কলকারখানায় কমছে উৎপাদন
০৩ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম
নজিরবিহীন দীর্ঘ তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ জনজীবন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ দু:সহ গরমে কাহিল হয়ে পড়ছেন। তাতে কলকারখানাসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গ্রীষ্মের তীব্র গরম সেইসঙ্গে
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাড়ছে নানা রোগ বালাই। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে
অনেকই। এতে শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি কমছে, সেই সাথে কমছে উৎপাদন। হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আলোচনায় সম্প্রতি বলা
হয়েছে, তীব্র তাপদাহের কারণে ঢাকায় প্রতি বছর দুই হাজার সাতশ কোটি ডলার সমমূল্যের
উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু পোশাকখাতেই ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫০০
কোটি ডলার। অন্যদিকে এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত এক
গবেষণায় বলা হয়, ভ্যাপসা গরম ও অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত আবহাওয়ায় (হিউমিড হিট) শ্রম ও
উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। সেই তালিকায় শীর্ষ পাঁচ দেশের কাতারে উঠে
এসেছে বাংলাদেশ। আবহাওয়ার এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রতিবছর ৩২০০ কোটি কর্মঘন্টা
হারাচ্ছে এ দেশ। মূলত, খোলা স্থানে ভারি কাজ করা শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কমার বিষয়টি এ
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেশের চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাব বস্ত্রখাতে কিছুটা বেশি পড়েছে। তীব্র গরমের কারণে কারখানাগুলোয় শ্রমিকের উপস্থিতি কমে গেছে। অনেক কারখানায় গরম এড়িয়ে উৎপাদন ঠিক রাখতে শ্রমিকরা রাতে কাজ করছেন। গাজীপুরে অবস্থিত তৈরি পোশাকের কাঁচামাল উৎপাদনকারী একটি কারখানার উৎপাদনসংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, তীব্র গরমের মধ্যে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নিলেও সব শিফটে সমান হারে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি থাকছে রাতের শিফটে। সূত্র জানায়, বস্ত্র শিল্পের কারখানায় সাধারণ তিন শিফটে কাজ হয়। প্রথম শিফট শুরু হয় ভোর ৬টায়; শেষ হয় বেলা ২টায়। বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় শিফট। আর তৃতীয় শিফট চলে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। বর্তমানে তৃতীয় শিফটে শ্রমিকের উপস্থিতি ও উৎপাদন তুলনামূলক বেশি। বস্ত্র শিল্পোদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তীব্র গরমে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার আগ্রহ পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতি কেবল বস্ত্র শিল্পে নয়, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয়ও শ্রমিকের উপস্থিতি তুলনামূলক কম।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, কারখানার উৎপাদন এখন ৩০ শতাংশ কম শ্রমিক দিয়ে চালিয়ে নিতে হচ্ছে। প্রতিবারই ঈদের পর শ্রমিকের উপস্থিতি কম থাকে। এবারো ব্যতিμম নয়। তবে গরমের তীব্রতার কারণে উপস্থিতি আরো কমে গেছে। দেখা যাচ্ছে, রাতের শিফটে শ্রমিকের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি, ফলে উৎপাদনও রাতে বেশি।
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, নজিরবিহীন তাপপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। তাতে কলকারখানাসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গ্রীষ্মের তীব্র গরম সেইসঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাড়ছে নানা রোগ বালাই। ফলে শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি কমছে। তীব্র দহনে বেশি বিপাকে পড়েছেন নির্মাণ ও ঘাট শ্রমিক, কুলি মজুর, রিকশা, ঠেলা চালকসহ নিমড়ব আয়ের মানুষ। গরমে ক্লান্ত হয়ে আগের মতো শ্রম দিতে পারছেন না তারা। তাতে তাদের আয় রোজগার কমে গেছে। চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি তিনটি ইপিজেডসহ তৈরি পোশাক, ইস্পাত, শিপ ব্রেকিং, বন্দর, আইসিডি, নির্মাণ খাতে লাখ লাখ শ্রমিক কর্মরত। শ্রমিকদের ঘামে শিল্প কারখানা বিকশিত হলেও তাদের জীবন মানের তেমন উনড়বতি হয়নি। ভালো মানের আবাসন, সেনিটেশান, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ নানা সেবা থেকে বঞ্চিত শ্রমজীবীরা। কারখানা এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে বেশিরভাগ শ্রমিক। যেখানে নেই নূন্যতম নাগরিক সুবিধা। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতিতে দিশেহারা এসব স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজন। টানা তাপদাহের কারণে শ্রমিকদের অবস্থা কাহিল। তার সাথে যোগ হয়েছে পানি বিদ্যুতের সঙ্কট। কারখানায় বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ঘামে ভিজে কাজ করতে হয়। আবার বাসায় ফিরেও লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়। মিলছে না গোসলসহ জরুরি প্রয়োজনের জন্য পানি। তাতে দুর্বিসহ জীবন। এ অবস্থায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারখানায় কমছে শ্রমিকদের উপস্থিতি। তাতে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। যথা সময়ে পণ্য রফতানির কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অব্যাহত তীব্র গরমে শ্রমিকরা বেশি বিপাকে পড়েছে। তাদের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। অসুস্থতার কারণে শ্রমিকদের উপস্থিতি কমছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। ফলে মালিক শ্রমিক উভয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়াও অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গ্যাস, বিদ্যুতের সঙ্কটে শিল্প কারখানায় উৎপাদনে রীতিমত ধস নেমেছে। তার উপর রেকর্ড তাপপ্রবাহে শ্রমিকদের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের চেয়ে অবস্থা বেশি নাজুক, শিপ ব্রেকিং, নির্মাণ ও কৃষি শ্রমিকদের। একই দশা কুলি মজুর, ঘাট শ্রমিক, রিকশা ও ঠেলা চালকদের। প্রখর রোদে কাজ করতে গিয়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, হাঁপিয়ে উঠছেন। তাতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তাদের আয় রোজগার কমে গেছে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটে দিন কাটছে। গরমের কারণে মানুষের কর্ম ব্যস্ততা কমে গেছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাতে রিকশা চালকদের আয় কমে গেছে। একই অবস্থা কুলি মজুরদেরও। গরমের কারণে নির্মাণসহ উনড়বয়ন ও সংস্কার কাজও কমেছে। তাতে কাজ না পেয়ে বিপাকে শ্রমিকেরা।
গাজীপুর থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তীব্র তাপদাহ ও গরমে গাজীপুরে জনজীবন যেমন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে তেমনি শিল্প কারখানা গুলোতে শ্রমিকরা গরমে ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। এতে শিল্প কারখানাগুলো উৎপাদন হ্রাস হতে চলেছে বলে একাধিক শিল্প কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে। গাজীপুর জেলা ও মহানগরীর একাধিক শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তীব্র তাপদাহ ও গরমের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে হিমসিম খাচ্ছে। একদিকে যেমন তীব্র তাপদাহ ও গরম অপরদিকে এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। লোডশেডিং এর কারণে কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে অতিরিক্ত খরচে জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। এভাবে তাপদাহ, গরম ও লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে কারখানা গুলোর উৎপাদন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। জেনারেটর ব্যবহার করে অতিরিক্ত খরচে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। এর কারণ হিসেবে তারা আরো জানান অতিরিক্ত খরচ দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে কারখানা চালু রাখা অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না। উৎপাদন ব্যাহত হলে তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যাবে এবং সময় মত মালামাল সরবরাহ করতে না পারলে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। লোডশেডিং এর কারণে যে সকল কারখানা অতিরিক্ত খরচে জেনারেটর ব্যবহার করতে পারছে না ওই সকল কারখানার শ্রমিকদের লোডশেডিং চলাকালীন সময় বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর
দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে
সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির
গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা
১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য
দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার
কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫
মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?
তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে
জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন
ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু
শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন
শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক অ্যাজিভিট
বাইডেনকে তিরস্কার করে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে বিল পাস
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা : যুক্তরাষ্ট্র
৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো
মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির! ভারতে ধর্মের কার্ড খেলার ট্র্যাডিশন চলছেই
অত্যাধুনিক রকেটের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান
কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত হলেন মেজর জেনারেল তারেক
স্বামীর উপহারের টাকায় লটারি কিনে কোটিপতি স্ত্রী