দখলে-দূষণে মরছে ফরিদপুরের নদী
২৫ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ফরিদপুরে দখল দুষণে মোট ৭টি নদ-নদী। বেকার হচ্ছে নানান পেশার শ্রমজীবী মানুষ। পাশাপাশি পদ্মার পলিতে এবং ভুমিদস্যুদের দখলি ভরাটে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদগুলো। তেমনি ফারাক্কার প্রভাবে প্রমত্তা পদ্মার ফরিদপুর শহরমুখী অংশে তথা কুমার ও পদ্মার সংযোগস্থল মদনখালী পয়েন্টে দশ্যমান ৪ কি.মি নদ ভরাট হওয়ায় পদ্মার প্রধান শাখা নদ কুমার, মধুমতি, ভুবনেশ্বর, চন্দনা, বাড়াশিয়াও ভরে গেছে পদ্মার পলিতে।
বছরের ৬ মাস পানির প্রবাহ না থাকার কারনে যৌবনা কুমার, বারাশিয়া, চন্দ্রনা, মধুমতি নদ এখন মৃত প্রায়। এই কুমার নদ দিয়ে বৃহত্তর ফরিদপুর শহর হতে সদর থানার খাবাসপুর লঞ্চঘাট থেকে নৌকায় করে সব ধরনের ব্যবসা পরিচালিত হতো।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা সদরের ডিক্রীরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হায়দার আলী খান এবং নর্থচ্যানেল আওয়ামী লীগের সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন, ফরিদপুর হাজী শরীতুল্লাহ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান লাভলু, ফরিদপু মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. বজলুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, বিগত ২৫/৩০ বছর আগেও পদ্মা নদীর মদন খালী হতে সদর থানার খাবাসপুর ঘাটে এসে লঞ্চ যাত্রী নিয়ে যেতে ভিড়তো বহু ছোট বড় নৌকা। এখন পদ্মার প্রধান পয়েন্ট তথা (মদনখালীর পয়েন্ট) পদ্মা-কুমার নদীর প্রধান সংযোগস্হল তথা কুমার নদে উজান থেকে ধেয়ে আসা পলিতে কুমার নদেরম পানি প্রবেশের উৎস মুখটি ৫/৬ আগেই পদ্মার পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে কুমার নদসহ উল্লেখিত নদগুলো এখন মরা খাল।
গত বছর মরা কুমার নদের প্রায় ৬০ কি.মি. খননের পর দুই পাড় ধ্বসে আবারও ভরাট হয়ে গেছে। জনগণের কোন উপকারে আসেনি নদী খননে। খননের সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় দুই শ’কোটি টাকা। পুরো টাকাই পানিতে গেছে। মাঝখানে হয়েছে শুধু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের (সাবেক কমিটির) নেতাদের মাটি লুটের বাণিজ্য। পদ্মার সাথে আংশিক সংযোগ আড়িয়াল খাঁ, মধুমতীর। কুমার-ভুবনেশ্বর নদের দু’দিক থেকে এসে মিলিত হয়েছে। দুই নদের পানি শুকিয়ে যাওয়া, কুমার, মধুমতী, ভুবনেশ্বর নদও শুকিয়ে এখন মরা খাল। বালুর মাঠ, শিশুদের খেলার মাঠ, কোথাও ধান ক্ষেত, কোথাও চলে গানবাজনা। এই নদগুলোর প্রধান নদ কুমারই পানি শূন্য হওয়া হাজার হাজার জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন।
পাশাপাশি দখলদারদের কারনে ময়লা আর্বজনায় ও ভরাট হয়ে নদের দুই পাড় চেপে আসায় বিশাল নদ এখন সরু হয়ে আসায় ছোট ডিঙি নৌকা চলাচলের পানি নেই। সাথে চলছে দখল ও স্থানীয় বৃহত্তর দুটি বাজারের সবধরনের ময়লা আর্বজনা, হাট বাজারের গরু মহিষ, ছাগল, ভেড়া, বকরি জবেহ এর পঁচা বর্জ্য, হাজার বাসা বাড়ীর ময়লা অব্যাহতভাবে নদে ফেলায় মাছ ও নদের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। ফলে দেশি প্রজাতির মাছ পানির পঁচা গ্যাসে কোথায় কোথাও মরে ভেসে উঠছে। আবার বহু দেশি মাছ মরে পানিতে তলিয়ে পঁচে গেছে মাটিতে।
মাছের প্রজননের যে পরিমাণ পানির ঘনত্ব দরকার তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পানি শূন্য নদগুলোতে মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে উল্লেখিত নদগুলো।
বিগত ২০/২৫ বছর আগে এই নদগুলোর উপর নির্ভর করে কমপক্ষে ৪/৫ হাজার বৃহত্তর ফরিদপুরের নৌকায় করে আসা ব্যবসায়ীরা জনাকীর্ণ অবস্থায় করে তুলতো ফরিদপুর সদর থানার খাবাসপুর লঞ্চঘাটটি।
এই নদগুলোতে সারা বছর নানান প্রজাতির মাছ শিকার করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতো এই অঞ্চলের ১২/১৪ শত জেলে পরিবারের। প্রধান শাখা নদগুলোতো পানিও নেই। নদগুলোতে মাছ নাই। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে শত শত জেলে পরিবারের কয়েক হাজার সদস্য। তারা আজ পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। পাশা-পাশি কুমার নদের দুই পাড় দখল হয়ে নদের পাড়ে দোকান পাট ও বাসাবাড়ি নির্মান করায় নদী হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ।
বিভিন্ন পেশার মানুষগুলো ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাট হয়ে, মদনখালী মোহনা থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সামগ্রী নিয়ে অল্প খরচে নিরাপদে ও আরামে ভ্রমনের আদলে, বিভিন্ন পণ্য নিয়ে, ভাঙ্গা,সদরপুর, নগরকান্দা, মধুখালী, সালথা উপজেলা সদরের হাট বাজারে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতো। শত শত পরিবারও জীবন জীবিকা চালাতো নদী পথ নির্ভর হয়ে। ফরিদপুর সিত্রন্ডবি ঘাটের ৩শ’ মৎস শ্রমিকরাও এখন বেকার হয়ে পড়ছে।
আগে কুমার নদীসহ ৫টি নদের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করায়, মাঠে তিন ফসলি বাম্পার ফলনও হতো। প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকা এবং ফসলের মাঠে ভরে যেত পদ্মার নতুন পানিতে। শত শত বিঘা ফসলের মাঠে ফুটে উঠতো শাপলা, শালুক। দৃষ্টি নন্দন বিল হাওরে উড়ে আসতে নানান প্রজাতির অতিথি পাখি।
বাস করতে দেশী ১০ প্রজাতির পাখিও। বিল হাওরের শামুক এবং ঝিনুক ও শামুক কুঁড়িয়ে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। এসবই এখন বিলুপ্তির পথে। কুমার নদ দিয়ে মাটির হাড়ি পাতিল বাসন। নিয়ে নৌকায় যোগে মুকসুদপুর বাজারে গিয়ে বিক্রি করতো সুকেশ জাইলা এখন তিনিও পেশা পাল্টিয়ে ফরিদপুর কানাইপুর বাজারে ভ্যানে কাঁচা তরিকারী বিক্রি করন। সপ্তাহে ২ দিন কুমার নদ দিয়ে কাশিয়ানি ও ট্যাংরাখোলা বাজার নৌকা চালিয়ে পাঠের পাইকার নিয়ে বাণিজ্য করতো গনেশ মাঝি। এখন সেই নদের গভীরতা নেই আর নৌকাও চলে না
ফারাক্কার প্রভাবে উজান থেকে ধেয়ে আশা পলি পড়ে প্রমওা পদ্মার বুকে ফরিদপুর অংশের কুমার নদের পানি আসার প্রবেশ মুখ বন্ধ ফলে এতদাঞ্চলের ৫টি নদে পানির কোনরকম প্রবাহ নেই।
অপরদিকে, ফরিদপুর হাজীশরীয়তুল্লা বাজার ব্রীজের এপার ওপারে পাল্লা দিয়ে নদীতে ময়লা আর্বজনা এবং গরু ছাগল হাঁস মুরগীর বর্জ এবং কাঁচাবাজারের ময়লা ফেলায় ৫০ বছরের ঘাটলাটি মৃত্যু প্রায়। পাশেই আর্বজনায় ডুবে গেছে ঘাটলার দক্ষিণ পাশে। বাজারের পরিবেশ দুষন হচ্ছে পঁচা গন্ধে।
মাদারীপুর শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা নদও কুমার নদ। ওই নদের মুখেও চর পড়ে শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে নদ। এই সুযোগে কুমার নদের জেগে ওঠা চরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একের পর এক নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করছে স্থানীয়রা। ক্রমাগত দখলদারের সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চৌগাছায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা
মজিব সভাপতি, সাইফুল সম্পাদক নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার
তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ
কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন
কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ
চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭
শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে
নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি
সিলেটের সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি সাবেক ওসি মঈন গ্রেপ্তার
‘নতুন বাংলাদেশকে’ জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস
দেশের অর্থনীতির জন্য পায়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-উপদেষ্টা বি:.জে:.(অব:) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন
শ্রীনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আটক, হত্যা মালা দায়ের।
কারখানা ভাঙচুর চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুরে ৬ জন আটক
কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ
শ্যামল দত্তকে, কারাগারে প্রেরণ
আরও দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার কবির
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন: জেলেনস্কি