ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরনে ব্যাপক ক্ষতি

Daily Inqilab খুলনা ব্যুরো

২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম

এবারও উপকূলকে রিমালের তণ্ডব থেকে বাঁচাতে বুক পেতে নিজের ধ্বংস মেনে নিয়েছে সুন্দরবন। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির। এপর্যন্ত সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ২৬টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এছাড়া মিলেছে বিভিন্ন প্রাণির আহত ও মৃত্যুদেহ। বনের মধ্যে গাছ উপচে পড়েছে হাজার হাজার। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে এখনো কাজ করছে বন বিভাগ। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষত। মিলছে নতুন নতুন ক্ষত। এছাড়া জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৫২ হাজার ২শ’ মানুষ। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৭৬ হাজার ৯০৪টি এবং নিজ ঘরে গাছ চাপায় নিহত হয়েছেন একজন।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে জেলার ৭৬ হাজার ৯০৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৭শ’ ঘর সম্পূর্ণ ও ৫৬ হাজার ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫২টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫২ হাজার ২শ’ মানুষ। খুলনা নগরীতেও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় চলাকালে সোমবার রাত ১টার দিকে জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় সুরখালি ইউনিয়নে নিজ ঘরে গাছচাপা পড়ে গাওঘরা গ্রামের গহর আলী মোড়লের ছেলে লাল চাঁদ মোড়ল (৩৬) নিহত হয়েছেন।
এছাড়া জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে এবং ভেঙ্গে পড়েছে। ছোট বড় শত শত মাছের ঘের, পুকুর এবং ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট। অনেকের গবাদিপশু, গৃহস্থলির আসবাবপত্র জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে অনেক এলাকায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
খুলনা ছায়াবৃক্ষ নামের পরিবেশবাদী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহাবুব আলম বাদশা জানান, আমরা প্রায় সময় দেখছি, বড় বড় ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছাসে মানুষকে মায়ের মতো রক্ষা করছে সুন্দরবন। কিন্তু সেই বনকে আমরা রক্ষা করতে কিছুই করি না। বরং দিনে দিনে আমরা সুন্দরবনকে ধ্বংস করছি।
বেলা’র খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. মাহফুজুর রহমান মুকুল জানান, বঙ্গপোসাগর থেকে উঠে আসা সকল ধরণের দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন আমাদেরকে রক্ষা করে। বলতে গেলে সুন্দরবন আমাদেরকে রক্ষা করতে বুক পেতে দেয়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, যদিও সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে অভ্যস্ত। সাধারণত জলোচ্ছ্বাস হলে বন্যপ্রাণীরা উঁচু স্থান ও গাছে আশ্রয় নেয়। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বনের ভেতর প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। ফলে বনের উঁচু স্থানও তলিয়ে যাওয়ায় প্রাণীদের আশ্রয় নিতে সমস্যায় হয়। অধিক জলোচ্ছ্বাসের ফলে নিরাপদ আশ্রয়ে না যেতে পেরে হরিণগুলোর মৃত্যু হয়েছে।
সুন্দরবন বিভাগের খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ২৬টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আরও ১৭টি হরিণ। জলোচ্ছাসে পানি ১০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় ওঠায় লবণপানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে গহীনবনের মধ্যে থাকা ৮০টি মিঠা পানির পুকুর। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনের মধ্যে থাকা বন বিভাগের ২৫টি টহল ফাঁড়ি। হরিণের পাশাপাশি আরও বন্যপ্রাণী মারা যেতে পারে। সেসব মৃত প্রাণীর খোঁজে বনরক্ষীরা তৎপর।
উল্লেখ্য, ২৬ মে রাত থেকে ২৭ মে শেষ রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এর প্রভাবে ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মতো উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়েছে ফসল, ভেঙে গেছে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অসংখ্য এলাকা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন