স্থবির বন্দর বাণিজ্য
২৭ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক ব্যবসা, বাণিজ্য আমদানি রফতানি কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের সকল কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দর এখন পুরোপুরি জাহাজশূন্য। আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের শুল্কায়ণও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রাজস্ব আহরণ স্থবির হয়ে পড়ে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয় গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে। বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের প্রথম সড়ক টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলোতেও পণ্য খালাস বন্ধ। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলগুলোতে কল-কারখানায় উৎপাদনের চাকা থমকে গেছে। ঘুর্ণিঝড়ে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলিসহ উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাহাড় ধসে প্রাণহানী এড়াতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঘুর্ণিঝড় পরবর্তি উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনায় যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের আশঙ্কায় বন্দরের জেটি থেকে ১৬টি জাহাজ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বহির্নোঙ্গর থেকে ৪৯টি জাহাজকে গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জেটি থেকে সর্বশেষ কনটেইনার পরিবহন চলছিল, সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া, কনটেইনারসহ পণ্য ওঠানামা ও খালাসসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর ছয় নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর শনিবার রাতে নিজস্ব ‘অ্যালার্ট-থ্রি’ অর্থাৎ বিপদ সংকেত জারি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর বন্দর তাদের নিজস্ব ‘অ্যালার্ট ফোর’ জারি করেছে। বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ডে থাকা সকল ক্রেন, পল্টুন, কনটেইনারসহ সকল সরঞ্জাম সুরক্ষার কথা বলা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করে, যেটি ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ আছে। কর্ণফুলী নদীতে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল ও ঘাটে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ আছে। পতেঙ্গাসহ নগরীর এবং নগরীর আশপাশের সবকটি বেসরকারি ডিপোতে পণ্য ওঠানামাও বন্ধ।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বলেন, দুপুর ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সকল ধরনের ফ্লাইট অপারেশনসহ সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এরপর আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে অপারেশন বন্ধের মেয়াদ বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ১২ ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের সম্ভাব্য আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে টানেল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল, ট্রাফিক ও ইএমই) মো. নজরুল ইসলাম। পরবর্তী আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৫টায় টানেলের উভয়প্রান্তের চারটি ফ্লাড গেইট বন্ধ করবে টানেল কর্তৃপক্ষ। তবে সাগরে পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ মিটার পর্যন্ত টানেলে পানি প্রবেশ করবে না। তবে এর বেশি হলে টানেলের ভেতরে পানি প্রবেশের ঝুঁকি থাকবে। কিন্তু ফ্লাড গেইট বন্ধ থাকলে পানি টানেলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। টানেলের সুরক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সার্ভিলেন্স টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন হয়। ওই বছরের ১৩ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে নিরাপত্তামূলক সতর্কতা হিসেবে প্রথমবারের মতো টানেলটি সাময়িক বন্ধ রেখেছিল সেতু কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলি ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতেই গতকাল দিনভর ব্যস্ত ছিল শ্রমিক, কর্মচারীরা। বিগত সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে শিল্প কারখানার নিচতলা ও গুদাম প্লাবিত হয়। এবার তাই সম্পদ রক্ষায় আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শ্রমিকদের উপস্থিতি গতকাল ছিল কম। তাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জে ব্যস্ততা কমে যায়। সড়কপথেও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মহেশখালীতে এলএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় গতকাল দিনভর অনেক শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ ছিল। তবে বিকেল নাগাদ গ্যাস সরবরাহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রূপান্তরিত গ্যাস সরবরাহ কোম্পানির কর্মকর্তারা।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চসিকের ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি কর্পোরেশন। গতকাল টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে এক জরুরি সভায় এ ঘোষণা দেন মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র বলেন, সোমবার চসিকের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
চসিকের সবগুলো বিভাগ দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্রিয় আছে। রেড ক্রিসেন্টও সহযোগিতা করছে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সাথেও যোগাযোগ চলছে। পাহাড়ের পাদদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা নাগরিকদের সরিয়ে নিতে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়ে মেয়র বলেন, উপকূলীয় এলাকা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে। সভায় প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি বলেন, ৪১টি ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি যাতে নালায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য ছোট ছোট টিম গঠন করে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলছে। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা বলেন, কন্ট্রোল রুমের সাথে সমন্বয় করে ৩ শিফটে ৩টি মেডিকেল টিম ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকছে। এছাড়া ৬টি উপকূলীয় ও পাহাড়সমৃদ্ধ এলাকার জন্য গঠন করা হয়েছে স্পেশাল টিম। সভার পর মেয়র পতেঙ্গা সী-বিচ সংলগ্ন জেলেপাড়াসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ সময় ৭৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও ১১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কিল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ প্রস্ততি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকায় উপকূলবর্তী এলাকা এবং পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নিতে বলা হয়। এছাড়া সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম কর্তৃক ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, আর্বান ডিসপেন্সারি ৯টি এবং ৫টি জেনারেল হাসপাতালসহ মোট ২৯৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কেউ মাংস দিতে চায় না, তাড়িয়ে দেয়
পশু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ৯৪
হরিরামপুরে সাপের কামড়ে দেড় বছরের শিশুর মৃত্যু
ফৌজদারহাাটে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত
৭ দিনে পদ্মা সেতুতে ২৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা টোল আদায়
যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন নেতানিয়াহু
কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে ‘রুচিতে বাধে’ ফখরুলের
ইউরোয় ‘বড় কিছুর’ লক্ষ্য রোনালদোর
ছোট পুঁজি নিয়েও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম: শান্ত
কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা সোহাগ তালুকদার আর নেই
জনগণের মধ্যে ‘ঈদের আনন্দ নেই: মির্জা
ঈদ জামাতে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন আ জ ম নাছির
সাড়ে ৩টার মধ্যে ৮০ শতাংশ বর্জ্য পরিষ্কার করেছে চসিক
মুসল্লীদের সাথে ভিজে ঈদ জামাতে শরীক হলেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান
ঈদ মোবারক
বৃষ্টির তান্ডবে সিলেটে ঈদ উৎসবের সর্বনাশ : পশু জবাইয়ের আমেজে ভাটা
শাসকগোষ্ঠী উল্লাসের ঈদ করছে আর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় চলছে শোকের মাতম : রিজভী
ঈদের দিনেও রাজধানী ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ
কুড়িগ্রামে কচুক্ষেতে মিললো কীটনাশক ব্যবসায়ীর গলা কাটা লাশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপন দুই ভাই নিহত