উন্নয়ন ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী
১২ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় চলছে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। যদিও সেবাদাতা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে নীতিমালা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা কোনো সংস্থাই মানছে না। সেবাদাতা সংস্থাগুলো নিজেদের কাজ করতে রাস্তা কাটাকাটি করছেই। এই অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, ইত্তেফাক মোড়, টিকাটুলি, পরীবাগ, মালিবাগ, রাজারবাগ, কমলাপুর ও সেগুনবাগিচাসহ অনেক সড়কেরই বেহাল অবস্থা। কোনোটা বছরখানেক সময় ধরে, আবার কোনোটা হয়তো কয়েক মাস ধরে পড়ে আছে একই রকম বেহাল অবস্থায়। আর যানজটসহ নানা ভোগান্তিতে নিত্য অভ্যস্ত মানুষ যেন এক প্রকার মেনেই নিয়েছেন এসব। শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় হয়ে হানিফ ফ্লাইওভারগামী টিকাটুলি সড়কের চিত্র আরো ভয়াবহ। একদিকে যানজট, আরেকদিকে ধুলাবালি এতে নগরবাসীর কাহিল অবস্থা। মাসের পর মাস ধরে চলা এসব সংস্কার কাজে সবচে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন অফিস ও স্কুলগামীরা। অতিরিক্ত যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশও।
নগরবাসী বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই; চলাচল করাই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে আনতে হবে সমন্বয় ও পূর্ব প্রস্তুতি। একই সঙ্গে প্রয়োজন আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও দক্ষ কর্মী।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে (মে থেকে সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোনো সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। সড়ক কাটাও যাবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খননকাজ শুরু করলে মূল খরচের পাঁচ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলেও দিতে হবে জরিমানা। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে এমন বেশ কিছু বিধান রেখে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কাগজে-কলমে নীতিমালা করা হলেও তা মেনে চলার বালাই নেই। অথচ রাজধানীজুড়ে চলছে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল ও টিকাটুলি প্রধান সড়ক কেটে উন্নয়ন কাজ করার কারণে যানজটে ভোগান্তির অপর নাম হয়েছে ইত্তেফাক মোড়। কিছুদিন ধরে ইত্তেফাক মোড়ের যানজট রূপ নিয়েছে ভয়াবহ ও স্থায়ী আকারে। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট গভীর রাতেও শেষ হচ্ছে না। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টিকাটুলি অংশ থেকে এক দিকে ফকিরাপুল, অন্য দিকে গুলিস্তান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ হয়ে পড়ছে যানজট। যার কারণে আরকে মিশন রোডসহ আশপাশের অলিগলিও থাকে যানবাহনে ঠাসা। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করছে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। রাস্তার অর্ধেকাংশ কেটে স্যুয়ারেজের লাইন সংস্কার করছে। গুলিস্তানে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামের উত্তরের সড়ক অর্থাৎ গুলিস্তান থেকে মতিঝিলের প্রধান সড়কের একপাশে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। মতিঝিল ইত্তেফাক মোড় প্রধান সড়কে শুরু হয়েছে উন্নয়ন কাজ। রাস্তার মাঝখানের একটি বড় অংশ কেটে রাখা হয়েছে কয়েকদিন ধরে। একই এলাকার মধুমিতা সিনেমা হলের সামনের সড়ক উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। এক কথায় এই সড়ক দিয়ে যানবাহন বা মানুষ চলাচল করা একেবারেই অসম্ভব। এছাড়া টিকাটুলি আর কে মিশন রোড এলাকায় কয়েকটি সড়ক কেটে কাজ করা হলেও কাজ শেষে কাটা রাস্তার কোনো স্থানই পিচ ঢালাই করা হয়নি। এসব এলাকায় লোকজনকে চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাজারবাগ শান্তিনগর রোডে রাস্তা কাটা হয়েছে উন্নয়ন কাজ করার জন্য। শাপলা চত্বর থেকে কমলাপুরগামী মেট্রোরেলের কাজ এখনো চলছে। এর মধ্যে শাপলা চত্বর থেকে টিকাটুলি যাওয়ার পথে সড়কের মাঝ বরাবর রাস্তা কেটে কাজ চলছে। কোনো কোনো স্থানে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাটি ভরাট করা হলেও এখনো পিচ ঢালাই করা হয়নি। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে রাস্তা আড়াআড়ি কেটে রাখায় সেখানে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গভবনের পশ্চিম পাশের সড়কেও রাস্তা কেটে উন্নয়নকাজ চলছে। সেগুনবাগিচায় গত কয়েক মাস থেকেই অলিগলির সড়কে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব সড়কে ড্রেনের কাজ শেষ করে ঢালাই দিলেও এখনো রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না করায় গাড়ি ও পথচারী চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলমান রয়েছে। যার কারণে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। টিকাটুলি থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার মুখেই রয়েছে দূরপাল্লার কিছু বাসের কাউন্টার। ওই কাউন্টারগুলোর সামনে সব সময় বাস দাঁড়িয়ে থাকে। এসব বাস নিয়মিত এই একই স্থানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠনোর কারণে এখানে যানবাহনের জটলা থাকে প্রতিদিনই।
টিকাটুলি এলাকার বাসিন্দা কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন কাজের নামে কয়েকদিন রাতের বেলায় ভালো সড়ক কাটা হয়। তারপর কয়েদিন কাজ করার পরও সেই সড়ক ঠিক করা হয় না। রাস্তার মাঝখানের কাটা রাস্তাও পিচ ঢালাই না করার কারণে এলাকার মানুষের চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে খুব একটা সমস্যা হয় না, কিন্তু তারা প্রস্তুতি নিতে বিলম্ব করে। তারা মে মাসের কথা বললেও আমরা বলেছি, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঠিকাদারদের সুবিধা দেয়ার কোনো সুযোগ দেখছি না। তাদের কাজগুলো সঠিক সময়ে শেষ করতে বাধ্য করতে হবে। ঠিকাদারদের বছরের শুরুতেই একটা পরিকল্পনা দিতে হবে, কখন কে কোন সড়ক কাটবে। আর সিটি করপোরেশন তো সড়ক এবং ফুটপাথের অভিভাবক। তাকে সমন্বয়ের কাজটা করতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ
আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম
মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী
কলাপাড়ায় নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেলেন মা
প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের গলায় পরাজয়ের মাল্য
সিলেটে একদিনে ৫ থানার ওসি বদলি
সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগের দাবি
তেজগাঁও থানার হত্যা মামলা ইনু-মেনন-পলক-দীপু মনি, মামুন-রুপা-শাকিল গ্রেপ্তার
নিজ বাড়িতে কোয়াড নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাইডেন
ফিরলেন লিটনও, সঙ্গী পাচ্ছেন না শান্ত
থিতু হয়ে ফিরলেন সাকিব
হঠাৎ কেন ভারত সফরে যাচ্ছেন চীন ঘনিষ্ঠ মুইজ্জু
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ফের ৫ দিনের রিমান্ডে
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর পদত্যাগ
হেলিকপ্টারের তেল শেষ! ভোটপ্রচারে যেয়ে বিপাকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
নির্বাচনের পর শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি
রামাল্লায় ভারী অস্ত্র নিয়ে আল জাজিরা অফিসে ইসরাইলি সেনাদের হানা
শান্ত-সাকিবের সাবধানী শুরু
ট্রাম্পের সঙ্গে আবারো মুখোমুখি হতে চ্যালেঞ্জ কমলার
পরিচারককে অপমান! মেয়েকে ‘শিক্ষা’ দিতে গিয়ে বিপাকে রণবীরের বোন