২০২৫ সালে বিদ্যুতে লোকসান বাড়বে ১৮ হাজার কোটি টাকা
২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
জ্বালানি খাতে সরকারের আমদানিনির্ভরতা আরও ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ৫০টি কূপ খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে (২০২৪-২৫) জ্বালানি খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এটা স্ববিরোধী। এতে কূপ খননের কাজ ব্যাহত হতে পারে। সরকারের ভুলনীতির কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান ২০২৫ সাল নাগাদ ১৯৬ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার পরও এই লোকসান হবে।
‘জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তাবিত পদক্ষেপ’ শিরোনামে আয়োজিত সংলাপের মূল নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এটির আয়োজন করে সিপিডি। এতে বলা হয়, টেকসই জ্বালানি নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেট। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিনির্ভরতার কারণেই জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ টেকসই জ্বালানি এবং জ্বালানি রূপান্তরের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করে তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের রূপান্তর ও টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিতে গ্যাস এবং বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে যৌক্তিক প্রাধিকার পুনঃনির্ধারণ করে বাজেটের বরাদ্দে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা উচিত। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নিয়েছে এটা উচ্চাভিলাসী।
ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার শর্তে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ দিতে রাজি হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। লোডশেডিং বন্ধ হয়নি। এখনো ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ডিজেল জেনারেটর চালাতে হয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, ডিজেল কেনা, ব্যাংকঋণে সুদের হার দ্বিগুণ করায় অনেক কারখানা বসে গেছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু ভুল হতে পারে। কিন্তু সরকার এখানে সাফল্য দেখিয়েছে। দেশে ১ কোটি ২৯ লাখ বেকার। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ লাগবে। সরকারের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে কোনো কিছুই ঠিক হবে না।
সিপিডির নিবন্ধ বলছে, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময়েও অলস বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪৬ শতাংশ। ২০৩০ সালে বিদ্যুতের যে চাহিদা তৈরি হবে, তা পূরণের মতো সক্ষমতা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। তবু নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সক্ষমতার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) বাড়ছে। এতে পিডিবির লোকসানও বাড়ছে। এরপরও নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, যা পিডিবির আর্থিক বোঝা বাড়াবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে টানা লোডশেডিং দেখা গেছে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করেছে সিপিডি। এতে বলা হয়, জ্বালানিসঙ্কট ও সঞ্চালন লাইনের সমস্যায় লোডশেডিং হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদন থেকে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। এটা ইতিবাচক। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ধীরগতি আছে, এতে জোর দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এখনো নজর কম।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, শতভাগ ব্যর্থ বলার সুযোগ নেই। কিছুটা লোডশেডিং হলেও সারা দেশের মানুষ বিদ্যুৎ–সুবিধা পাচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহ থাকলে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে এত কথা হতো না। মূল সমস্যা হচ্ছে প্রাথমিক জ্বালানির সঙ্কট। আর পিডিবির লোকসানের পেছনে কেন্দ্র ভাড়ার দায় অতটা নয়, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক চাপ বেড়েছে পিডিবির।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, দেশে কোনো জ্বালানি নীতিমালা নেই। সবশেষ নীতিমালাটি ১৯৯৬ সালের, এটা এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে যায় না। তাই একের পর এক পরিকল্পনা করে কাজে আসছে না। পুরো খাত চলছে জোড়াতালি দিয়ে। আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ বিধান আইন বাতিল করে প্রতিযোগিতা ফেরাতে হবে। দরপত্রে প্রতিযোগিতা আনা হলে খরচ কমানো সম্ভব।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লোডশেডিং মুক্ত রাখা। এটি ব্যর্থ হয়েছে। আর জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয়ের নামে বিপিসির দুর্নীতির স্বয়ংক্রিয় সমন্বয় করা হয়েছে। বিপিসি আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি সংস্থা। এর কোনো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রথমবারের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে আলাদা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এটা ইতিবাচক। তবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে কর-শুল্ক মিলে ৮৯ শতাংশ হয়ে যায়, এটা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বাধা। এটা কমাতে পারলে উৎসাহ বাড়বে।
সংলাপে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। সঞ্চালনাও করেন তিনি। ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, লোডশেডিং কমাতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এলএনজি আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া কমাতে হবে। মুনাফা ধরে বিপিসি জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করছে। এতেও পিডিবির ওপর খরচের চাপ বাড়ছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বক্তব্য রাখেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আবারও সাকিবকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
বালির পরিবেশ রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া
নতুন একাদশ নিয়েও চেলসির বড় জয়
নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরিবেশ উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
রাজধানীতে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ গ্রেপ্তার
ব্যর্থতার আবর্তে ম্যান ইউ
যেখানে নাহিদাই প্রথম
যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ডলারে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন জয়
সরকারের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসররা সক্রিয় : রিজভী
পোশাক খাতে অস্থিরতা
সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনা এত করুণ কেন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের জন্য রহমত স্বরূপ
পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের উল্টো সুর কেন
বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য : যুবদল সভাপতি মুন্না
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ শনিবার
চলতি পথে
সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
ডেঙ্গু গল্প