ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবিনার

মমতা নয় ভারত সরকারের কারণে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না -আসিফ নজরুল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনীহার কারণেই তিস্তাচুক্তি হচ্ছে না। ভারতের সংবিধান দেখলে দেখতে পাবেন যে আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পূর্ণভাবে ফেডারেল সরকারের আওতাভুক্ত। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তি থাকলে ভারত সরকার চুক্তি করতে পারবে না এটা যদি কেউ মনে করি তাহলে আমি বলবো আমাদের ফেডারেল গভর্নমেন্ট সম্পর্কে ধারণার অভাব আছে। এমন হলেতো ফেডারেল সরকার কোনো কাজই করতে পারবে না। মূলত চুক্তিটা হচ্ছে না ভারত সরকারের কারণে, কোনো রাজ্যের সরকারের জন্য না।

‘বাংলাদেশ-ভারত পানি বণ্টন অভিজ্ঞতা, আশঙ্কা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. খালেকুজ্জামান, ওয়াটার্সকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। সমাপনী বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রিয়াজ।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৫৪ অভিন্ন নদী রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি নদীর ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে পূর্ণ চুক্তি রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য নদী নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। এমনকি তিস্তা নিয়ে ১৯৮৪ সালের আগ থেকে আলোচনা চলছে কিন্তু আজ পর্যন্ত হয়নি। ২০১১ সালে একটা চুক্তি হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু হয়নি। সেখানে কমন একটা মিস আন্ডারস্টান্ডিং আছে যে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জন্য হয়নি।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক মিটিংগুলো দেখলে দেখা যাবে কোনো মিটিংয়েরই মূল এজেন্ডাতে তিস্তার বিষয় দেখতে পাওয়া যায় না। সাইড টক হিসেবে বা অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন আলোচনায় মাঝে মাঝে আশ্বাস দেয়া হয় কিন্তু এজেন্ডাতে থাকে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভারতের নদী চুক্তি বা নদী ভাগাভাগির ভিত্তিটা কী?

ওয়েবিনারে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, তিস্তার ক্ষেত্রে গত শনিবার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত। সেখানে বলা হয়েছে তিস্তার বাংলাদেশের যে অংশ সে অংশের পানি ব্যবস্থাপনা ও পানি সংরক্ষণে দুই দেশের কারিগরি দল কথাবার্তা বলবে। বাংলাদেশে হিলট্রাক্স ছাড়া সংরক্ষণের জায়গা নেই। বলা হচ্ছে আমরা ড্রেজিং করলে সমাধান হবে। কিন্তু ড্রেজিং করলেতো পানি উৎপাদন হবে না। কাজেই ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তিটা এন্টেরিয়াম হলেও করে নিতে হবে। একই সঙ্গে এটি যেন সময়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে। আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে ১৯৭৭ সালে। ওই চুক্তিটায় আমরা আমাদের পায়ে কুড়াল মেরেছি। তার আগে ১৯৭৪ সালের ১৮ই এপ্রিল নিজেরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছি। আবার ১৯৯৬ সালের গঙ্গাচুক্তিটাও আমরা ৩০ বছরের জন্য করেছি। যদিও সেটিতে আমি নিজেও যুক্ত ছিলাম। তাই নতুন করে গঙ্গা চুক্তিতে যেন সেই সময়ের বাধা না থাকে।

তিনি বলেন, পানির ন্যায্য বণ্টনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির বিষয়ে শুধু কারিগরি বা কূটনৈতিক আলোচনা করে সুফল মিলবে না। এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি। তিনি বলেন, কূটনীতিক দিক গুরুত্বপূর্ণ। তারা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। বিভিন্ন তথ্যের আদান-প্রদান করে। তাদের তথ্য তৈরি করার ক্ষমতা নেই। তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সবচেয়ে বড় কথা এ সিদ্ধান্ত হতে হবে রাজনৈতিকভাবে। ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৯৬ সালের যে চুক্তিগুলো হয়েছে সবগুলোই রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছে। এখন আমাদের পলিটিক্যাল এপ্রোচের ক্ষেত্র তৈরি করে দেবেন কারিগরি বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে তারাতো খোলাখুলি কথা বলতে পারেন না। আইনুন নিশাত বলেন, এর সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক রয়েছে। আমি যদি পানি সংরক্ষণের জন্য বর্ষার অতিরিক্ত পানি জলাধারে ধরে রাখতে চাই তাহলে সেখানে পরিবেশ ও সামাজিক সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেটাকে বিবেচনায় রেখে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে দুর্বল ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে পানি মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কোনো কথাবার্তা শুনিই না। তারা সবসময় ঝুঁকিতে থাকেন এ বুঝি কোনো একটা ভুল হয়ে গেলো। তাদেরকে বকাবুকি করা হবে।

প্রফেসর আলী রিয়াজ বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় পানির ন্যায্যতা নিয়ে সোচ্চার নয় সরকার। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য চীন, ভুটান ও নেপালের মতো তৃতীয় পক্ষকে অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নতুন দল গঠনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না সরকার: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশিদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
আন্দোলনের ডাক দিয়ে যারা সরে যেত, তারাই আওয়ামী পুনর্বাসন চাচ্ছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন যাঁরা
মতিউরের স্ত্রী লায়লার আয়কর নথি জব্দ
আরও

আরও পড়ুন

এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫

এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫

নতুন দল গঠনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না সরকার: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা

নতুন দল গঠনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না সরকার: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা

বায়ুদূষণের কারণে ব্যাংককে আড়াই শতাধিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা

বায়ুদূষণের কারণে ব্যাংককে আড়াই শতাধিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা

তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার বিকল্প নেই: ইউএনও প্রিন্স

তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার বিকল্প নেই: ইউএনও প্রিন্স

পরীক্ষা না দিয়েও ছাত্রলীগ নেত্রী পাস: তদন্ত কমিটি গঠন

পরীক্ষা না দিয়েও ছাত্রলীগ নেত্রী পাস: তদন্ত কমিটি গঠন

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তবর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে হবে’

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তবর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে হবে’

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশিদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশিদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

আন্দোলনের ডাক দিয়ে যারা সরে যেত, তারাই আওয়ামী পুনর্বাসন চাচ্ছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ

আন্দোলনের ডাক দিয়ে যারা সরে যেত, তারাই আওয়ামী পুনর্বাসন চাচ্ছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ

বোলারদের দক্ষতা বাড়াচ্ছে বিপিএলের ব্যাটিং সহায়ক উইকেট: আকিফ

বোলারদের দক্ষতা বাড়াচ্ছে বিপিএলের ব্যাটিং সহায়ক উইকেট: আকিফ

কোরআন তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা প্রসঙ্গে।

কোরআন তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা প্রসঙ্গে।

বিশ্বজুড়ে বিকল চ্যাটজিপিটি

বিশ্বজুড়ে বিকল চ্যাটজিপিটি

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে স্বীকৃতি পেল ‘বাংলা নববর্ষ’

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে স্বীকৃতি পেল ‘বাংলা নববর্ষ’

ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ: ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা

ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ: ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন যাঁরা

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন যাঁরা

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের আয়কর নথি জব্দ

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের আয়কর নথি জব্দ

পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ভয়াবহ হামলা অব্যাহত, নিহত ২

পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ভয়াবহ হামলা অব্যাহত, নিহত ২

দৌলতদিয়া রেলস্টেশনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

দৌলতদিয়া রেলস্টেশনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে যুবলীগের আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাককে কারাগারে প্রেরণ, প্রিজন ভ্যান ডিম-জুতা নিক্ষেপ

মানিকগঞ্জে যুবলীগের আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাককে কারাগারে প্রেরণ, প্রিজন ভ্যান ডিম-জুতা নিক্ষেপ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুল প্রতীক্ষিত নতুন প্রশাসনিক ভবন ও কর্মচারী কোয়ার্টার 'বন্ধন' উদ্ধোধন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুল প্রতীক্ষিত নতুন প্রশাসনিক ভবন ও কর্মচারী কোয়ার্টার 'বন্ধন' উদ্ধোধন

ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বিআইডিআই এ্যাপারেলস পরিদর্শন

ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বিআইডিআই এ্যাপারেলস পরিদর্শন