ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি না পেয়ে নারীর মাথায় পিস্তল ঠেকালেন পুলিশ কর্মকর্তা

Daily Inqilab ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা

১৩ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বাড়ির নারীর কপালে প্রকাশ্যে পিস্তল ঠেকানোর ঘটনা ঘটেছে। স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে প্রবাসীকে ধরতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মারধর থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ-শিশু, এমনকি নারীরাও। আতঙ্ক ছড়াতে ছোঁড়া হয় ফাঁকা কয়েক রাউন্ড গুলি। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৩ কার্যদিবসে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের থলিয়ারা গ্রামের সউদী প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে সদর থানায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের মামলা হয়। অভিযোগ আনা হয়, নুরুল ইসলাম সউদী আরব থেকে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি। এ ঘটনায় আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এনামুল হক বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলায় গত শুক্রবার বিকেল ৫টার প্রবাসী নুরুল ইসলাম বাড়িতে আছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ধরতে সাদা পোশাকে অভিযানে যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিমসহ আরো কয়েকজন। এসময় নুরুল ইসলামের বাড়িতে তার ভাতিজার সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে একদল লোক নুরুলকে খুঁজতে বাসায় আসে। তারা তাকে না পেয়ে আক্রমানাত্মক হয়ে উঠে। এসময় অনুষ্ঠানে আসা উপস্থিত নারীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তারা নুরুল ইসলামের স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য লোকজনকে মারধর ও শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে প্রবাসীর স্ত্রী বন্যার কপালে প্রকাশ্যে পিস্তল তাক করতে দেখা যায় সাদা পোশাকে আসা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিম। সে সাথে ঘরে থাকা নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

নূরুল আলমের স্ত্রী বলেন, প্রবাসে আব্দুল কুদ্দুসকে ব্যবসায়ীক অংশীদার না করায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় ৫-৬ জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছ থেকে আলমারির চাবি নেয়। এ সময় তারা তল্লাশি করে কিছু পায়নি। কিন্তু আমাদের ঘরে থাকা প্রায় ৫ লাখ টাকাসহ গলায় থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয় এবং সুন্নতে খাৎনা করা ভাতিজাকে থাপ্পড় মারে। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম বলেন, বাদী পক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়ি চিল্লাফাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। আমার হাতে পিস্তল ছিলো। তবে কারো দিকে তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামি ধরা সেহেতু সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশানে যাইনি। সদর উপজেলা বিশ্বরোড এলাকার বাদী এসে বাড়িতে আসামির অবস্থানের কথা জানালে সেখানে যাওয়া হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন বলেন, পোশাক ছাড়া অভিযানে যাওয়া আইনসম্মত নয়। পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো অফিসার যদি আসামি ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনকার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪

হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়

হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল

রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক

রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক

রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে

রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে

ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা

ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী

আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী

পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?

পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?

‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?

‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম

মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি  -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী

মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী