১৪ দলীয় জোট আছে, না নেই?
০৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে এর মধ্যে থাকা দলগুলো বলেন একটি আদর্শিক জোট। কিন্তু গত নির্বাচনের পর থেকে এই জোটের শরিকদের মধ্যে কখনো প্রকাশ্যে কিংবা কখনো অপ্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের শুরু থেকে জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ জোট শরিকরা। এ থেকে স্পষ্ট যে, জোটের মিত্ররা মিত্ররা নানা কারণেই আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্ধ ও হতাশ। তবে জোট আছে কী না এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২রা মে) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, জোট অবশ্যই আছে এবং থাকবে। জোট নেত্রীর এমন বক্তব্যে শরিকদের কয়েকজন বলছেন, আসলে জোট না রেখে আওয়ামী লীগের কোন উপায় নেই। তাই জোট রাখছে তারা। এর পরও ঐক্যসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে জোটের শরিকদের ভেতরে। তবে জোট সক্রিয় হোক সেটাই শরিকরা চাইছেন।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনের আগে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে বাম ঘরানার ১১ দলের একটি জোট ছিল। সেই জোটে সাম্যবাদী দল, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টিসহ অন্যান্য দল ছিল। তারা এক সঙ্গে ১৪ দলে যোগ দিয়েছিল। এর বাইরে ন্যাপ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১৪ দলের শরিক হয়। জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির চলমান আন্দোলন মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিল এই ১৪ দলীয় জোট। কিন্তু ১০ বছরের মাথায় ওই জোটের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ জোটের শরিক দলের নেতারাই। জানা গেছে, ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারেও শরিকদের জায়গা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আর মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি শরিকরা। এর মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে সরকারে সংকুচিত হয়েছে এই জোটের কার্যক্রম। এর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বহু দেনদরবার করে অল্প কয়েকটি আসনে ছাড় পায় শরিকরা। কিন্তু নির্বাচনে তাদের দুজন ছাড়া কেউ জয় পাননি।
জোট সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে জোট শরিকদের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের অন্য দলগুলোর নেতাদের মন মানিণ্য চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। ওই নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের আসন কমিয়ে দেয় জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদেরকে ১৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হলেও দ্বাদশে তা কমিয়ে ৭ করা হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হন জোটের কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা। এর পর নির্বাচনে জোটের দুই জন জয়লাভ করেন। যারা হলেন- ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও বগুড়া থেকে জাসদের রেজাউল করিম তানসেন। কয়েকটি জায়গায় জোট শরিকদের শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র একজন প্রার্থীর কাছে পরাজিত হলে জোটের ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। নির্বাচনের পর এর পর শরিকদের কারো কারো পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নও তোলা হয় যে, এই জোটের আর কোন গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে কীনা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বেশ আগে থেকে বলে আসছেন, জোটের শরিকদের সুযোগ থাকা স্বত্বেও দল গুলো আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতেই পছন্দ করছেন। কোনভাবেই দল গোছাতে পারছেন না তাদের শরিকরা। এসব কারণে আওয়ামী লীগও জোটের শরিকদের বিষয়ে হতাশ। জানা গেছে, গত ১৫ বছরে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়া রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় নেই দলগুলো। যা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে আওয়ামী লীগেও। এসব কর্মসূচির বেশিরভাগই হয় জোটের ব্যানারে। দু-একটি দল কোনো কোনো দিবসে নিজেরা আলাদা কর্মসূচি পালন করলেও অধিকাংশই ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক।
তবে জোটের দলগুলোর দূর্বলতা রয়েছে বিষয়টি স্বীকার করলেও এর জন্য জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছেন জোটের এক শরিক দলের শীর্ষ নেতা। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, গত দ্বাদশ নির্বাচনের জোটের দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে জোট নেত্রী শেখ হাসিনার যে বৈঠক হয়, তখন তিনি জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও জোটকে আরো সম্প্রসারণ করার জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগকে চিঠি দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই চিঠি দেওয়ারও হয়েছিল। আজ পর্যন্ত সে বিষয়ে কোন ফলাফল আমরা দেখতে পাই নি। তাহলে এ বিষয়টি কোন আওয়ামী লীগ ঝুলিয়ে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ছাড়া জোটের কোন অবস্থান আসলে নেই। জোটের নেতাদের আওয়ামী লীগের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতারা আসলে সেভাবে মূল্যায়ণও করে না। কিন্তু আমরা যারা শরিক দলের রয়েছি প্রত্যেকে কোন সম্মান ও মর্যাদা চাই। সে বিষয়টি এখন আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরশীল।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট আছে কী না এ বিষয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয় জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৪ দল তো অবশ্যই আছে, থাকবে না কেন? তাদের সঙ্গে আমাদের সব সময় যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ নেই তা তো না। দুই-চার (জোটের নেতা) জন্য বিক্ষিপ্ত কি বলেছে আমি জানি না। কিন্তু যিনি সমন্বয় করেন, আমির হোসেন আমু সাহেবের উপরই দায়িত্বটা আছে, দলের পক্ষ থেকে তিনিই যোগাযোগ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, আমি খুব শীঘ্রই তাদের সঙ্গে বৈঠক (১৪ দলের) করবো। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার সঙ্গে অনেকের (১৪ দলের) নিজেরও সরাসরি যোগযোগ আছে, আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদকও যোগাযোগ রাখেন। ১৪ দলীয় জোট শরিকদের নির্বাচন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের অনেকে তো নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচনে জেতা-না জেতা আলাদা কথা। আমাদের এই জোট আছে, এবং থাকবে।
এ বিষয়ে জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতারা বলেছেন, আসলে আওয়ামী লীগের সামনে আর এই জোটকে সক্রিয় রাখা ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প নেই। কারণ কেউ এখন সরকারকে বিশ্বাস করে না। দেশে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়েছে কিন্তু সরকার কোন কিছু করতে পারছে না। আর বিএনপির বড় আন্দোলন মোকাবেলা করতেও তো এই জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবেও যদি কোন কিছু মোকাবেলা করতে হয় তাহলেও আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজন রয়ে গেছে। জোটর শরিকরা আরো বলছেন, জোটের সক্ষমতা এখনো কমে নি। জোটের বর্তমান অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগের দায় বেশি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ চাইলে যে কোন মুহুর্তে জোটের অবস্থা আবার ভাল হয়ে যাবে।
জোট নেতারা হতাশা প্রকাশ করছেন জোটের কোন বৈঠক না হওয়া নিয়ে। জোটের শরিক দলের এক নেতা বলেন, অতি শিগগির ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান জানতে পেরেছেন। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তার আগেই তারা জানতে পেরেছেন। তবে ওই বৈঠক করে হবে সে বিষয়টি এখনও তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা হয় নি।
জোটের বিষয়ে জোট শরিকদের একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেছেন, জোট আছে থাকবে ঠিক আছে, তবে জোটে ঐক্যতো থাকতে হবে! তা কি ভাবে করা যায় সে জন্য এই পুরো বছরটা আমরা আলোচনা-গবেষণার মধ্য দিয়ে থাকবো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- জোট আছে, থাকবে। তাহলে কী ভাবে জোট থাকবে সেটি নিয়েও গবেষণা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা চলছে। বৈঠক হলে- কী কাজের জোটের প্রয়োজন আছে? সেসব বিষয়ে কথা হবে। এর পরে আমরা স্ব-স্ব দলগুলো বসে আবারও গবেষণা করবো। বৈঠকের বিষয় নিয়ে আবারও জোট নেতাদের সঙ্গে গবেষণা হবে। এই বছর এই ভাবেই যাবে। বৈঠকে ঐক্য না হলে পরবর্তীতে কী করবেন? জানতে চইলে ইনু বলেন, পরেরটা পরে দেখা যাবে।
এ বিষয়ে জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ইনকিলাবকে বলেন, ১৪ দলীয় জোট হয়ে জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইচ্ছায়। আর বর্তমান বৈশ্বিক এবং জাতীয় ও আন্তজার্তিক প্রেক্ষাপটে এই জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই জোট সক্রিয় করলে সরকারেরই ফায়দা বেশি। সুতরাং আমরা চাইবো জোট নেত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
গত শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দলের মোকাবিলায় আমাদের সুসংগঠিত হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৪ দলীয় জোটকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাছে টানতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের নিজেদের সাবজেক্টিভ প্রিপারেশনের ওপর নির্ভর করে আমরা বাস্তব কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এমপি আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত নম্বরটি খুলছেন আবার বন্ধ করছেন: ডিবি
লুটপাট করে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে আ'লীগ: প্রিন্স
অ্যাকাডেমিক ব্যাংকিং সেবা ‘প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া’ চালু করলো প্রাইম ব্যাংক পিএলসি
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর সভাপতি মামুন সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ
পোশাকখাতের উন্নয়নে ইইউকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান বিজিএমইএর
দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনি সংকেত: ১২ দলীয় জোট
সংকট গভীর হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : চলছে অনুসন্ধান
পর্তুগাল বাংলা প্রেস ক্লাবে যুক্ত হলেন একদল নতুন সদস্য
কাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই : মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী
মিডিয়ার কন্ঠরোধ করে দেশকে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ নিয়ে গবেষণা চলছে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
বৈষম্য কমিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ড. খলীকুজ্জমান
২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি
বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া