ভারতে কমেছে বৃষ্টি ঢল কমেছে সুরমা কুশিয়ারায়
০২ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বৃষ্টির মাত্রা কমেছে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। সেকারনে গতি থেমেছে ভারতীয় ঢলের। তাই এখন উন্নতির পথে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। অথচ মহানগরের অন্ততঃ ১৫টি এলাকা ও জেলার ৭টি উপজেলা হয়ে পড়েছিল বন্যা কবলিত। তবে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল বন্ধ হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিলেটের নদ নদীগুলো বেশকয়েটি পয়েন্টের পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো পানিবন্দি অনেক মানুষ। এদিকে নগরীতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ইতোমধ্যে ৪ হাজার পরিবার। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সিসিক। বিভিন্ন কাউন্সিলরদের দেয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।
সিসিক’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের নদ নদীর পানির বেড়ে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। সে কারণে বন্যার পানি শহরের অনেক জনবসতিতে ঢুকেছে। মেয়র মা. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সংকট মোকাবেলা করতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে সিসিক। এছাড়া গতকাল সকালে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে। গত শুক্রবার জেলায় বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ আর গতকাল সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৩৩ জনে। আর এ বন্যা আক্রান্তদের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪শ’ টন চাল ও নগদ সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা। এদিকে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট গতকাল শনিবার বেলা ১২টায় দেয়া তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ৮৩ সেন্টিমিটার ও সিলেটে ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯২ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ।
তবে সকাল ৬টা এবং ৯টায় সুরমার কানাইঘাট ও কুশিয়ারার দুটি পয়েন্ট পানির ১ থেকে ৩ সেন্টিমিটার কমলেও সুরমার সিলেট পয়েন্টে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। এ অবস্থায় অন্য এক পরিস্থিতির মুখোমুখি সিলেটবাসী। রিমালের প্রভাবে গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি ছিল সিলেটে। তবে শুক্রবার থেকে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। গতকাল শনিবার সেটি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিকাল ৪টায় সিলেটে ছিল ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা। তবে গরম ভ্যাপসা হওয়ায় বেড়েছে কষ্টের মাত্রা। এর মধ্যেই সিলেটের জন্য এসেছে আবহাওয়ার নতুন পূর্বাভাস। আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টির খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের পূর্বাংশ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। একইভাবে আজ রোববার সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কাল সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এদিকে, সিলেটে চলতি মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হয়েছে। পুরো মাসে সিলেট অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০০ মিলি মিটার বেশী বৃষ্টিপাত হয়। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, মে মাসের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৫৬৭. ৬ মিলি মিটার হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে ১ তারিখ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মি.মি মিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের দিন যা ছিলো ৫শ’ মি.মি। এর আগের দিন যা ছিলো সাড়ে ৬শ’ মি.মি। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল না নামলে আগামী ৩-৫ দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে সিসিক সূত্র জানায়, সুরমা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী বিভিন্ন ছড়া ও খাল দিয়ে পানি ঢুকে নগরের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের পাশের একটি পাঁচতলা ভবনে ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অন্যান্য ওয়ার্ডেও আশ্রয় কেন্দ্র চালুর প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এর ৩-৪ দিন আগ থেকে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছিলো। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সমৃদ্ধি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয় জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়। ডুবে যায় ফসলের খেত, ভেসে যায় পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে। তবে গতকাল শনিবার কিছুটা উন্নতি হয়েছে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার সার্বিক পরিস্থিতির দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো, রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আগের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্ট ছাড়া জেলার অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও।
বিশ^নাথে বন্যা : আশ্রয়ন প্রকল্পে হাটু পানি : এদিকে বিশ^নাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বিশ^নাথ উপজেলার লামাকাজি, খাজাঞ্চি, দেওকলস ও দশঘর ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে রবিশস্য ফসল, হাঁস মোরগ ও মাছের খামারে বেশ ক্ষয়কতি হয়েছে। লামাকাজি ইউনিয়নের সুরমার তীরে আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোর গৃহে পানি প্রবেশ করেছে। খাজাঞ্চি ইউনিয়নের বাওনপুর ও ভাটপাড়া, দশঘর, বিশ^নাথ ও দেওকলস, বিশেষ করে লামাকাজি ও খাজাঞ্চি আশ্রয়ন প্রকল্পে হাটু পানি। অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে উচু এলাকায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের কোন ত্রাণ সামগ্রী বা কেউ কোন খোজ খবর নেয়নি। অসহায় মানুষগুলো অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে এ বন্যা দেখা দিয়েছে। সুরমা নদীর পানি কোন কোন স্থানে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খাজাঞ্চি ও বাসিয়া নদীর মুখ ভরাট থাকায় সুরমার পানি কম ঢুকেছে। সিলেট-ছাতক রেল লাইনের উত্তরাংশের গ্রামগ্রলোতে খুব বেশি পানির চাপ রয়েছে।
লামাকাজি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া জানান, আমার ইউনিয়নে পানি বাড়ছে। বিশেষ করে মীরজার গাঁও ১৯টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে এখনও কোন সহায়তা পাওয়া য়ায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, যে সকল আশ্রয়ন প্রকল্পে পানি ঢুকেছে সেই সকল আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেছি। ত্রাণ মন্ত্রনালয়কে অবহিত করায় কিছু শুকনো খাবার তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টাঙ্গাইলে নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী
ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ জাতিকে বিভক্ত করেছে, আমরা বিভক্তি দুর করে এক্যবদ্ধ জাতী চাই- ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব
আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কারণে অস্ট্রেলিয়া-বালি ফ্লাইট বন্ধ
১০০০ গোলের স্বপ্ন এখনও দেখছেন রোনালদো?
কুয়াকাটায় রাস উৎসবের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি, সাজ সাজ রব
কাপ্তাইয়ের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সীতাকুণ্ড হতে গ্রেপ্তার
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় শার্শা সীমান্তে ৩ নারী আটক
এই সরকারকে সব সংস্কারে হাত দেওয়ার দরকার নেই : মির্জা ফখরুল
পাকিস্তানের উত্তরের ইন্দুস নদীতে বাস দুর্ঘটনা,অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু
ফ্যাসিবাদী সাবেক মেয়র আতিক আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে
একসঙ্গে ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ৪ ঘূর্ণিঝড়
"হিনার আবেগঘন পোস্টে দুশ্চিন্তায় ভক্ত-অনুরাগী"
নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার দাবি জাবি ছাত্রশিবিরের
ভয় দেখিয়ে লাভ নেই : সারজিস আলম
যশোরের ঝিকরগাছায় শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা
ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় চীন বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট !
আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট
বেনাপোল : মণিরামপুরে হঠাৎ চুলকানিতে এক স্কুলের অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থী হাসপাতালে
"আসিফের গানে মডেলিং করবেন ভাইরাল তরুণী ফারজানা সিঁথি"
যশোরের মণিরামপুরে জামায়াত কর্মী আনিছুর হত্যার ঘটনায় মামলা