ফরিদপুরের ৭ নদী শুকিয়ে চৌচির
১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ফরিদপুরে ৭ নদী শুকিয়ে চৌচির। পদ্মা এখন শিশুদের খেলার মাঠ। পাশাপাশি দখল ও দূষণে হারিয়েছে আরো বহু নদ। একসময় এই জেলার জেলেরা যেসব নদে ১২ মাস মাছ ধরে বাজার বিক্রি করে সংসার চালাতে সে সব নদে এখন পানি নেই।
অবশিষ্ট যা আছে অর্ধেক দখল হয়েছে বাকি টুকু ময়লা আবর্জনা এবং বাজার ও বাসাবাড়ির বর্জ্যে তা সম্পূর্ণভাবে দূষণ হয়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জেলার ৫/৬টি নদ। ফলে বেকার হচ্ছে শত শত জেলে এবং নানান পেশার শ্রমিজীবী মানুষ। পাশাপাশি পদ্মার পলিতে এবং ভূমিদস্যুদের দখল ভরাটে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদীগুলোও।
ফারাক্কার প্রভাবে প্রমত্তা পদ্মার ফরিদপুর শহরমুখী অংশে তথা কুমার ও পদ্মার সংযোগস্থল মদনখালী পয়েন্টে শহরমুখী কুমার নদটি পুরোটা শুকিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদের মধ্যে ইটভাটা মালিকদের মাটি লুটের ট্রাক ট্রলি ও ভেকু দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নদের মধ্যে রাস্তা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে বহু আগেই। পদ্মা শুকিয়ে হয়েছে শিশুদের খেলার মাঠ। আবার মুল পদ্মার কোথাও সবুজের সমারোহ। ফলে পদ্মার প্রধান শাখা নদী কুমার, মধুমতি, ভুবনেশ্বর, চন্দনা, বাড়াশিয়াও ভরে গেছে, পানির প্রবাহ না থাকার কারণে।
এই বিষয়ে ফরিদপুর জেলা সদরের ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির এবং নর্থচ্যানেল আওয়ামী লীগের সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, মদনখালীর পদ্মা-কুমার নদীর প্রধান সংযোগস্থল তথা কুমার নদীতে পানি প্রবেশের উৎস মুখটি পদ্মার পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে ৩/৪ বছর আগেই। ফলে কুমার নদে পানি প্রবাহে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মরা নদের প্রায় ৬০ কি.মি. খননের পর দুই পাড় ধসে আবার ভরাট হয়ে গেছে। জনগণের কোনো উপকারে আসনি নদী খনন।
পদ্মার সাথে আংশিক সংযোগ আড়িয়াল খাঁ, কুমার-ভুবনেশ্বর নদের দুইদিকে থেকে এসে মিলিত হয়েছে। দুই নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া, কুমার নদ, ভুবনেশ্বর, মধুমতি, চন্দনা, শুকিয়ে মরা এখন খাল। আড়িয়াল খাঁ নদীর বুক দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটেই এপার থেকে ওপার যাচ্ছে। এই নদ-নদীগুলোই ছিল এই অঞ্চলের মৎস্য আশ্রম। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে শতাধিক জেলে। তারা আজ পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি কুমার নদের দুই পাড় দখল হয়ে নদের পাড়ে দোকানপাট ও বাসাবাড়ি নির্মাণ করায় নদী হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ। কুমার, চন্দ্রনা, বারাশিয়া, মধুমতি ভুবনেশ্বর, তথা ৫টি নদ শুকিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ছে শতশত মানুষ। কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে ও নৌকার মাঝিরা এবং নৌকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীসহ ২০ পেশার শ্রমিজীবী মানুষ বেকার হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
উল্লেখিত, পেশার মানুষগুলো ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাট হয়ে মদনখালী মোহনা থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সামগ্রী নিয়ে অল্প খরচে নিরাপদে ও আরামে ভ্রমণের আদলে, বিভিন্ন পণ্য নিয়ে, ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা, মধুখালী, সালথা উপজেলা সদরের হাটবাজারে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতো। শতশত পরিবারও জীবন জীবিকা চালাতো নদীপথ নির্ভর হয়ে।
ফরিদপুর সিত্রন্ডবি ঘাটের ৩শ’ নৌশ্রমিকরাও এখন বেকার হয়ে পড়ছে। পদ্মার নাব্যতা না থাকায় বড় বড় কার্গো, বলগেটে, মাল টানা জাহাজ এখন ঘাটে ভিড়তেই পারে না।
দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা হয় চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর আসা এমভি নার্গিস ও এমভি শাওনের সারেং ও চুকানির সাথে তারা জানান, নাব্যতা কমে যাওয়ায় অল্পসংখ্যক নৌযান আসলেও প্রায় ২০/২২ কিলোমিটার নৌপথ ঘুরে আসতে ফলে জ্বালানি খরচ দ্বিগুনের বেশি পড়ে যায়। ফলে নৌযানও কমে গেছে। ঘাটের লেবার/ শ্রমিকও কমে গেছে। শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় মহাজনদের বহু লোকসান হচ্ছে। সর্বপরি শ্রমিকরা এখন আর কাজও পাচ্ছে না।
আগে কুমার নদসহ ৫টি নদের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করায় মাঠে তিন ফসলি বাম্পার ফলনও হতো। প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকা এবং ফসলের মাঠে ভরে যেত পদ্মার নতুন পানিতে। পদ্মার পানির সাথে নতুন পলি আসায় ফসল ভালও হতো। পানির সাথে নানান প্রজাতির দেশী মাছ এসে ভরে যেত গ্রামগঞ্জের পুকুর বিল ও হাঁওড়পানিতে ভেসে যেতো।
ঠিক তখনই হাওর ও বিলে শতশত জেলেরা নানন প্রজাতির দেশী মাছ ধরে বিক্রি করতে স্থানীয় হাটে বাজারে। শতশত বিঘা ফসলের মাঠে ফুটে উঠতো শাপলা, শালুক। দৃষ্টি নন্দন বিল হাওরে উড়ে আসতে নানান প্রজাতির অতিথি পাখি। বাস করতে দেশী ১০ প্রজাতির পাখিও। বিল হাওরের শামুক এবং ঝিনুক ও শামুক কুঁড়িয়ে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। শামুক ঝিনুকের কারণে প্রকৃতির নিয়মে জমির উর্বর শক্তিও বাড়তো। এসবই এখন বিলুপ্তির পথে।
মরা নদে আগে মাছ ধরা জেলে রিপন কুমার পেশা পাল্টিয়ে এখন তিনি মোমিন খাঁর হাটে চুল কাটার কাজ করছে। শহরের লক্ষীপুর এলাকার শ্যামা জ্বাইলা এর তিন পুরুষ জেলে কুমার নদে মাছ শিকার করতো এখন পেশা পাল্টিয়ে হাজীগঞ্জের বাজারে চায়ের দোকান করছেন। কুমার নদ দিয়ে মাটির হাড়ি পাতিল বাসন নিয়ে নৌকায় যোগে মুকসুদপুর বাজারে গিয়ে বিক্রি করতো সুকেশ জাইলা এখন তিনিও পেশা পাল্টিয়ে ফরিদপুর কানাইপুর বাজারে ভ্যানে কাঁচা তরকারি বিক্রি করতো। সপ্তাহে ২ দিন কুমার নদ দিয়ে কাশিয়ানি ও ট্যাংরাখোলা বাজার নৌকা চালিয়ে পাঠের পাইকার নিয়ে বাণিজ্য করতো গনেশ মাঝি। এখন সেই নদের গভীরতা নাই নৌকা ও চলে না।
ফারাক্কার প্রভাবে উজান থেকে ধেয়ে আশা পলি পড়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে ফরিদপুর অংশে জেগে উঠছে শতশত ডুবোচর, ফলে এতদাঞ্চলের ৭টি নদীতে পানির প্রবাহ নাই, ফলে নদী, পুকুর বিল হাওড় এখন পানি শূন্য আমন এবং ইরি মৌসুমে মাঠের পাশে পুকুর ডোবা হাওড় বিলে পানি না থাকায় ফসলের মাঠও পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। আগে নতুন পানির সাথে আসা জমিতে পলি পড়ে ফসলও ভাল হতো সার ও সেচ খরচ লাগতো না। ফলে আগের চেয়ে ৪ গুন খরচে কৃষকদের মাঠে মাত্র দুটি ফসল ঘরে তুলতে হয়। একদিকে মেশিনে চালানোয়ে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের বাড়তি খরচ এবং মাঠের সেচ যন্ত্রও চুরি যায়।
পাশাপাশি বিষ এবং নিম্নমানের কীটনাশকে দেশী মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিলুপ্তি হওয়ার পথে দেশী মাছ।
অপরদিকে, উল্লেখিত নদীগুলোর পাড় ভরাট ও দখলে চলছে পাল্লা। যে যার মতো পাকা ঘরবাড়ি এবং নদীর মধ্যে বাঁশ দিয়ে মাছা পেতে টোঙ ঘর তৈয়রী করছে। এই চিত্র সবচেয়ে বেশি বেয়ালমারী ও ফরিদপুর সদর থানার সদর থানার মিষ্টি পট্টিতে।
ফলে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ প্রচন্ড রকমের বাধাগ্রস্ত হয়। অপরদিকে, ফরিদপুর হাজীশরীয়তুল্লা বাজার ব্রিজের এপার ওপারে পাল্লা দিয়ে নদীতে ময়লা আর্বজনা এবং গরু ছাগল হাঁস মুরগীর বর্জ্য এবং কাঁচাবাজারের ময়লা ফেলায় ৫০ বছরের ঘাটলাটিও আর্বজনায় ডুবে গেছে।
বাজারের পরিবেশ দুষণ হচ্ছে পঁচা গন্ধে। অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন, দখল, ভরাট ও দূষণের ব্যাপারে ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে তিনি বললেন, সকল বিষয় অবগত হলাম খুব শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়