খরচ পোষাতে হাইব্রিড আবাদে ঝুঁকছে কৃষকেরা
১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
কৃষক নিখিল চন্দ্র মন্ডল। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ভেলকামারী বিলে তার রয়েছে তিনবিঘা জমি। তিনি গত তিনবছর যাবত শক্তি-২ নামের হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করে আসছেন। এর আগে তিনি বিআর-২৮ জাতের ধানের আবাদ করতেন। উৎপাদন খরচ কমাতে এবং ফলন বেশি পেতে তিনি হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করছেন বলে জানান। শুধুমাত্র নিখিল মন্ডল নন। এই বিলে আরও অনেকেই এখন হাইব্রিড জাতের বীজের দিকে ঝুঁকছেন।
ওই উপজেলার বোরো চাষের সাথে যুক্ত কৃষকেরা জানান, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরী বেড়ে যাওয়া, কীটনাশকসহ বোরো আবাদে অন্যান্য উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে খরচ বেড়েছে। ফলে খরচ পুষিয়ে নিতে বোরো মৌসুমে প্রতিবছর হাইব্রিড জাতের ধান আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উফশী জাতের তুলনায় হাইব্রিড ধান চাষে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি হয়। হাইব্রিড ধান উৎপাদন পদ্ধতি উফশী ধানচাষ পদ্ধতির মতোই। অথচ হাইব্রিড ধান চাষে ফলন বেশি।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় মোট কৃষি জমি রয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯শ’ ৮১ হেক্টর (১ হেক্টর=২.৪৭ একর)। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো মৌসূমে ধানের আবাদ হয়। এবার বোরো আবাদের প্রায় ১ লাখ হেক্টর। যার মধ্যে ৬০ ভাগ হাইব্রিড জাতের ধান। গত বছর ছিল ৫০ ভাগের মত। বাজারে এসএল৮এইচ, হীরা, এসিআই-১, ২আগমণী, তেজগোল্ড ও শক্তি-২ নামে হাইব্রিড জাতের ধান পাওয়া যায়।
খুলনা জেলায় দিনে দিনে বোরো আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। আমন মৌসুমে জেলার বেশির ভাগ বিলে থাকে জলাবদ্ধ। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি হয়। এতে কৃষকের জমিতে পানি আটকে থাকে, পানি নিষ্কাসনের জন্য কোন কোন বিলে স্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হয়েছে। আবার যেসব বিল উঁচু সেসব বিলে ধানের চারা রোপনের পর থেকেই স্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে সেচ দিতে হয়েছে। আর সেচ দিতে গিয়ে ডিজেলের উচ্চমূল্যের কারণে বিঘা প্রতি খরচ প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি হয়েছে। অন্যদিকে, দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনায় মাটি ও পানিতে লবনাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। তাই পরনো জাতের বোরো ধান আবাদ করে কৃষকেরা ভাল ফলন পাচ্ছে না। ফলে কৃষি বিভাগ নতুন নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড বোরো ধানের আবাদে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করছেন। আর এতে কৃষকেরা ধানের উৎপাদন বেশি পাচ্ছেন ফলে তাদেন লাভও বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ( বিএডিসি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট (ব্রি) উপকূলীয় জেলা খুলনায় লবন সহনশীল ধন আবাদ বৃদ্ধি ও কৃষকের সহায়তায় কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় বোরো মৌসুমে নতুন নতুন উদ্ভাবিত ধানের চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে প্রদশর্নী ধান ক্ষেত দেয়াসহ কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। সরকারের দেয়া নতুন জাতের ধান আবাদকারি কৃষকরা জানালেন, নতুন এসব জাতের ধান আবাদ করে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
তবে কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানালেন, আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ উৎপাদন হয় না। যে পরিমাণ জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয় তার ৯৫ ভাগ বীজ আমদানি নির্ভর। এরমধ্যে ৯০ ভাগ বীজ আসে চীন থেকে। ৫ ভাগ আমদানি করা হয় ফিলিপাইন ও ইন্ডিয়া থেকে। ওই কর্মকর্তা জানালেন, চীন আমাদেরকে শুধুমাত্র মাদার বীজ দেয়। প্যারেন্টস বীজ দেয় না। যার ফলে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। যদি কোন কারণে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ না পাওয়া যায় তবে বোরোর আবাদ ব্যাহত হবে। তাই গবেষণা করে নিজেদেরকেই হাইব্রিড ধানের বীজ উৎপাদন করতে হবে। আমাদেরকে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। না হলে কৃষকরা বিপর্যয়ের কবলে পড়বে। দেশে বর্তমানে ২২১টি হাইব্রিড ধান জাত রয়েছে। তার মধ্যে ১১টি বাদে সবই প্রাইভেট সেক্টরের। বেশির ভাগই চীনা জাত।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)র চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ জানান, ব্রি ধান ৯৯ একটি লবনসহনশীল জাত তাই এ ধান আবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। তাছাড়া ব্রি আরও বেশ কিছু লবন সহনশীল জাতের ধান আবাদ করতে কাজ করে যাচ্ছে। ব্রি ধানের উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন জাতের ধান আবাদ করছে। ব্রি ধান ৯৯ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। এছাড়া এটি লবণ সহিষ্ণু জাত হওয়ায় এটি উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে খুলনাঞ্চলের মাটি এ ধানের ফলন ভাল হয়েছে এবার। প্রতি বিঘাতে এটির ফলন হয়েছে ২৯ মন। উৎপাদন আরও কিভাবে বাড়ানো যায় সে দিকে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
অপরদিকে, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট (ব্রি)র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান, হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ আমরা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করছি। বিশেষ করে চীন থেকে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ আমদানি করা হয়। প্রতিবছর ধানের উৎপাদন বাড়াতে হাইব্রিড ধানের আবাদ বাড়াতে হচ্ছে। প্রতিবছর লোক সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু জমি বাড়ছে না। জমি কমে যাচ্ছে। প্রতিবছর বোরোধানের উৎপাদন বাড়াতে হয়। ফলে অনেকগুলো কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তার মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ বাড়ানোটাও একটা কৌশল। তিনি বলেন, হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ আমরা উৎপাদন করতে না পারলেও হাইব্রিডের কাছাকাছি কিছু ধানের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ব্রি-৮ জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে কাজ করছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আইবিটিআরএ-তে ‘সার্টিফিকেশন কোর্স অন ট্রেজারি ডিলিংস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু
শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় হর্ন বাজানোয় নতুন নির্দেশনা
খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের জরুরী মতবিনিময় সভা
উন্মুক্ত অনলাইন রিটার্ন সিস্টেম, দাখিল ২০ হাজার
চার হত্যা মামলায় ফের ৮ দিনের রিমান্ডে গোলাম দস্তুগীর গাজী
‘দ্রুত’ নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রবাসীদের নতুন এনআইডির আবেদন
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পুলিশ সংস্কারে সহায়তা করতে চায় জাতিসংঘ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে না.গঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ আহত ১০
২১ দিনে ১ মাসের চেয়েও বেশি রেমিট্যান্সএলো
সোনারগাঁওয়ে নারীর লাশ উদ্ধার।
হঠাৎ অশান্ত ক্রীড়া পরিদপ্তর, ক্রীড়া অফিসারদের ধর্মঘটের ডাক
আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মনসুরুল হকের পদত্যাগের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে ছাত্র জনতার সড়ক অবরোধ
চবিতে একদিনেই ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেলেন ২৩ জন
মাদারীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত
না.গঞ্জে চাঞ্চল্যকর মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি
কালিয়াকৈরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ
ইসরাইলের রাফায়েল প্রতিরক্ষা কোম্পানিতে হামলা হিজবুল্লাহর
ঈশ্বরগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
খুলনার কয়রায় হরিণের মাংস উদ্ধার
নগদের বোর্ড স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে- গভর্নর