ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১
মালচিং পদ্ধতি

করলা চাষে জোহরা বেগমের চমক

Daily Inqilab কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা

২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম

প্রথমবার পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন জোহরা বেগম। টানাটানির সংসারে ৪০ শতক জমিই ছিল তার শেষ ভরসা। সেই জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে একজন সফল চাষী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। কখনো কখনো লোকসান পোহালেও দমে না গিয়ে হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে আবার নতুন উদ্যোমে চাষাবাদে মনযোগ দিয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলায় সবজির জন্য খ্যাত রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ী এলাকার বাসিন্দা জোহরা বেগম। সংসারে তিন মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটাতেন। স্বামী মনসুর আলী টুকটাক কাঠ কিনে ছ’মিলে বিক্রি করতেন। লাভ তেমন হতো না। নিজেদের ৪০ শতক জমি বর্গা দেয়া ছিল। অভাবের কারণে বিভিন্ন সমিতিতে যুক্ত হন জোহরা বেগম। সেখানে প্রশিক্ষণ ও সাহস পেয়ে নিজেই জমিতে চাষাবাদের কাজে লেগে পরেন। তার কাজে ছেলে-মেয়েরাও সাহায্য করতো। জমিতে তিনি বিভিন্ন সিজনে আলু, মরিচ, পটল, লাউ, করলা, চিচিঙ্গাসহ নানাবিধ ফসল চাষ করে কৃষিভিত্তিক কাজের সাথে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফলে আগ্রহ বাড়ে নতুন চাষাবাদে। তাই এবার পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে এলাকায় প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করেছেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে এলাকার মানুষ কিছুই জানেন না। ফলে তারাও অপেক্ষায় ছিল এ চাষ পদ্ধতির ফলাফল জানতে।
জোহরা বেগম জানান, চাষাবাদের কাজে যুক্ত হওয়ার পর সংসারের অভাব কিছুটা দূর হতে শুরু হলো। এই সবজি বিক্রি করেই অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন দুই ছেলেকে নিয়ে মোটামুটি ভালোভাবে দিন পার করছি।
তবে এই প্রথম নতুন সম্ভাবনা নিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে করলা চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে আশঙ্কা ছিল ফলাফল কেমন হয়। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল ততই আশার মুখ দেখছিলেন তিনি। স্থানীয় আরডিআরএস বাংলাদেশেল সহযোগিতায় সার, বীজ ও পরিবেশবান্ধ পলিথিন সহযোগিতা পেয়েছেন। এতে আরডিআরএস তাকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা করেছে।
অপরদিকে জোহরা বেগম বাঁশ কিনে স্বামী-ছেলেসহ মাচা তৈরী করেছেন। গবাদিপশু থেকে রক্ষা পেতে জমির চারপাশে নেট দিয়েছেন। এছাড়া নিজেরাই নিড়ানিসহ জমির পরিচর্চা করেন।
জোহরা আরো জানান, নিজেরা শ্রমিকের কাজ করেছি। ফলে বেশি খরচ হয়নি। মাত্র ৭ হাজার টাকায় জমি তৈরী করতে পেরেছি। সবচেয়ে ভালো দিক হলো অন্যান্য করলার চেয়ে মালচিং পদ্ধতিতে করলা এক মাস আগেই উত্তোলন করা যায়। ফলে ওই একমাস বেশি দামে করলা বিক্রি করা যায়। শুরুতে তিনি ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে করলা বিক্রি করেছেন। মাঝারি আকারের এই করলা তেমন তেতো নয়। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। ফলে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন মন করে করলা বিক্রি করতে পারছেন। এপর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। আরো ২ থেকে ৩ মাস এই করলা বিক্রি করতে পারবে।
আরডিআরএস রংপুর বিভাগের টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, সাধারণভাবে করলাচাষে খরচ বেশি হয়। ঝড়বৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরা হলে করলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু মালচিং পদ্ধতিতে উঁচু পলিথিনের ভিতরে করলা গাছ আবরিত থাকায় বেশি নিরাপদে থাকে। আমরা স্মার্ট কৃষিতে সাধারণ কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় এই কার্যক্রমটি পরিচালনা করছি।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. সাইফুন্নাহার সাথী জানান, বর্তমানে উচ্চমূল্যের ফসলের মধ্যে করলা অন্যতম। কৃষকদের মালচিং পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হলে ব্যাপকভাবে এর সম্প্রসারণ ঘটাতে পারি। আগামভাবে করলা চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন