থাইল্যান্ডকে বিশেষ অর্থনৈতিক খাত ও চিকিৎসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব
২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডকে বিশেষ অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগের সুযোগ পরীক্ষা করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগের এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড এই সুযোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। গতকাল শুক্রবার থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও একান্ত বৈঠকের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি-একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র সই হয়। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ডে যান।
বৈঠকের বিষয়ে পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশী স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখারও প্রস্তাব দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং সংযোগ এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সাথে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বলে এ সময় উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দ্বিপাক্ষিক ওই বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ণ এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি। তিনি জানান, বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে তাঁরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বর্তমান পরিধি বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং শক্তিশালি দ্বিমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
দুই পক্ষ ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রীরা এই বিষয়ে একটি আগ্রহপত্রে সই করেছেন। থাই এবং বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের মধ্যে সহজ যোগাযোগের সুবিধার্থে ঢাকা এবং ব্যাংকক অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য একটি চুক্তি রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য থাইল্যান্ড জ্বালানি সহযোগিতায় নিয়োজিত একটি সম্ভাব্য অংশীদার। জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা অনুসন্ধান করতে, শক্তি সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এখানে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় নথি।
শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তার বিষয়ে তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি সই হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাই জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সেরা পর্যটন অনুশীলন থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আমরা পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছি। তিনি বলেন, জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই পক্ষ কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা অনুসন্ধান করেছে।
সামুদ্রিক যোগাযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রানং বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। থাইল্যান্ডের ফ্ল্যাাগশিপ ‘ল্যান্ডব্রিজ প্রকল্প’ বাংলাদেশ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে অনুসরন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমসটেক মোট ১৮০ কোটি জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান। এর আগে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন অভ্যর্থনা জানান এবং এরপর সেখানে থাই কুহ ফাহ ভবনের সামনের উম্মুক্ত স্থানে তাঁকে লাল গালিচা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন করেন।
শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইতে স্বাক্ষর করেন এবং এর আগে থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। দুই নেতা এখানে একান্ত বৈঠকও করেন। শেখ হাসিনা গভর্ণমেন্ট হাউজ ত্যাগের আগে একটি আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সুন্দরবনে অগ্নিকান্ডের দায়ভার বনবিভাগকেই নিতে হবে
এবার যে দরে কেনা হবে ধান চাল, জানালেন মন্ত্রী
দেশে প্রবেশ করামাত্রই গ্রেপ্তার কুয়েতের সাবেক মন্ত্রী
বুধবার হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সীমান্তে আরও দুই শতাধিক জান্তা সেনার আত্মসমর্পণ
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরায় পুলিৎজার পেল রয়টার্স
‘সাধারণ নির্বাচন নয়,সংবিধান বাঁচানোর লড়াই’, ভোট সকালে বার্তা রাহুলের
জনগণের সম্পদ লুটপাটে বারবার ডামি নির্বাচন : রিজভী
একই কেন্দ্রে ভোট দিলেন মোদি ও অমিত শাহ
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার আহ্বান ইতালির
উপজেলা নির্বাচনের দিনে ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভোটারদের প্রতি বিএনপির আহ্বান
বজ্রপাতে পদ্মা সেতুর টোলস্কেলের মাদারবোর্ডে ত্রুটি, ৩ কিলোমিটার যানজট
'ফ্রি প্যালেস্টাইন' স্লোগানে মুখরিত ইবি ক্যাম্পাস
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রাফায় কার্পেট বম্বিং ইসরাইলের
পরমাণু বোমা মেরে ভিয়েতনামকে ধ্বংস করতে ফ্রান্সকে প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে প্রাইভেট কারে আগুন
৯ মে হজ ফ্লাইট, এখনো ভিসা পাননি বেশিরভাগ হজযাত্রী
টাইম ম্যাগাজিনে ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় জাহিদ মালেক
কেন্দ্রে অনুপ্রবেশ, প্রভাব, অনিয়ম বন্ধে কড়া নির্দেশনা সিইসির
পশ্চিমা হুমকির জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র মহড়া চালাবে রাশিয়া