শেরপুর পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়ায় মরু রুক্ষতা
০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম
শেরপুর পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরু রুক্ষতা। খাল বিল নদী নালা শুকিয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৭ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত মাটির নিচে নেমে গেছে। অনেক হস্তচালিত নলকূপে ও পানি উঠছে না। দুঃসহ গরম, প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষেতে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন। মানুষ ও পশু-পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত। পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নালা খাল বিল ক্রমাগত পলি বালু ও আবর্জনা পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। নদী ও শাখা নদীগুলো স্বয়ংক্রিয় পরিশোধন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় পলি বালু জমে ভরাট হয়ে গেছে। সেচব্যবস্থা গভীর-অগভীর নলকূপ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এ অঞ্চলের হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। সুপেয় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদ-নদীগুলো রয়েছে চরম অস্তিত্ব সঙ্কটে। শেরপুর জেলাকে ইতোপূর্বে নদী মাতৃক জেলা বলা হতো। অন্তত. দেড় ডজন নদ-নদী ছিল শেরপুর জেলায়। কিন্তু নানা কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদ নদীগুলো। অনেক নদীর গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে। চলছে চাষাবাদ। মাছের ঘের। ঘর-বাড়ি-প্রতিষ্ঠান। মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে নদী-নালা,খাল-বিলগুলো। শেরপুরের ইতিহাসে ১৬টি প্রধান নদী ও ৯টি ক্ষুদ্র নদীর উল্লেখ রয়েছে। ১৬ প্রধান নদীর নাম-ব্রহ্মপুত্র নদ, মালিঝি, সোমেশ্বরী, মৃগী, তেন্ত্রবতী, মহাঋষি, থলঙ্গ, ভোগবতী, খারুয়া, দর্শা, ভুরাঘাট, বলেশ্বরি, সুতি, মরাখড়িয়া, বৃদ্ধ ভোগবতী ও খড়িয়া নদী। কিন্তু নাব্যতা হারিয়ে ৮ নদী কালের সাক্ষী হয়ে আছে। বাকি ৮ নদী এখন ইতিহাস। ৮ নদী ব্রহ্মপুত্র নদ, মৃগী, সোমেশ্বরী ও মালিঝি নদী পূর্ব নামে পরিচিত। ৪ নদীর নাম পরিবর্তন হয়ে ভোগবতী থেকে ভোগাই, মহাঋষি থেকে মহারশি, থলঙ্গ থেকে চেল্লাখালি এবং ন্ত্রেবতী থেকে নেতাই নদী হয়েছে। বাকি নদীগুলোর বিলুপ্তি ঘটেছে। দশানি’ নামে নতুন নদীর সৃষ্টি হয়েছে। ইতিহাসের আকবর গ্রন্থ নাগবংশের ইতিবৃত্ত ও ‘শেরপুর টাউনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ বইসূত্রে প্রকাশ ১৮৮৫, ১৮৯৭ এবং ১৯১৮ সালের ভূমিকম্পে নদ-নদী,খাল-বিলের গতি পরিবর্তিন ও ভরাট হয়। অথৈ পানির মৃগী নদী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। যা এখন পৌর শহরের বর্জ্যরে আস্থানা। শহরের ড্রেন নামিয়ে দেয়া হয়েছে নদীতে। বিলীন হচ্ছে সুস্বাদু মাছ। প্রবিণরা বলেন, অনেক নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধান পাট, গম-মরিচ নিয়ে ব্যবসায়ীরা নদী পথে যাতায়াত করতেন। বিখ্যাত নেতাই নদী দখল দূষণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়। অথচ এ নদ শেরপুর পরগণার ৪৩ মাইল দীর্ঘ। মৃগী নদীর দৈর্ঘ ২৯ মাইল। ব্রহ্মপুত্র সাড়ে ১০ মাইল। মালিঝি সাড়ে ৩৫ মাইল। চেল্লাখালি ১২ মাইল। সোমেশ্বরী সাড়ে ১৮ মাইল। মহারশি ১৫ মাইল এবং ভোগাই নদী ১৬ মাইল দীর্ঘ ছিল। নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নকলার সুতি নদীকে ঘিরে বৃটিশ আমলে চন্দ্রকোণায় ছিল বন্দর। সেই নদী আজ ধানিজমিও মৎস্য খামার। ইতোপূর্বে সুতি নদীতে ট্রলার, বড় বড় নৌকা চলতো। নদী ভরাটে ধান ক্ষেত ও মাছের ঘেরে পরিণত হয়েছে। হিমালয়ের থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ চীন-ভারত হয়ে কুড়িগ্রাম-জামালপুর-সিরাজগঞ্জ-শেরপুর-জামালপুরে প্রবাহমান। এই নদও এখন বালু চর। উন্নয়ন-উৎপাদন বাড়াতে ব্রহ্মপুত্র, মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই, চেল্লাখালি নদীতে বাঁধ, স্লুইস গেট নির্মাণে তলদেশ ভরাটে চর জেগেছে। পাহাড়ি নদীগুলোয় বালু উত্তোলনে খননের অভাবে এখন মরাখাল। বিবর্তন-পরিবর্তন, প্রাকৃতিক-অপ্রাকৃতিক,ও জলবায়ুর পরিবর্তনে নাব্যতা হারিয়ে অনেক নদী এখন জলাধার। অথচ পাহাড়ি নদীগুলো খননে লাভবান হতে পারেন সরকার। নাব্যতাও ফিরবে। খননে প্রাপ্ত বালু, নুড়িসহ বিপুল খনিজ সম্পদ বিক্রিতে রাজস্ব আয়ও সম্ভব হবে। অথচ অসচেতনতায় নদী-খালগুলো ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিন। দখল-দূষণে ধ্বংস নদী রক্ষায় নেই কোন উদ্বোগ। ঝিনাইগাতী এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তিত্ব শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ¦, শরীফ উদ্দিন সরকার, আলহাজ¦, গোলাম মোস্তফা, আলহাজ¦ শাহজাহান আকন্দ, আলহাজ¦, সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব আলী ফর্সা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত দুই বছর আগে বর্ষাকালে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরসহ এ বছর এই ২বছর মিলিয়েও সেই পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি শেরপুর অঞ্চলে। ফলে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে রুক্ষ। খাল-বিল, নদী-নালা সবকিছুই পানি শূন্যতায় ভুগছে। ফসলের মাঠে বিরাজ করছে পানির জন্য হাহাকার। গভীর নলকূপ থেকে প্রতিদিন পানি সেচ দিতে হচ্ছে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে। কিন্তু সেসব সেচ যন্ত্রেও আগের মত পানি উঠছে না ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে যাওয়ার কারণে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলে ৫০-৬০ ভাগ বৃষ্টিপাত কমেছে। এবার বৃষ্টিপাত আরও কমে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এখন খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ইতোপূর্বে শেরপুরকে নদী মাতৃক জেলা বলা হলেও এখন যেন নদীহীন খালের জেলায় পরিণত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শেরপুরের পাহাড়ি নদীগুলো বন্যায় পলিতে তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খননের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
অপরদিকে, অনেক নদী নালা খাল বিল ও জলাশয় দখল হয়ে গেছে। দখলমুক্ত করতে অভিযান জরুরী।’ ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূইয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নদী ও খাল বিল খননের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের মাধ্যমে ঊর্দ্ধতন মহলে চেষ্টা চলছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। খবর পেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ঝিনাইগাতীর ধলী বিলে প্রায় ৭০ একর জমি ইতোপূর্বেই উদ্ধার করা হয়েছে। তার পর ও বেদখলের খবর পেলে তা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ভারত সরকার দায়ী : কর্নেল অলি
গাজায় ১০ দিন ধরে চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না
ইয়েমেনে তেলের ট্যাঙ্কারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
তালতলীতে জমি নিয়ে বিরোধে নারীসহ ৫জনকে কুপিয়ে জখমঃ লুটপাটের অভিযোগ
দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে : আইজিপি
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: প্রেসিডেন্ট
দুঃস্বপ্নের আসর শেষে পেলেন নিষেধাজ্ঞাও
ট্রানজিট বাতিলের হুমকি দিন সীমান্ত হত্যা শূন্য হয়ে যাবে
সুপ্রিম কোর্টে শুনানিকালে আইনজীবীদের কালো গাউন পড়তে হবে
নরসিংদীর চরাঞ্চলে বজ্রপাতে মা ছেলেসহ নিহত ৩
রাশিয়া ও ইরান একক ব্রিকস মুদ্রা তৈরির কাজ করছে: ইরান
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ৫০ জনের মৃত্যু
লিগ্যাল এইডে অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের ৩৮৪৮৮৬ মামলায় আইনি সহায়তা প্রদান
টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে নিহত ২, আহত ৪
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র নিহত
কক্সবাজারে সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
টেক্সাসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ জনে
সুইজারল্যান্ড শান্তি’ সম্মেলনে চীনকে যোগ দেয়ার আহ্বান জেলেনস্কির
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঐক্য ও শক্তির প্রতীক : ধর্মমন্ত্রী
আইন অঙ্গনে খুবই পারদর্শী ইবি শিক্ষার্থীরা: এটর্নি জেনারেল আমিন