কৃষক-জেলে-মৎসজীবীদের বিরুদ্ধে ১২৬১১৯ মামলা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলায় জেলায় কৃষক হয়রানি বাড়ছে

লাখো কৃষকের মাথায় মামলার খড়গ

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম

কৃষক-জেলে-মৎসজীবীরা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিলে কোমরে দড়ি পড়ে হচ্ছে। অথচ বড় বড় ঋণ খেলাপিদের ধরা যায় না। কৃষক-জেলে-মৎসজীবীদের ২/৩ লাখ টাকা ঋণের সুদ দায়িছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায়। অনেকই আসলে পরিশোধ করেছেন। এ সুদের টাকা পরিশোধ করতে একটু দেড়ি হলেই সার্টিফিকেট মামলা নোটিশ এবং হয়রানী। ১ লাখ ২৬ হাজার ১১৯টি মামলা রয়েছে। আবার কৃষক-জেলে-মৎসজীবী আসল টাকা পরিশোধ করলোও অতিক্তি সুদের জালে পড়েছে ভুক্তভোগীরা। ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় চলছে কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলার খড়গ। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে কৃষক-জেলে-মৎসজাবীদের হয়রানী করা যাবে না। কিন্তু সারাদেশে সার্টিফিকেট মামলায় সাধারণ মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৫ বছরের উর্ধেŸ থাকা সাটিফিকেট মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পন্ন করতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভায় সভার সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

অডিট আপত্তি থেকে বাঁচতে অনেকে সার্টিফিকেট মামলা করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। অনেক কৃষক ঋণ পরিশোধ করেছেন এবং অনেক গ্রাহক আসলের বেশি টাকা পরিশোধ করেছেন তাপর সাটিফেকেট শাখা থেকে গ্রাহককে হয়রানী হয়ারনী করছে। এতে আমাদের করার কিছু নাই। এতে মামলার সংখ্যা কমলেও প্রকৃত অর্থে ব্যাংকের আদায় বাড়ছে না। এ কারণ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ব্যাংকে আসছেন। অনেক গ্রাহক আসল টাকা পরিপোধ করে ব্যাংক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন, সে আবেদন গুলো ব্যাংকের পড়ে থাকছে বছরের পর বছর।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম.রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আসলে কৃষকের হয়ারানী বন্ধে মামলা গুলো দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। এখানে কাউকে হয়রানী করা হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে করে থাকলে আমাদের কিছু করার নাই।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যপত্রে বলা হয়, সারাদেশে কৃষক-জেলে-মৎসজাবীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারী মাসে ১ হাজার ৯৬২টি সাটিফিকেট মামলা নিম্পত্তি করেছে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী অফিসরা। যা গত বছরের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ১১৫টি মামলা হ্রাস পেয়েছে। কৃষক-জেলে-মৎসজীবী-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়রানী না করে মামলা সমঝোতা করতে নিদেশনা দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের ভারে দেশের কোনো কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলেও মাত্র এক লাখ টাকার নিচে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় কৃষকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। হাজার বা শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা যখন অধরা, তখন ঝিনাইদহের ৮৩৫ জন কৃষকের নামে ঝুলছে সার্টিফিকেট মামলার খড়গ। মামলার কারণে অনেক কৃষক চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে নতুন করে এনজিওর ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন।

ঝিনাইদহ জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ৮৩৫ জন কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার বিপরীতে কৃষকের নামে ১৪৯টি, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সার্টিফিকেট আদালতে ২৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিপরীতে ১১৪টি, শৈলকুপায় ৬২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিপরীতে ১০৩টি, হরিণাকুণ্ডুতে ২৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার বিপরীতে ২৬টি, কালীগঞ্জে ৯৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার বিপরীতে ১৭৫টি, কোটচাঁদপুরে ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকার বিপরীতে ১১টি ও মহেশপুর সার্টিফিকেট আদালতে ২৬ লাখ ৭ হাজার টাকার বিপরীতে ২৭৫টি সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এসব কৃষকের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা আছে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। মার্চ পর্যন্ত ৮টি মামলা নিস্পত্তির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ৯৯ হাজার ২৭০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া ১১টি মামলা নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের কৃষকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। তারা কৃষকের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার জন্য ৩৮৮ জন কৃষকের নামে মামলা দিয়েছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংক ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আদায়ের জন্য ৮টি, জনতা ব্যাংক ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকার জন্য ৪০টি, অগ্রণী ব্যাংক ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য ৮১টি মামলা, কর্মসংস্থান ব্যাংক ২৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকার জন্য ২৮টি, ন্যাশনাল ব্যাংক ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য ১০টি, বিআরডিবি ৮৮ লাখ ৫ হাজার টাকার জন্য ৯১টি, পল্লী বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার জন্য ১৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার ও নওসীনা আরিফ ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে চাননি।

ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, মামলা গুলো সমাধান হচ্ছেনা। মামলা দেখে কৃষকরা ভয় পান। কারণ কৃষকরাই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কৃষি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হবে।

এদিকে ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ না নিয়েও সার্টিফিকেট মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মরমেছ আলীসহ আরো কয়েকজন কৃষক। মরমেছ আলী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্দিগাঁও গ্রামের মৃত অমেজ উদ্দিনের ছেলে। মরমেছ আলী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সেসহ আরো ক’জন কৃষক ২০০০ সালে বোরো মৌসুমে কৃষি ঋণ পেতে ঝিনাইগাতী জনতা ব্যাংককের মাঠ পরিদর্শকের নিকট জমির দলিল পত্রাদি জমা দিলেও তাদেরকে ঋণ না দিয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করাতে বলা হয়। অথচ ২০০১ সালে ব্যাংক থেকে তাদের নামে ঋণ পরিশোধের নোটিশ দেয়া হয়। জানা গেছে, প্রতিজন কৃষকের নামে ১০/১৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ সময় কৃষকরা ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা ও প্রমাণিত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার আব্দুল সালাম। মাঠ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ৩ কর্মকর্তাকে চাকুরী থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও করা হয়। কিন্তু কৃষক মরমেছ আলীসহ ওইসব কৃষকদের নামে ভুয়া ঋণের বিষয়ে কোন সুরাহা না করায় বর্তমানে সুদে- আসলে কৃষকদের নামে ঋণের পরিমান হয়েছে দ্বিগুণ। এসব টাকা আদায়ে জনতা ব্যাংক কৃষকদের নামে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে। মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে কৃষক মরমেছ আলীসহ কয়েক জনের নামে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মরমেছ আলীসহ অন্যান্য কৃষকদের নামে নোটিশ প্রদান করা হয়।

পতেঙ্গায় নিত্যজটে পর্যটকদের দুর্ভোগ
বঙ্গবন্ধু টানেল বিমানবন্দর সড়ক আউটার রিং রোডমুখী যানবাহনের তীব্র চাপ : অপরিকল্পিত উন্নয়নের কুফল বলছেন সংশ্লিষ্টরা
রফিকুল ইসলাম সেলিম
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। তাতে বিমানযাত্রীসহ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পর্যটকেরা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের পতেঙ্গাপ্রান্তে আরো চারটি সড়কের সংযোগস্থল। পাশেই রয়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা সৈকত। এসব সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের পাশাপাশি পর্যটকদের শত শত যানবাহন প্রতিদিন যানজটে আটকা পড়ছে। এর প্রভাবে বিমানবন্দর সড়ক, আউটার রিং রোডসহ আশপাশের সড়কেও যানজট হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টানেলের মুখে সৈকত, অথচ সেখানেই নেই কোন পার্কিং সুবিধা। রাস্তায় যানবাহন রাখার ফলে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। টানেলসহ ৫টি সড়কের সংযোগস্থল হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত ইউ-টার্নের ব্যবস্থা, নেই কোন আন্ডার ও ওভারপাস। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার এসব মেগাপ্রকল্পের সুফল মিলছে না পুরোপুরি।

চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হচ্ছে খুব সহসা। প্রায় ৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার ধারণক্ষমতার এই টার্মিনালের কন্টেইনারবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করবে পতেঙ্গা সৈকত হয়ে সিটি আউটার রিং রোড ধরে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সউদি আরব ভিত্তিক একটি কোম্পানি। যানবাহন চলাচলের জন্য খুব শিগগির খুলে দেওয়া হবে নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে সামনের দিনগুলোতে ওই এলাকায় যানবাহনের চাপ আরো বাড়বে। আর তখন যানজট সামাল দেওয়ায় কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈতকের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে সৈকতে। কিন্তু যানবাহন রাখার জন্য কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নতুন করে ঢেলে সাজানোর পর পতেঙ্গা সৈকতে পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। দেশের প্রথম সড়ক টানেল চালুর পর দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখি যানবাহন চলাচল বেড়েছে। টানেল দেখা আর সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর জন্যও অনেকে সেখানে ভিড় করছেন। তিন বছর আগে চালু হয়েছে সিটি আউটার রিং রোড। পতেঙ্গা সৈকত প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে এই সড়কটি সাগরের তীর ঘেঁষে বন্দর টোল রোড হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিশে গেছে। এই সড়কটি চালু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর ও কক্সবাজার এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখি যানবাহনের চাপ বেড়েছে। টানেল ও রিং রোড চালুর কারণে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে বিমানবন্দর সড়কেও বাড়ছে যানবাহন। সবকটি সড়কের যানবাহনের চাপ পড়ছে টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে, যেখানে ৫টি সড়কের সংযোগস্থল। আর তাতেই যানজট তীব্র হচ্ছে।

টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আগে সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির পক্ষ থেকে টানেল চালুর পর যানজটের আশঙ্কা করা হয়েছিল। বাস্তবে এখনই তা-ই হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, একাধিক ইউটার্ন, আন্ডার এবং ওভার পাস নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়। তবে তার কোনটাই এখনও করা হয়নি। এই কারণে সেখানে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায় ওই এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কে যানবাহন রাখা হচ্ছে। সিটি সার্ভিসের বাস, টেম্পু রাস্তায় দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। পর্যটকদের গাড়ি রাখা হচ্ছে সৈকত এলাকায়। আর আউটার রিং রোডের দুইপাশ যেন অঘোষিত টার্মিনাল। সেখানে ব্যক্তিগত গাড়ি আর বাসের পাশাপাশি আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনও রাখা হচ্ছে। সারি সারি যানবাহন দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি সড়ক না টার্মিনাল। সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় সড়কে যানজট এখন তিন্যদিনের ঘটনা। ঈদের লম্বা ছুটির কারণে এখনও ভারি যানবাহনের চাপ বাড়েনি। তারপরও সড়কে যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। তারা জানান, ঈদের ছুটির কারণে ভারি যানবাহন বন্ধ থাকলেও পর্যটকদের যানবাহন বেড়েছে। আর তাই সড়কে চাপও আগের মতো রয়েছে।

ফৌজদারহাটের ডিসি পার্কও যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন এই পার্কে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে। পার্কে আগত লোকজনের ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহন রাখা হচ্ছে রাস্তা দখল করে। ফলে এই জট একদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অন্যদিকে টোল রোড এবং সিটি আউটার রিং রোডেও বিস্তৃত হচ্ছে।
নগর পুলিশের ট্রাফিক (পশ্চিম) বিভাগের উপ-কমিশনার তারেক আহম্মদ বলেন, টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে পাঁচটি সড়কের সংযোগ সড়ক। সেখানে নেই পর্যন্ত ইউটার্ন, আন্ডার ও ওভারপাস। পাশেই পতেঙ্গা সৈকত। প্রতিদিন সেখানে শত শত যানবাহন আসছে। কিন্তু কোন পার্কিং সুবিধা নেই। যানবাহন রাস্তায় রাখা হচ্ছে। এতে যানজট, বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএকে বলেছি। তারা এই সমস্যা সমাধানে আরো একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতেঙ্গা এলাকায় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। পতেঙ্গা সৈকতের উন্নয়ন আর সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিডিএ। এদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ে প্রকল্পটিও সিডিএর। অন্যদিকে টানেল নির্মাণ করছে সেতু বিভাগ। দুই সংস্থার সাথে এই নিয়ে কোন সমন্বয় ছিল না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

টানেলের পতেঙ্গাপ্রান্তে গোলচত্ত্বর ছোট হওয়ায় যানবাহন আটকে যানজট হচ্ছে। আর আশপাশের সড়কে পার্কিং করায় সড়কে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টানেলের প্রবেশ মুখের কিছুটা দূরেই রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। তাতে টানলের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র জট হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট তীব্র আকার নিচ্ছে। ওই এলাকা অতিক্রম করতে ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। অনেক যাত্রী যথাসময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারছেন না। আর যানজটে নাকাল হয়ে সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ মলিন হচ্ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার শুভেচ্ছাদূত হলেন কারিনা

ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার শুভেচ্ছাদূত হলেন কারিনা

নেপালের মানচিত্রে বিতর্কিত তিন এলাকা! মুখ খুললেন জয়শংকর

নেপালের মানচিত্রে বিতর্কিত তিন এলাকা! মুখ খুললেন জয়শংকর

আমদানির খবরে হিলিতে কমেছে পেঁয়াজের দাম

আমদানির খবরে হিলিতে কমেছে পেঁয়াজের দাম

ম্যাডোনার কনসার্টে হাজির ১৬ লাখ দর্শক

ম্যাডোনার কনসার্টে হাজির ১৬ লাখ দর্শক

আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জোতানো কিংবদন্তি কোচের চিরবিদায়

আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জোতানো কিংবদন্তি কোচের চিরবিদায়

কেনিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২২৮

কেনিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২২৮

গাজায় পানিশূন্যতায় ভুগছেন দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী

গাজায় পানিশূন্যতায় ভুগছেন দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী

স্থানীয় নির্বাচনে বিশাল পরাজয়, বড়সড় অস্বস্তিতে ঋষি সুনাক

স্থানীয় নির্বাচনে বিশাল পরাজয়, বড়সড় অস্বস্তিতে ঋষি সুনাক

বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের উপর ‘ল্যান্ডিং চার্জ’ বসানোর দাবি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের উপর ‘ল্যান্ডিং চার্জ’ বসানোর দাবি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের স্বীকার ফিলিস্তিনি নারী

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের স্বীকার ফিলিস্তিনি নারী

মাতুয়াইলে ইউটার্নের সময় পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা বাসের, চালকসহ নিহত ২

মাতুয়াইলে ইউটার্নের সময় পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা বাসের, চালকসহ নিহত ২

মোবাইলের আলোয় অস্ত্রোপচার, মা ও নবজাতকের মৃত্যু

মোবাইলের আলোয় অস্ত্রোপচার, মা ও নবজাতকের মৃত্যু

নাগরিকদের রক্ষাই কানাডার উদ্দেশ্য, ৩ ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে জানালেন ট্রুডো

নাগরিকদের রক্ষাই কানাডার উদ্দেশ্য, ৩ ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে জানালেন ট্রুডো

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অবশ্যই ভারতের অংশ: জয়শঙ্কর

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অবশ্যই ভারতের অংশ: জয়শঙ্কর

রেকর্ড সংখ্যক হাজির সমাগম হবে মক্কায়, প্রস্তুতি নিচ্ছে সউদী আরব

রেকর্ড সংখ্যক হাজির সমাগম হবে মক্কায়, প্রস্তুতি নিচ্ছে সউদী আরব

রাফাহতে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, ২১ ফিলিস্তিনি নিহত

রাফাহতে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, ২১ ফিলিস্তিনি নিহত

ব্রাজিলে বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, নিখোঁজ শতাধিক

ব্রাজিলে বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, নিখোঁজ শতাধিক

যুক্তরাষ্ট্রে মা-ভাইয়ের সামনে বাংলাদেশি যুবককে হত্যা, ভিডিও প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রে মা-ভাইয়ের সামনে বাংলাদেশি যুবককে হত্যা, ভিডিও প্রকাশ

ভারতে ‘অপমানিত’ হয়ে পদত্যাগ আফগান কূটনীতিকের

ভারতে ‘অপমানিত’ হয়ে পদত্যাগ আফগান কূটনীতিকের

ঈশ্বরদী রেল ইয়ার্ডে আগুনে পুড়ল বেশ কয়েকটি স্লিপার

ঈশ্বরদী রেল ইয়ার্ডে আগুনে পুড়ল বেশ কয়েকটি স্লিপার