যিলহজ মাসের দশ দিন সর্বোত্তম দিন
০৮ জুন ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০২ এএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত অতিগুরুত্বপূর্ণ। এই দশ দিনের প্রতি রাতে ইবাদত করলে লাইলাতুল কদরের সওয়াব পাওয়া যাবে। এই দশ দিন বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতে হবে। খতিব বলেন, দিল পরিষ্কার করে আল্লাহর বড়ত্বকে স্বীকার করতে হবে। আমাদের আয়ু কম। অল্প আমলে বেশি নেকি অর্জনের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। খতিব বলেন, ইউটিউব ওয়ালারা যিলহজ মাসের দশ দিনের ইবাদতকে জইফ হাদিস বা দুর্বল হাদিস বলে এই দশ দিনের ইবাদত বন্দেগি সম্পর্কে মানুষকে নিরুৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, পাপ যে পরিমাণ হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষমা চাইতে হবে। তাকওয়া অর্জনে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ৯ যিলহজ ইয়াওমাল আরাফার দিন রোজা রাখতে হবে। খতিব বলেন, বর্বর ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। বিশ্ব মুসলিমকে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ শেষ রাত্রে বান্দাদের ডাকেন কেউ আছো কি আমার কাছে কিছু চাইবে। তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে তার নৈকট্য লাভের জন্য দোয়া করতে হবে। আল্লাহর বড়ত্বকে প্রাধান্য দিয়ে বেশি বেশি তাওবাহ করে ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে হবে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুরস্থ সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, যিলহজ মাসের দশ দিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে উত্তম কোনো দিন নেই। আল্লাহ বলেন : শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাত্রির। সূরা ফজর (৮৯) : ১-২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাদি.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাদি.) ও মুজাহিদ (রাদি.)সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরের মতে এখানে দশ রাত্রির দ্বারা যিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। হাফেয ইবনে কাসীর (রাদি. বলেন, এটিই বিশুদ্ধ মত।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫-৫৩৬।
হাদিস শরীফে এই দশককে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাবান দশক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন; দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল যিলহজের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই, তবে ওই ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ শাহদাতের মর্যাদা লাভ করেছে।-মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১১২৮; অন্য বর্ণনায় হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে : যিলহজের দশ দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর নিকট উত্তম নয়।-সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৮ কুরআন-হাদীসে আশারায়ে যিলহজের উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ তাৎপর্যের কথা যেমন বর্ণিত হয়েছে তেমনি দশকের আমল ও ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ ফযিলত ও সওয়াবের কথাও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে। এই দশকের নেক আমল, বিশেষত আল্লাহর জিকির।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন (অর্থ) আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজ্বের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা সেই দিবসগুলোতে অধিক পরিমাণে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ কর। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : তাই মুমিন বান্দার জন্য অধিক পরিমাণে সওয়াব অর্জন, আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহের এরচেয়ে উপযুক্ত সময় আর কী হতে পারে? এজন্য পূর্ববর্তীদের জীবনীতে এই দশকের আমল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এই দশকের দিনগুলোর আগমন ঘটত এত অধিক আমল ও মুজাহাদা করতেন, যা পরিমাপ করাও সম্ভব নয়। আমাদেরও উচিত বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে এই দশকের রাত-দিনগুলোকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তোলা। যিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির আগ পর্যন্ত নিজের নখ, চুল, মোচ, নাভীর নিচের পশম ইত্যাদি না কাটা। এটা মুস্তাহাব আমল। হযরত উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা যদি যিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।-সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদিস : ১৫২৩। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়টি দিবসে (যিলহজ মাসের প্রথম নয় দিন) রোযা রাখতেন।
যিলহজের প্রথম নয় দিনের মধ্যে নবম তারিখের রোযা সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ। সহীহ হাদিসে এই দিবসের রোযার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফার দিনের (নয় তারিখের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গুনাহ মিটিয়ে দিবেন। আরেক হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোযা রাখবে তার লাগাতার দুই বছরের (গুনাহ ক্ষমা করা হবে।-মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস : ৭৫৪৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫১৪১ যারা যিলহজের নয়টি রোযা রাখতে সক্ষম হবে না তারা যেন অন্তত এই দিনের রোযা রাখা থেকে বঞ্চিত না হয়। আল্লাহ তাআলা আশারায়ে যিলহজের মতো অন্যান্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিনগুলোতে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দিন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, কুরআনে কারীমের ভাষ্য মতে চারটি মাস অধিক সম্মানিত। এই চার মাসের অন্যতম হল যিলহজ মাস। এ মাসের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও ফযিলতপূর্ণ সময় হল প্রথম দশক। কেননা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এই দশকের রাত্রির শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির। (সূরা ফাজর, ১-২)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫)। এই দশ দিনের নেক আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যিলহজের দশদিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায়। (তিরমিজী শরীফ, হাদিস নং-৭৫৮)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট যিলহজের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোন দিনের আমল নেই। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৯)।
এই দশকের মধ্যে বেশকয়েকটি আমল রয়েছে। যেমন, যারা কুরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তারা যিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি কাটবে না। যদি এগুলো না কাটার মেয়াদ ৪০ দিন না হয়ে থাকে। হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যিলহজের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানি করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১৯৭৭)। যিলহজের প্রথম নয় দিন রোজা রাখা। মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় রয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়টি দিবসে রোজা রাখতেন। বিশেষ করে যিলহজের নয় তারিখ আরাফার দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। খতিব আরও বলেন, এই দশকের রাত্রগুলোতে খুব বেশি যিকির এবং তাসবীহ পাঠ করা। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তাকবীরে তাশরীক পড়া। কুরবানি করা। ঈদুল আযহার নামাজ পড়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট নির্জন
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর ইন্তেকাল
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আর নেই, ইনকিলাব সম্পাদকের শোক
মতলবে ৯ বাল্কহেড, ১টি লোড ড্রেজারসহ আটক ২৮
জাভেদ পরিবারের ভেল্কি
দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
মরিচ্যা চেকপোষ্টে ৩০ লাখ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করল বিজিবি, আটক -১
জো বাইডেন অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন
জাস্টিন ট্রুডোকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দিলেন ইউনূস
শেরপুরে আদালতের হাজতখানা থেকে আসামির পলায়ন- ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে যুবক নিখোঁজ লাশ উদ্ধার
বিভাগীয় কমিশনার, এডিসি ও ইউএনও পরিবর্তন হবে
হিন্দুরা আমাদের নাগরিক, আমরা তাদের দেখভাল করছি: নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে রংপুরসহ উত্তর জনপদ : বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন
জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ
সিংগাইরের সড়ক দূর্ঘটনায় ১ নারীর মৃত্যু
ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপতৎপরতায় লিপ্ত : তারেক রহমান
টেলিটকের আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ জেন-জি
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টি হারানোদের পাশে নগর সভাপতি'র নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ