পানিবন্দি লাখো মানুষ
২৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ১২:১১ এএম
ক্রমেই দুর্বল হয়ে কেটে যাবার পথে ‘রিমাল’। গতকাল সোমবার আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ (সিরিজের ১৯ নম্বর) বিশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, খুলনার কয়রায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ ক্রমেই আগের গতিমুখ উত্তর দিকে অগ্রসর এবং দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে কেটে যাবে। এদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উপকূল অতিক্রম করলেও এর এখনো তীব্র প্রভাব রয়েছে। সমুদ্র উপকূলের প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দা, নাবিক ও জেলেরা জানান, বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর উপকূল এখনো প্রচণ্ড উত্তাল অশান্ত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার ট্রলার নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’র প্রভাব এখনো সক্রিয় ও প্রবল। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকা সত্ত্বেও মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দেয়া ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে দেয়া ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত থেকে হঠাৎ এক লাফে সঙ্কেত ৩ নম্বরে নামানো নিছক তামাশা বৈ কী! কেননা সমুদ্র বন্দরসমূহ গতকাল পর্যন্ত কোন জাহাজ নৌযান ভিড়া কিংবা অপারেশানাল কার্যক্রমের জন্য আদৌ উপযোগী ছিল না দুর্যোগপূর্ণ টালমাটাল আবহাওয়া পরিস্থিতি। সৈকতে আছড়ে পড়ছে পাহাড়সম ঢৈউ। এহেন বৈরী আবহাওয়াকে আমলে না নিয়ে হঠাৎ সঙ্কেত তলানিতে নামিয়ে নেয়ার মতো খামখেয়ালিপনার দায় নেবে কী চার সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ নাকি আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি জারিকারক আবহাওয়া বিভাগ? গতকাল এ নিয়ে অনেককেই আবহাওয়া বিভাগের দায়িত্বহীনতার সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
এদিকে ‘রিমালে’র বর্ধিত প্রভাবে দেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো ঝাপটায় উপকূলজুড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলের অনেক এলাকা প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত রয়েছে। এর ফলে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। বিশেষত বেড়িবাঁধ ভেঙে একের পর এক গ্রাম তলিয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ গত রোববার সন্ধ্যা ও রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার আয়তনের বিরাটাকায় এই ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এবং ঝড়ের তোড়ে জলোচ্ছ্বাস অনেক জায়গায় রেখে গেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ‘রিমালে’র আঘাতে বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়। কৃষি-খামার, মৎস্য ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক।
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’র আঘাতের সাথে প্রবল জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলসমূহ। সরকারি হিসাবে সব মিলিয়ে উপকূলবর্তী ১৯টি জেলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভোলা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণের উপকূলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি সাধিত হয়েছে ব্যাপক। রিমালের তাণ্ডবে এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পৌনে ৩ কোটি গ্রাহক। এখন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ গত রোববার সন্ধ্যা ও রাত থেকে গতকাল ভোর সকাল অবধি দেশের দক্ষিণ উপকূলভাগে দীর্ঘ আট-দশ ঘণ্টা সময় ধরে তাণ্ডব চালায়। মধ্যরাতে ও এর পরে ঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’র মূল কেন্দ্র বা ‘চোখ’ মোংলার পাশ দিয়ে সুন্দরবন হয়ে পটুয়াখালী থেকে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা উপকূলে আছড়ে পড়ে মধ্যরাত নাগাদ। মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল ভাটা।
এরপরই জোয়ারের সময় শুরু হয়। মধ্যরাতের পর থেকে সকাল পর্যন্ত চলেছে জোয়ার। সামুদ্রিক জোয়ারের এই পীক টাইমে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তোড়ে শুরু হয় জলোচ্ছ্বাস। স্থানভেদে ৮ থেকে ১০/১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ উপকূল। প্রবল জোয়ার জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে একের পর এক গ্রাম ডুবে গেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর, বেড়িবাঁধ, গাছপালা। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক শ’ মাছের ঘের ভেসে গেছে। তাছাড়া সবজি ও ফসলি জমি ডুবে আছে জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অনেক এলাকা। বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচিয়ে লোকালয় হু হু করে জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে। দক্ষিণের উপকূলে সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে আছে সুন্দরবনের ব্যাপক এলাকা। বন্য প্রাণিকুলের জীবন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোংলার কাছাকাছি দিয়ে বাগেরহাট, পটুয়াখালী, সুন্দরবন, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কি.মি., যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে শিগগিরই আরেকটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। এমনটি জানান আবহাওয়া-জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সূত্র। চলতি বছরে (বিশেষত এপ্রিল মাসে) ৭৬ বছরের রেকর্ড অতিক্রমকারী একটানা উচ্চ তাপদাহ, ৪৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে খরা-অনাবৃষ্টি এবং ৫২ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রে পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘটা বিরাজ করছে। আবহাওয়ায় বৃষ্টিপাত নিরোধক উষ্ণ বলয় ‘এল নিনো’র প্রভাব বিরাজ করছে।
অতিবৃষ্টির রেকর্ড : আবহাওয়া পরিস্থিতি : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গতকাল সারা দিনে দেশের অনেক এলাকায় অতিবৃষ্টির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড চট্টগ্রামে ২৩৫ মিলিমিটার। এ সময়ে রাজধানী ঢাকায় ১৫১, খুলনায় ১৬৩, বরিশালে ১৪৭, কুতুবদিয়ায় ১৮৭, সাতক্ষীরায় ১৭২, পটুয়াখালীতে ২১১, রাজশাহীতে ৫৯, সিলেটে ৫১, ময়মনসিংহে ৫৬, চাঁদপুরে ১৩৯ মি.মি.সহ সমগ্র দেশে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে আসে তেঁতুলিয়ায় ৩৩.৪ এবং সর্বনিম্ন রাঙ্গামাটি ও গোপালগঞ্জে ২৪.৫ ডিগ্রি সে.। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৭.১ এবং সর্বনিম্ন ২৫.৭ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ আরো জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণীঝড় রিমাল উত্তর দিকের স্থলভাগে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এটি যশোর ও এর সংলগ্ন এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত এবং কেটে যেতে পারে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। ###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার
গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান
হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন