার কথা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। জ্বালানি বিষয়ে অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইন রহিত করার ফলে আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। জ্বালানির সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। সরকারকে জ্বালানি প্রাইস স্ট্যাবিলাইজ্ড ফান্ড গঠন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা। তেলের দাম বেড়ে গেলে সেখান থেকে ভর্তুকি দেয়ার কথা বলেছিলাম। আর কমলে উদ্বৃত্ত এখানে জমা দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা সেটা শোনেনি। উদ্বৃত্ত টাকা নয়-ছয় হচ্ছে। অস্বচ্ছতা রয়েছে দাম কমানো বা বাড়ানোর পুরো প্রক্রিয়ায়।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আসলে কম দূরত্বের পথে ভাড়া কমার সুফল মেলা কঠিন। দূরপাল্লার যাত্রীদের ক্ষেত্রে বাসের ভাড়া কিছুটা কমবে। নতুন ভাড়ার তালিকা দু-এক দিনের মধ্যে বাসে দিয়ে দেওয়া হবে। তখন যাত্রীরা তালিকা দেখে ভাড়া দিতে পারবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান