বৃষ্টি চান না হাওরবাসী
২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারাদেশ। এপ্রিলের শুরু থেকে যত দিন যাছে তাপপ্রবাহের মাত্রা বেড়েই চলেছে। দেশের গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। এখন দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে একটু বৃষ্টির জন্য মানুষ প্রার্থণা করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ পড়ছেন। বৃষ্টির আশায় দু-হাত তুলে কান্নায় চোখ ভাসাচ্ছেন। তবে এর থেকে ব্যতিক্রম হাওর এলাকা। হাাওরের মানুষ প্রার্থনা করছে কমপক্ষে আরও ১৫ দিন যেন বৃষ্টি না হয়। এরকম রোদ যেন আরও ১৫ দিন থাকে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা এখন এই প্রার্থনাই করছেন।
হাওরভুক্ত দেশের ৭টি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, এবং সুনামগঞ্জের কৃষকরা এখন বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত। হাওর জুড়ে পাকা ধান বাতাসে দুলছে। এই সোনালি ফসল ঘরে তুলতে তারা রাত-দিন একাকার করে কাছ করছে। তীব্র গরমের কারণে অনেকে রাতে চাঁদের আলোতে বা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধান কাটছেন। তারা চান তাদের কষ্টের ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে । মাঠের পাকা ধান কেটে গোলায় তোলার পর বৃষ্টি আসুক এটাই তাদের প্রত্যাশা। হাওরের কৃষকরা চান কমপক্ষে আরও ১৫দিন বৃষ্টি না হোক। হাওরের কৃষকরা বলছেন, গত কয়েকমাস কষ্ট করে ঘাম ঝরিয়ে যে সোনার ফসল ফলিয়েছেন তা ঘরে তুলতে াখেন না হয় এই গরমে আরও কয়েকটা দিন একটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবু যেন বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল এসে ফসলের কোনো ক্ষতি না করুক।
খরতাপ উপেক্ষা করেই হাওর এলাকার কৃষকরা মাঠে ধান কাটছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। অনেকে আবার রাতেও ধান কাটা বা মাড়াইয়ের কাজ করছেন। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। কারণ, গরমের চেয়ে ক্ষেতের সোনালি ফসল তাদের কাছে মূল্যবান।
নেত্রকোনার তলার হাওর, ডিঙ্গাপোতার হাওরসহ আরও অন্যান্য হাওর জুড়ে এখন সোনা রঙের ধান। বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। কোনো কোনো কৃষকের ধান পেকে গেছে, আবার কিছু ক্ষেতের ধান আধপাকা অবস্থা। সব মিলিয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মাঠের সব ধান গোলায় তোলার সময় পাবেন কৃষকেরা। মাঠের পাকা ধান কেটে শুকিয়ে গোলায় তোলা পর্যন্ত রোদের খুব প্রয়োজন। কৃষকেরা বলছেন- রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, ফসল ঘরে তোলার জন্য এটা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের জন্য ধানের খড়ও তারা শুকাতে পারছেন এই রোদে।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর গ্রামের কৃষক আজাদ মিয়া প্রায় দেড় একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। জমির কিছু অংশের ধান তিনি কেটে ফেলছেন ইতোমধ্যে। তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে গতকালও জমি থেকে ধান কাটতে দেখা গেছে তাকে। আরও এক একর জমির ধান আধপাকা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেব জমির ধান পেকে যাবে। াাজাদ মিয়া এখন তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আল্লার কাছে প্রার্থনা করছেন আর ১০-১২টা দিন যেন এভাবে রোদ থাকে। এখন যেন বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি না হয়।
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় চলছে ধান কাটার ধুম। বৈশাখের শুরুতে যে জমিগুলোতে ধান পেকেছে সেগুলো কাটার ধুম পড়েছে। বর্তমানে দম ফেলার ফুরসত নেই কৃষক পরিবারগুলোর। হাতে ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুত ধান কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র কম্ভাইন্ড হারভেস্টার। সূর্য ওঠার সাথে সাথে কৃষকরা পরিবার-পরিজন ও দিনমজুর নিয়ে সোনালি ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১২টি উপজেলায় চলছে একযোগে ধান কাটা। কৃষি বিভাগ আশা করছে- আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে জেলার সকল হাওরের জমির ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবে কৃষক। সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত ভাটি জনপদ ও হাওরের জেলায় এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার ১২ উপজেলার ১৩৭ টি হাওর জুড়ে পুবালি বাতাসে এখন দোল খাচ্ছে আধা-পাকা সোনালী ধান আর ধান। এই ধান কাটতে শুরু করেছেন এ অঞ্চলের কয়েক লক্ষাধিক কৃষক। অন্যদিকে কৃষক-কৃষাণীরা এই ধান মাড়াই ও শুকনো জন্য খলা তৈরি কাছে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউবা সেই ধান রোদে শুকিয়ে বস্তা বন্দি করে সংরক্ষণ করছেন।
কৃষকরা জানান, বৈশাখের প্রথম দিনে কষ্টের ফলানো সোনালি ধান ঘরে তুলতে পেরে সত্যি খুব আনন্দ লাগছে। এই হাওরকেই ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন, আমাদের সুখ।এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার হাওর পাড়ের কৃষক-কৃষাণী এবং বৃদ্ধ-শিশুসহ সকলই অন্য রকম এক বৈশাখী উৎসব মেতে উঠেছেন। এমনকি এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন গ্রামের বাইরে থাকা মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। এই ধান গোলায় তুলতে পারলেই হাওর পাড়ের কৃষকেরা ‘ধনী’। কোনো কারণে গোলায় ধান না উঠলে হাওর পাড়ের মানুষে মন বেদনা ভরে উঠে এবং তাদের কষ্টের আর সীমা থাকে না। কারন এই উৎপাদিত বোরো ধান দিয়ে চলে সারাবছরের সংসারের খাবার। আর এই ফসল বিক্রি করে ছেলে-মেয়ে লেখা পড়া , চিকিৎসা, বিয়ে -শাদি সহ সামাজিকতা ইত্যাদি। তাই এ ফসল ঘরে তোলার জন্য তাদের আরও অন্তত ১০ থেকে ১২ দিন রোদের প্রয়োজন। এ সময় যেন বৃষ্টি না হয় এটাই তাদের চাওয়া।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাইশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ পুতিনের, ছয় বছর ভোগ করবেন একচ্ছত্র ক্ষমতা
রাত পোহালেই ফরিদপুর ৩ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন
বিএনপির সমাবেশ: সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দেবে ডিএমপি
সোনার দাম এবার ভরিতে বাড়লো ৪৫০২ টাকা
সিরি-এ বর্ষসেরা মিডফিল্ডার ফার্গুসন
আগামীকাল হরিরামপুর উপজেলা ভোটগ্রহণ : ত্রিমুখী লড়াইেয়র সম্ভাবনা
স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে হুইল ও জোন্স
বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে একজন কেএনএফ সদস্য নিহত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার
মেসিদের লিগকে যে পরামর্শ দিলেন ফিফা সভাপতি
বজ্রপাতে নগরকান্দায় ২১ মাদ্রাসা ছাত্র আহতের ১১ জন এখনও হাসপাতালে
গোদাগাড়ীতে ৩ কেজি ৪শ’ গ্রাম হেরোইনসহ ২ জন গ্রেফতার
উপজেলা নির্বাচনে ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে মতলব উত্তরবাসী
১ বছরে আদানি গ্রিনের ২৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি
শপআপ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করলেন মামুন রশীদ
টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা
সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ৮৩ শতাংশ বেড়েছে
ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা আনলো ভিভো ভি৩০ লাইট
বাগেরহাটে যুবলীগ নেতাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগ নেতা
শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে