চবি’র মেরিন সায়েন্স অনুষদে ভয়াবহ সেশনজট
২৫ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
সশন জটে জর্জরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ। এই অনুষদের ৩টি বিভাগেই রয়েছে ভয়াবহ সেশনজট। জট থাকায় শিক্ষার্থীদের ৪ বছরের অনার্স শেষ করতে লাগছে ৬ বছর, মাস্টার্সের ১ বছরের কোর্স শেষ করতে লাগছে দেড় বছরের বেশি সময়। নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা।
চবি মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত রয়েছে ২টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট। বিভাগগুলো হলো- ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস, ফিশারিজ ও ওশানোগ্রাফি। এর মধ্যে ফিশারিজ ও ওশানোগ্রাফি বিভাগে সেশনজট তুলমূলকভাবে বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদে প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় মোট ৯০ জন। এর মধ্যে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সে ৪০ জন, ফিশারিজ বিভাগে ২৫ জন ও ওশানোগ্রাফি বিভাগে ২৫ জন ভর্তির সুযোগ পায়। ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সে শিক্ষক আছেন ১৯ জন, ওশানোগ্রাফি বিভাগে শিক্ষক আছেন ১২ জন, ফিশারিজ বিভাগে শিক্ষক আছেন ৩ জন।
জানা যায়, এই অনুষদের মেরিন সায়েন্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় বসতে পারেনি। ভয়াবহ অবস্থা বাকি দুই বিভাগেরও। ওশানোগ্রাফি বিভাগে ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের রেজাল্ট এখনো বের হয়নি। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের রেজাল্ট পেতে সময় লেগেছে ৮ মাস। ফলে অনার্স চারটি ব্যাচ ও মাস্টার্সে একটি ব্যাচ রানিং থাকার কথা থাকলেও সেখানে ডিপার্টমেন্ট ভেদে রানিং ব্যাচের সংখ্যা পাঁচের অধিক।
তিন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে সম্মতি জানাননি। নাম প্রকাশ হলে সমস্যা হতে পারে এই ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা ইনকিলাব প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষক ও লোকবল সংকট, শিক্ষকদের উদাসীনতা, সঠিক সময়ে খাতা না দেখা, সময় মতো রেজাল্ট প্রকাশ না হওয়া এবং প্রশাসনের তদারকি ও সুনজরের অভাবেই এই জট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ অথচ আমরা এখনো পরীক্ষাতেই বসতে পারিনি৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিশারিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সেশনজট কমানোর বিষয়ে শিক্ষকরা বারবার নিজেদের চেষ্টার কথা বলেন, করোনায় সৃষ্ট সেশনজটের কথা বলেন। লোকবল সংকটের কথা ঠিক হতে পারে। তবে আরেকটু চেষ্টা করলে এটা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়।
তবে শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই অনুষদের কয়েক শিক্ষক ও কর্মকর্তার সাথে বলে কেবল আশার বাণী শোনা যায়। এই অনুষদের শিক্ষকদের মতে, সেশনজট একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। পূর্বে ভবন ও নানান সমস্যা থাকায় জট অনেক বেশি ছিল। তবে নতুন ভবন হওয়ায় জটের পরিমাণ দিনদিন কমে আসছে।
ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, এই বিভাগে সেশনজট ধারাবাহিকভাবেই অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। আজ থেকে ২০ বছর আগেও ৫ বছরের কোর্স শেষ করতে ১০ বছর সময় লাগতো। তবে বর্তমান সময়ে সেশন জট কমে আসছে। যেটা সমস্যা সেটা হচ্ছে রেজাল্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া। অনেক শিক্ষক মার্ক সাবমিট না করায় এটা করতে দেরি হচ্ছে। আমার মনে হয় এখানে পরীক্ষা কমিটিকে ভূমিকা নেওয়া উচিৎ।
ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আজম খান বলেন, বর্তমানে আমাদের বিভাগে মাস্টার্সের কোন ব্যাচ নেই। জট কমাতে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। এই বিভাগে শিক্ষকদের সংকট রয়েছে। এজন্য এটা বলা যাবে না আমরা কোয়ালিটি এডুকেশন দিতে পারছি না। শিক্ষক সংকটের কথা বিভাগ থেকে বরাবরই আমরা বলে আসছি। যেটুকু সেশনজট আছে অচিরেই দূর হবে।
মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, গতকাল প্রো ভিসি আমাদের এখানে এসেছিলেন। তিনি ৩টি বিভাগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসে সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। সেশনজট নিরসন ও একাডেমিক সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের অনুষদ দীর্ঘদিন ধরে জটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে এটা কমে আসছে।
বিভাগগুলোয় শিক্ষক ও জনবল সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিগত ভিসি’র সময় থেকেই অবিহিত করে আসছি। সমস্যা সমাধানে আমরা তিন বিভাগের সমন্বয়ে একটা কমিটি করছি। আমাদের অনুষদ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি একাডেমিক ক্ষেত্রেও সৌন্দর্য ফিরবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমিক) প্রফেসর বেণু কুমার দে বলেন, আমি ওই অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসেছিলাম। শুধু ওই তিন বিভাগ নয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিভাগগুলোয় জট আছে সবগুলো নিয়েই কাজ শুরু করেছি। খুব শীঘ্রই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এর সুফল পাবে। ভিসি আমাকে দায়িত্ব বুঝে দেওয়ায় আমার কাজ করতে সুবিধা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চৌগাছায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা
মজিব সভাপতি, সাইফুল সম্পাদক নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার
তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ
কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন
কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ
চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭
শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে
নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি
সিলেটের সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি সাবেক ওসি মঈন গ্রেপ্তার
‘নতুন বাংলাদেশকে’ জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস
দেশের অর্থনীতির জন্য পায়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-উপদেষ্টা বি:.জে:.(অব:) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন
শ্রীনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আটক, হত্যা মালা দায়ের।
কারখানা ভাঙচুর চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুরে ৬ জন আটক
কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ
শ্যামল দত্তকে, কারাগারে প্রেরণ
আরও দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার কবির
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন: জেলেনস্কি