বিরোধ মিটলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে -এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার
০৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধের জেরে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ আটকে গেছে। ফলে প্রকল্পের বাকি অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকল্পটির অধিকাংশ সাইটে কোনো কাজ হচ্ছে না। তিন বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মামলায় জড়িয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে। সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের আশা, র্যাম্পসহ পুরো প্রকল্পটি চালু হলে দিনে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা শুরুতেই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, যানজটের এই নগরীতে জট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠেছে এই দ্রুতগতির উড়ালসড়ক।
প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের শেয়ারহোল্ডারদের দ্বন্দ্বের কারণে কাজে কিছুটা গতি কমেছে। তবে নির্মাণকাজ বন্ধ নেই। কাজ চলছে সীমিত পরিসরে। ঋণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগতে পারে। বিরোধ মিটলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তবে শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান থেকে কুতুবপুর নির্মাণকাজ বন্ধ। হাতিরঝিল এলাকায় কিছু শ্রমিক দেখা গেলেও অন্য সব এলাকা শ্রমিকশূন্য। কারওয়ান বাজার, মগবাজার ও মালিবাগ হয়ে প্রায় কমলাপুর, টিটিপাড়া যাওয়া একেকটা পিলার, গার্ডার, টিগার্ডার পড়ে আছে। কোথাও কোনো কর্মযজ্ঞ নেই। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, অধিকাংশ পয়েন্টে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। চারটি জায়গায় অল্পসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিসহ কিছু কর্মী রাখা হয়েছে। কোথাও দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ, কোথাও তিন মাস কাজ হচ্ছে না। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না। এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব গিয়ে আদালতে পৌঁছেছে।
প্রকল্পের কর্মীরা জানান, গত দুই মাস ধরে কম কাজ হচ্ছে। কাজ কম থাকায় অনেক কর্মীকে ছুটি দেয়া হয়েছে। এক মাস আগে রাতের বেলাতেও কাজ চলত, এখন হয় না। অন্য ইয়ার্ড থেকে কিছু কর্মীকে হাতিরঝিল এলাকায় আনা হয়েছে। প্রকল্পের তেজগাঁও ইয়ার্ডে কাজ বন্ধ রয়েছে। কমলাপুর, টিটিপাড়াতেও কাজ বন্ধ। বৈদ্যুতিক কাজসহ সব ধরনের কাজই কম হচ্ছে। কমলাপুর ও টিটিপাড়া এলাকায় শুধু নিরাপত্তা কর্মীরাই রয়েছেন।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েক মাসে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটি দেয়া হয়েছে। মূলত টাকার অভাবে প্রকল্পের কাজের গতি কমে গেছে। টাকার সংস্থান না হওয়া পর্যন্ত কাজ এভাবে চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকারের সংশ্লিষ্টদের এই প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। কাজের গতি হারিয়ে ফেলায় প্রকল্পের মেয়াদ আবারো বাড়াতে হবে।
ইতোমধ্যে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেছেন, কিছু আইনগত বিষয় নিয়ে মামলা হয়েছে। সেই মামলাটি তাদের নিজেদের বিষয়। এতে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা মামলাটির ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা দুই পক্ষকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি, তারা যেন কোনোভাবে কাজটা বন্ধ না করে। কারণ, আমরা কাজটা দ্রুত শেষ করতে চাই। প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী, কোনো পক্ষ অর্থ জোগাড়ে ব্যর্থ হলে বাকি প্রতিষ্ঠান চাইলেই তার শেয়ার নিয়ে নিতে পারবে। সেদিকেই আগ্রহ দুই চীনা প্রতিষ্ঠানের।
জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে শুরু হয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে ওই এক্সপ্রেসওয়ে। নকশায় এক্সপ্রেসওয়েতে উঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এই র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ উদ্বোধন করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। চলতি বছরের ২০ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) গেটসংলগ্ন একটি র্যাম্প খুলে দেয়া হয়। এরপর কাজ এগিয়ে চলতে থাকলেও হঠাৎ করে কাজের গতি কমে যায়।
২০১১ সালে থাইল্যান্ডের কোম্পানি ইতাল থাই রাজধানী ঢাকায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বের এলিভেটেড এসপ্রেসওয়ের কাজ পায়। অর্থ জোগাড় করতে না পরায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয় ৮ বছর। অতপর ২০১৯ সালে চাইনিজ দুই কোম্পানি শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ও সিনোহাইড্রোকে যুক্ত করে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান হলেও এ কাজে তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইতালথাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি- ৫১, চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোণ্ডঅপারেশন গ্রুপ ৩৪, ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন-১৫ শতাংশ। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয়ের ৭৩ শতাংশের যোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ঠিকাদারি তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব আদালতে গেছে। এতে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণ সহায়তা বন্ধ করে দেয় দুটি ব্যাংক এক্সিম ও আইসিবিসি ব্যাংক। এতে করে শঙ্কা শুরু হয়েছে পুরো প্রকল্প নিয়ে। ২০০৯ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালে নির্মাণের চুক্তি হয়। নির্মাণকাল ধরা ছিল সাড়ে তিন বছর। তবে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। উড়ালসড়কটির আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮,৯৪০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৯১ কোটি টাকারও বেশি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বৈষম্য কমিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ড. খলীকুজ্জমান
২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি
বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
মলদোভায় জীবন্ত অবস্থায় বৃদ্ধকে কবর, চারদিন পর উদ্ধার
ফেনীতে বজ্রপাতে প্রাণ হারাল শিক্ষার্থী
সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাভোগী বাছাইয়ে অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে -ডা. দীপু মনি
ব্রিটেনে ধনকুবেরদের তালিকায় শীর্ষে হিন্দুজা, রাজাকে টপকালেন সুনাক!