আনারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে মাঠে নেই কোনো সংস্থা
২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন চলতি মাসের ১৩ তারিখ। দীর্ঘ ১৫ দিনেও গতকাল পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন কিংবা নিহতের লাশ উদ্ধার হয়নি। বাংলাদেশ ও কলকাতা পুলিশ যৌথভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে লাশ উদ্ধার ও খুনিদের গ্রেফতারে। লোমহর্ষক এ খুনের তদন্ত করতে গিয়ে নিহত সংসদ সদস্য আনারের বিরুদ্ধেও উঠে এসেছে বিস্তর অভিযোগ। অন্ধকার জগতের গডফাদার হিসেবে তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা, নির্বাচনী মনোনয়ন বানিজ্যসহ অবৈধভাবে কালো টাকা অর্জনের অভিযোগ থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থাই এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে তদন্তে নামেনি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার আগে আনারের বিরুদ্ধে হত্যা, চোরাচালানসহ ২১টি মামলা ছিলো। অথচ এসব বিষয় সামনে চলে আসার পরেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনি এমনকি তার অবৈধ অর্থের উৎস খুঁজতে পদক্ষেপ নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনও। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, আনারের বিরুদ্ধে উথ্থাপিত অভিযোগের কর্মকান্ড ঘিরেই মাফিয়া চক্রের আভ্যন্তরীন দ্বন্ধে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন আনার। তাদের মতে, আনার ‘হত্যা’ মামলার উদ্ঘাটনের মূল চাবিকাঠি হতে পারে আনারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সঠিক তদন্ত।
বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারী ও রাজনৈতিক সূত্রগুলোর তথ্যমতে, আনার ঢাকা, যশোর ও মাগুরার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার একটি বিশাল অঙ্কের অর্থের লেন-দেন নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেছিলেন। যেখানে আনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অর্থ তিনি বিভিন্ন ‹সিন্ডিকেট›-এর প্রধান অন্যান্য সুবিধাভোগীদের দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সেই সুবিধাভোগীদের ইন্ধনেই খুন হয়ে থাকতে পারেন আনার। ্এমনটাই মত প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
বিভন্ন সূত্রমতে জানা যায়, গত মে মাসের প্রথম দিকে গুলশানের একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য, (একজন যশোর এবং অন্যজন মাগুরার), আনার হত্যার কথিত মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনের সাথে দেখা করেন। সেখানে ওই দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে গত ৭ জানুয়ারির সংসদীয় ‹নির্বাচনের› আগে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার নামে হাতিয়ে নেয়া কয়েকশ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। যদিও বাংলাদেশ গোয়েন্দা শাখা এবং পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি দ্বারা চলমান তদন্তের স্বার্থে এই দুই সংসদ সদস্যের নাম প্রকাশ করেনি। সেই দুই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আনার চোরাচালান থেকে অর্জিত অর্থের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করতো। যেগুলো কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালান ও হুন্ডি ‘ব্যবসা’র সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের সিনিয়র রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। যতক্ষন পর্যন্ত আনার বিশ্বস্ততার সাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ততদিন কোন দ্বন্ধ দেখা দেয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আনারের বিরুদ্ধে হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি ছিল গত ২০০৮ সাল পর্যন্ত। তাকে ধরিয়ে দিতে গত ২০০৭ সালে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের আদালতেও তখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এরপরও তিনি পলাতক থাকায় ২০০৮ সালে চুয়াডাঙ্গার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
কিন্তু গত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইন্টারপোল থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মামলাগুলোর কোনোটিতে খালাস, কোনোটিতে অব্যাহতি পান তিনি। এখন ভারতের কলকাতায় তাঁর খুন হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এর পেছনে সীমান্তে চোরাচালান-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয় থাকতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক দলের দুর্বলতার কারণেই নানা ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ওঠার পরও একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পান। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দলের দুর্বলতা আছে বলেই ২১টি মামলা থাকার পরও আনারকে বারবার মনোনয়ন দিতে হয়েছে।
এদিকে ভারত-বাংলাদেশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনির হাতে আনার খুনে গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয় পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে। আর এ খুনের মাষ্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন। যিনি ঝিনাইদহ জেলার কোট চাঁদপুরের মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই। শাহিন নিউ ইয়র্কে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ঝিনাইদহে শাহীনের রয়েছে বিশাল বাগান বাড়ি। ঢাকার গুলশানে তার একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে এবং তিনি ্রনতুন একটি নির্মাণগ্ধ করছেন। শাহীন আমেকায় বালাম চালের আমদানি ব্যবসা করে বলে জানিয়েছেন, তারই ভাই সেলিম। সেলিমের সঙ্গে শাহীনের গত “এপ্রিল মাসে ঈদের রোজা শুরুর আগে” দেখা হয় বলে জানান। এদিকে কলকতায় আনার হত্যা মিশন শেষ করে ঢাকা হয়ে দিল্লী এবং নেপাল এবং দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান শাহিন।
কিছু আমরা পাব-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সেপটিক ট্যাংকে আনারের দেহাংশ
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের খণ্ডিত ‘দেহাংশ’ উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস আবাসনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হয়েছেন, সেই ভবনের সেপটিক ট্যাংকে এই দেহাংশ মিলেছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। তবে পুলিশ বা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কেউ এখনো এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সঞ্জীবা গার্ডেনসের কর্মী পরিচয় দেওয়া সিদ্ধেশ্বর মন্ডল একদলা মাংস উদ্ধারের তথ্য জানান। ওই সময় আবাসনটিতে স্থানীয় পুলিশ, সফররত বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) টিম ও অন্যান্যরা অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন। ভবনের সেপটিক ট্যাংকে খোঁজ করা হচ্ছিল আনারের দেহাংশ।
সেসময় ভবনটি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা সিদ্ধেশ্বর মন্ডল জানান, ‘আমার ভগ্নীপতি ভূষণ শিকারী ট্যাংক পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিল। ‘ট্যাংক থেকে গোশত উদ্ধার হচ্ছে। ফোনে ছবি ওঠাতে চেয়েছিলাম। তুলতে দেয়নি। উদ্ধার হওয়া গোশত ওজনে তিন-চার কেজির মতো হবে। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পলিথিনে দলা দলা মাংস জড়ো করতে দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের। তবে এটা মানুষের মাংস একপ্রকার নিশ্চিত। একটি সূত্র বলছে, সরকারিভাবে এতে সিলমোহর পরলেই বাংলাদেশ থেকে ডাকা হবে এমপি আনারের পরিবারকে। পরিচয় নিশ্চিতে করা হবে ডিএনএ পরীক্ষা।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আমরা বসে নেই, আশা করি কিছু আমরা পাব। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঈদুল আজহার প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনারের লাশের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো খবর আমাদের কাছে আসেনি। আপনারা যেরকম শুনছেন আমরাও সেরকম শুনছি। বাংলাদেশ থেকে তিনজন গোয়েন্দা সদস্য সেখানে গিয়েছেন। ভারতের পুলিশও কাজ করছেন। ডেড বডিটা পাওয়া ছাড়া সমস্ত ইনফরমেশন, যারা যারা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, যারা যারা খুন করেছেন সব কিছুরই খবর আমরা পেয়েছি। তারা যেভাবে খুন করেছেন, তাতে ডেড বডিটা উদ্ধার করাই বাকি আছে। আর সবকিছুই আমাদের কাছে চলে আসছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার
গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান
হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন