বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
দেশের হাওর এলাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বৈশাখের প্রথমদিন থেকেই বিভিন্ন হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সব ধান ঘরে তুলতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন অনুকূল আবহাওয়ার প্রত্যাশা করছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। প্রকৃতি এবার দু’হাত ভরে দান করেছে হাওরের কৃষকদের। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনারাঙা পাকা ধান। তা দেখে কৃষকের মুখে ছড়িয়ে পড়ছে হাসির ঝিলিক। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে হাওরের কৃষকরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, হাওরভুক্ত দেশের ৭টি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে এবার বোরো ধান আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে। এই জেলাগুলোতে হাওরের বাইরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। হাওরের পাকা ধান দ্রুততার সঙ্গে কাটার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাওরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপারে ধান কাটা হচ্ছে।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপুতা হাওরের কৃষক আব্দুল ওয়াহেদের চোখ মুখে আনন্দের ছাপ। তিনি বলেন, ৫০০ কাঠা জমিতে বোরো চাষ করেছি। এবার ফলন খুব ভাল হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব জমির ধান ঘরে তুলতে পারবো। ডিঙ্গাপুতা বিস্তৃত হাওরের কয়েকজন কৃষক জানান, প্রায়ই আগাম বন্যায় তাদের সব ধান পানিতে ডুবে যায়। তাই এবার শুরুতেই ব্রি-২৮ ধান রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তারা। শতকরা ৯৫ ভাগ ধান ইতোমধ্যে পেকে যাওয়াতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রকৃতির অবস্থা এখনও ভালো আছে। আরো ১০-১৫ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার শতভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী।
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় চলছে ধান কাটার ধুম। বৈশাখের শুরুতে যে জমিগুলোতে ধান পেকেছে সেগুলো কাটার ধুম পড়েছে। বর্তমানে দম ফেলার ফুরসত নেই কৃষক পরিবারগুলোর। হাতে ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুত ধান কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার। সূর্য ওঠার সাথে সাথে কৃষকরা পরিবার-পরিজন ও দিনমজুর নিয়ে সোনালি ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১২টি উপজেলায় চলছে একযোগে ধান কাটা। কৃষি বিভাগ আশা করছে- আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জেলার সকল হাওরের জমির ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবে কৃষক।
সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত ভাটি জনপদ ও হাওরের জেলায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওর জুড়ে পুবালি বাতাসে এখন দোল খাচ্ছে আধা-পাকা সোনালী ধান আর ধান। এই ধান কাটতে শুরু করেছেন এ অঞ্চলের কয়েক লক্ষাধিক কৃষক। অন্যদিকে কৃষক-কৃষাণীরা এই ধান মাড়াই ও শুকনো জন্য খলা তৈরি কাছে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউবা সেই ধান রোদে শুকিয়ে বস্তা বন্দি করে সংরক্ষণ করছেন।
কৃষকরা জানান, বৈশাখের প্রথম দিনে কষ্টের ফলানো সোনালি ধান ঘরে তুলতে পেরে সত্যি খুব আনন্দ লাগছে। এই হাওরকেই ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন, আমাদের সুখ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। যেখান থেকে এই বছর ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে। টাকার অংকে যার বাজারমূল্য প্রায় চার হাজার একশ দশ কোটি টাকা।
এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার হাওর পাড়ের কৃষক-কৃষাণী এবং বৃদ্ধ-শিশুসহ সকলই অন্য রকম এক বৈশাখী উৎসব মেতে উঠেছেন। এমনকি এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন গ্রামের বাইরে থাকা মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। এই ধান গোলায় তুলতে পারলেই হাওর পাড়ের কৃষকেরা ‘ধনী’। কোনো কারণে গোলায় ধান না উঠলে হাওর পাড়ের মানুষে মন বেদনা ভরে উঠে এবং তাদের কষ্টের আর সীমা থাকে না। কারণ এই উৎপাদিত বোরো ধান দিয়ে চলে সারাবছরের সংসারের খাবার। আর এই ফসল বিক্রি করে ছেলে-মেয়ে লেখা পড়া , চিকিৎসা, বিয়ে-শাদিসহ সামাজিকতা ইত্যাদি।
সুনামগঞ্জে জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের কৃষক সমসের আলী বলেন, মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সাত একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলাম। সেই ধানের বাম্পার ফলন হলেও গত সপ্তাহে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ধান ঘরে তোলা নিয়ে ছিলাম চরম শঙ্কায়। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে বৈশাখের তৃতীয় দিনে স্বপ্নের ফলানো সেই ধান কেটে মাড়াই দিয়ে প্রখর রোদে শুকাচ্ছি, ফলন ভালো হওয়ায় মহান আল্লার শুকরিয়া আদায় করছি, অলহামদুলিল্লাহ।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরপাড়ের ফেতেপুর গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, এবার দশ কেদার জমিতে বোরো চাষ করেছি আজ এই জমির পাকা ধান কাটা শুরু করছি। এক সময় হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক আসতেন। এখন এটা একবারে কমে গেছে। স্থানীয় ভাবেও শ্রমিক মেলে না। তাই এখন ধান কাটার যন্ত্রের ওপরই ভরসা। কিন্তু হাওরে পানি থাকলে মেশিনে ধান কাটায় সমস্যা হয়।
সদর উপজেলার আলমপুরব গ্রামের কৃষক শুকুর আলী বলেন, দেখার হাওরে ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি ধান পাকা শুরু হয়েছে দু’দিন পর ধান কাটা শুরু করবো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৮-৯ দিনে ধান গোলায় তুলে নিবো। একই গ্রামের আরেক কৃষক সহিদ মিয়া বলেন, পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে। রোদ ওঠায় সবাই খুশি। এভাবে ১৫ থেকে ২০টা দিন পেলেই হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি